৩০ জুলাই ২০১৮ সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল - তিনি সিটিতে ভোট। নির্বাচন কমিশন বা ইসির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এই নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিন সিটি নির্বাচনের পর সংসদ নির্বাচন করতে হবে ইসিকে। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে। তবে এবছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কারণ সিটি কর্পোরেশনও এক ধরনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। তবে এটি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১১, ৫৯, ৬০ ও ১৫২(১) অনুচ্ছেদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গতিশীল ও শক্তিশালীকরণ কমিটি (২০০৭) এর সুপারিশের প্রেক্ষিতে বর্তমানে বাংলাদেশে তিন ধরনের স্থানীয় সরকারের বিধান রয়েছে।
বিশেষায়িত স্থানীয় সরকার – যার আওতায় আছে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ। তবে এখানে প্রথাগত মৌজাভিত্তিক হেডম্যান-কারবারী ব্যবস্থা সমান্তরালভাবে বিদমান। এছাড়াও রয়েছে তিনিটি পার্বত্য জেলার জন্য তিনজন রাজা বা সার্কেল চীফ। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা – যার আওতায় আছে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ। তৃতীয়ত, নগর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা - যার আওতায় আছে সিটি কর্পোরেশন ও মিউনিসিপালিটি বা পৌরসভা।
তিন সিটি করপোরেশনেই সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ১৫ জুন ২০১৩। তবে বিধান অনুযায়ী প্রথম সভার তারিখ বিবেচনায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৫ অক্টোবর, সিলেট কর্পোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৮ অক্টোবর এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর।
অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় এবারের সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক উৎসব মুখর। ২৮ জুলাই ২০১৮ মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচারণা। মেয়র পদে তিন সিটিতেই ভোটের লড়াই মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মাঝে। যদিও বরিশালে বাসদের একজন তরুণ প্রার্থী তরুণদের আলোচনায় আছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ও তাদের পক্ষে সরাসরি এবং/অথবা সোসাল মিডিয়ায় প্রচারকার্যে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন - ৩০ তারিখ সারাদিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সমৃদ্ধি আর উন্নয়নের মার্কা নৌকা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে নৌকার বিক্ল্প নেই। প্রতিপক্ষকে ভোট দিলে থমকে যাবে উন্নয়ন। মাথা চাড়া দিবে সন্ত্রাস-দূর্নীতি।
অন্যদিকে বিএনপির প্রচারণায় প্রাধান্য পাচ্ছে অভিযোগ ও তাদের বিবেচনায় নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম বা পক্ষপাত। তিন সিটিতেই তাদের প্রার্থীদের ইলেকশন ক্যারিকেচারের আশঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে। তাদের মতে সুষ্ঠ নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগও জানাচ্ছেন তারা।
তিন সিটি নির্বাচনের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে বিএনপির অতি নেতিবাচক ও হতাশবাদী প্রচারণা জনগণ খুব একটা পছন্দ করছেনা। আর অযাচিত বিতর্ক এড়াতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের আরও সতর্কতার প্রয়োজন। অধিকন্ত এবারে তিন সিটির ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিমায়ক হিসেবে কাজ করবে দলীয় প্রতীক, পার্থীদের ধর্মীয় মনোভাব (ধার্মিক ও অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিনা), রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিশীলতা (কতটা জনবান্ধব, ইশতেহারের মান ও রূপরেখা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল), তরুণ ও মহিলা ভোট এবং ধর্মভিত্তিক ও বাম দলগুলোর ভোটব্যাংক।
তিন সিটি নির্বাচনের মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচনের ফলাফল বর্তমান জাতীয় রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পুণ্যভুমি সিলেট সিটি নির্বাচনের ফলাফল আগামী সংসদ নির্বাচনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখবে। দলীয় প্রচারণার ধরণ, ভোটারদের মনোভাব, প্রার্থীর পাবলিক ও রাজনৈতিক ইমেজ ও সামগ্রিক নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচনে নৌকার বিজয় প্রায় নিশ্চিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০১:১৩ ৭২২ বার পঠিত