মাফরূহা বেগমের আটটি কবিতা

Home Page » সাহিত্য » মাফরূহা বেগমের আটটি কবিতা
শুক্রবার, ৩ আগস্ট ২০১৮



 একজনকে

১।রাত্রির স্বপ্ন

চোখ বুজলেই রাত্রিতে স্বপ্ন আসে,
উজ্জল বর্নিল হয়ে প্রকাশে আভাষে।
কুন্জে নিকুন্জে অহর্নিশ ভ্রমনরত
উদভ্রান্ত প্রজাপতির মত।
দুঃখের সুনীল নদী,অলীক গল্পগাথা
প্রিয় পরিজনের হাসিমুখ
অন্তরঙ্গ কথা।
সাময়িক সংশয়,ব্যর্থতা
অথবা বিজয় বারতা।
মায়ের স্নেহসজল চোখ
পিতার আশীর্বাদমাখা রোগাক্লিষ্ট মুখ,
জীবনের তীরে তীরে অভিষেক উত্সব,
অচেতনতায় ভীড় করে সব।
কখনো যায়না ধরা,
ভীড় করে,কথা বলে মৃত স্বজনেরা।
করে কত হিসাব নিকাশ,
কখনো আনন্দে,কখনো ফেলে দীর্ঘস্বাস।
কোথায় কখন কবে প্রিয় নদীতীরে,
খুজে ফিরি হারানো খেলার সাথীরে।
মগ্ন স্বপনে সব ফিরে ফিরে আসে,
বার বার আকারে আাভাষে।
পার হতে অচিন পাথার,
খুজে খুজে ফিরি পার,
পৌঁছে যাই উদ্দিষ্ট ঠিকানায়,
অথবা অসীম তিমিরে নিজেরে হারাই।
চেনা পথ, হাট,মাঠ,বন সব,
মনের গহীন কোনে করে উত্সব।
সব সবকিছু সন্তর্পনে
জেগে ওঠে গোপন স্বপনে।
আসে যায় অগোচরে কূহেলিকা সম, রাতের স্বপনে মম।
হারানো দিনকভূ আসেনাতো ফিরে,
খুজে তারে পাওয়া যায় স্বপ্নের ভীড়ে।
যায়না কখনো ধরা, যায়নাতো বাধা,
যায়নাতো বীনা তারে সেই সুর সাধা।
দিনের আলোয় দেখি সব মুছে গেছে,
আমারে কাদায়ে কিছু স্মৃতি ফেলে পিছে,
রাত্রিতে চোখ বুজলেই
সব স্বপ্ন আসে,
আলো আধারীর মাঝে
ছায়াসম ভাসে।

২। বাবার ছবি

ঘরের দেয়ালে বাবার ছবি
তাকিয়ে থাকে অনিমেষ,
কালো ফ্রেমের চশমায় ঢাকা
দুটি চোখ যেন আমাকেই দেখে।
যেন বলে,কেমন আছ তুমি?
কখনো কোন মানুষের স্মৃতি যেন জীবন্ত হয়ে কথা বলে।
মনে হয় এইতো সেদিনের কথা।
সবেমাত্র গত হয়ে গেছে।
বাবার কন্ঠস্বর এখনো কানে বাজে। যেন বলে,বেলা হয়ে গেল,ঘুম থেকে ওঠো’।
দেয়ালে বাবার ছবি।
মুখোমুখি আমি আর বাবা।
প্রতিদিন বাবাকে দেখি,
প্রতিদিন একই রকম ভাবি।
জনান্তিকে কথা বলি বাবার সাথে। এ যেন পুরানো হয়না।
বাবা যেন অস্তিত্ববান হয়ে
আমার ঘরের দেয়ালে।

৩।অসাধ্য সাধনে

আমার দুটি চোখ যদি পাখি হত,তবে উড়ে যেত সেখানে,
যেখানে তোমার বাস।
হয়তো কোন নাম না জানা গাছে বসে দেখত তোমায়,ডাকত তোমায়।

৪। একজনকে

তোমার চোখে স্বপ্ন, হাসিতে
অনুরাগ,
আমি দেখেছি,সব দেখেছি
দেখেছি তোমার অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্তই।
তবু আমি দেখি নাই,দেখবনা।
তুমি তো আমার বন্ধুপ্রতিম একজন।
তুমি তো আমার গল্প,কথা বলার সহচর।
যেখানে শুধু এক প্রগাঢ় হৃদ্যতা,
যেখানে রাখি নাই কোন স্বপ্ন,
রাখবনা।
আমাদের মধ্যেকার পার্থক্য
যেমন আমি জানি,তুমিও জানো।
যে পার্থক্যকে অতিক্রম করা যায়না।
হয়তো চাইলেই যায়,তবু আমি করবনা।
কেবল রাখব তোমাকে তোমার অবস্থানেই,আমিও থাকব আপন সমতলে।
তুমি ডাকলেই যাবনা,
মন চাইলেই যাবনা।
কেবল যখন সময় হবে যাব।
কেবল ফেরার পথ রেখেই যাব।
কখনও যেন বোলনা ভালবাসার কথা,আমিও বলবনা।

৫। আমি মুসাফির পাখি

মেলেছি ডানা অজানা আকাশে
কোন সূদুরের টানে
চলেছি হাওয়ায় উড়াল দিয়ে
দূর দিগন্ত পানে।
কত না পাহাড় কত নদনদী
পার হয়ে আমি যাই,

হিডান রাখিনা কোনকিছু তার
পিছনে ফিরে না চায়।
পথচলা মোর সাথী হয়ে আছে
তাই আমি শুধু চলি
দীর্ঘ্য ডানার ছন্দে ছন্দে
কিছু কথা যাই বলি।
যেতে হবে মোরে বহুদূরে উড়ে
আরো ঢের পথ বাকী,
চলার নেশায় হৃদয় মেতেছে
আমি মুসাফির পাখি।

৬। তুমিতো নারীর মতই নদী

নদী তুমি বয়ে যাও ছন্দ তুলে,
ঢেউ তুলে আপনার পথে।
তুমি দোল খাও,কূলে কূলে
সাড়া জাগাও
ফুলে ফেঁপে আবেগে উচ্ছাসে,
ভরে ওঠো কানায় কানায়।
তুমি বুকে ধারন করো, বহন করো ভারী পন্যের বোঝা।
তুমিতো নারীর মতই নদী,
বয়ে যাও, বোঝা টানো
সারাটী জনম ধরে,
নারীর মতই একইভাবে।
তুমি ঋতুতে ঋতুতে
রূপ বদলাও।
ক্রোধে উম্মত্ত হতে জানো তুমি।
আবার হতে জানো ভালবাসার,
মমতার উত্সধারা।
নারীও তেমন রূপ বদলায়,
কন্যা, জায়া,জননীর মত
রূপ বদলায় ক্রোধে,হিংসায়,ভালোবাসায়,
মমতায় তেমনভাবেই।
তুমি ভাংতে জানো,আবার
গড়তেও জানো নদী।
নারীর মতই,যেমন নারীও তোমার মতই।
তুমি সমর্পিত হও, তুমি সমর্পিত
হতে জানো।
নানা পথে,ঘাট,বাকে মোড় নিয়ে
অবশেষে সমর্পিত হও সাগরের কাছে,পরিপূর্ণতার আনন্দে।
নারীও তেমন তোমার মতই
সমর্পিত হতে জানে।
নিজেকে,আর যা কিছু নিজের
সবকিছু দিয়ে একদিন
হয়ে ওঠে পরিপূর্ণা মানবী,
ঠিক তোমার মতই নদী।

৭। জীবন

কিছুই চায়নি জীবন,
কিছুই কি ছিলনা জীবনের দাবী?
কোন কাল ঘুমে ঘুমিয়েছিল
নিজের মন, হৃদয়,অহং এতসব
মানুষী সম্ভার আগলে?
মরূর বুকের বালুতে উটপাখির মত নিষ্চিন্তে, নিরূদ্বেগে মুখ লুকিয়ে?
বুকের মধ্যে যন্ত্রনা, থৈ থৈ জলের প্রপাত
কখনো স্বতঃস্ফূর্ত কান্নার উচ্ছাসে ফেটে পড়েনি?
কখনো হয়নি সাধা
সেই হৃদয় জুড়ানো রাগ,
পূনঃ পূনঃ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়া
মীড়,ছন্দ,তাল, লয় -নিজেকে
প্রকাশের উদগ্র ব্যাকুলতায়?
এক দূরুহ উনর্ণাভে আটকে
বেরোবার পথ খুজে খুজে দিশাহারা।
না চাওয়ার, না পাওয়ার আর্তিতে ভরা এক জীবন।
একদিন,পৃথিবী যখন মোড় ঘুরবে আপন চক্রক্রমে,
হেটে যাব সেইদিকে-নিসর্গের পথে।অনেক শিউলি ঝরে ঝরে
যেথা স্তুপাকার হয়ে অবশেষে
বিলীন হয় ঘাসের শয্যায়,
সবকিছুর হিসাব চুকিয়েএকদিন
-সেইদিকে,সেইদিকে।

৮। আমি মুসাফির পাখি

মেলেছি ডানা অজানা আকাশে
কোন সূদুরের টানে,
চলেছি হাওয়ায় উড়াল দিয়ে
দূর দিগন্ত পানে।
কত না পাহাড়,কত নদনদী
পার হয়ে আমি যাই,
হিসাব রাখিনা কোনকিছু তার
পিছনে ফিরে না চায়।
পথচলা মোর সাথী হয়ে আছে
তাই আমি শুধু চলি,
দীর্ঘ ডানার ছ্ন্দে ছন্দে
কিছু কথা যাই বলি।
যেতে হবে মোরে বহুদূরে উড়ে
আরো ঢের পথ বাকী,
চলার নেশায় হৃদয় মেতেছে
আমি মুসাফির পাখি।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:২৪   ১৪০৪ বার পঠিত   #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ