বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেওয়া স্বর্ণের বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পরিদর্শন প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক নয়। স্থানীয় স্বর্ণকারের থেকে ভাড়া করা মেশিন ব্যবহার করে স্বর্ণের পরিমাপ করা হয়েছে। স্বর্ণের পরিমাপ করার জন্য আনবিক শক্তি কমিশনে পাঠানোর প্রস্তাব করা হলে শুল্ক গোয়োন্দা তা না করেই প্রতিবেদন দিয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পরিদর্শনের আলোকে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের ফলে আকস্মিকভাবে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এসএম রবিউল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণ রেখে অন্য ধাতু হয়ে গেছে এ তথ্য মোটেও সঠিক নয়। যে চাক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই চাক্তি জমাকারী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কর্মকর্তা একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন তিনি যেভাবেই রেখেছিলেন সেভাবেই পাওয়া গেছে। ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। স্বর্ণের মান নির্ণয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত একজন স্বর্ণের দোকানদার কোষ্টিপাথর তথা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিমাপ করেন। ওই আলোকে এনবিআরকে অবহিত করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ওই স্বর্ণকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন, পরিমাপের সময় বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে ৪০ লেখা হয়েছে ৮০। আর শুল্ক গোয়েন্দা সেটাকে ৪৬ বলেছে। পরিমাপের ক্ষেত্রে যেখানে বাতাস থাকে না, আর যেখানে বাতাস থাকে তা একই রকম হয় না। সাধারণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসার পার স্বর্ণের ওজন বেশি হয়। শুল্ক গোয়েন্দার হিসাবে যে ৯৬৩ কেজি পরিমাণ স্বর্ণ জমা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসার পর তা আধা কেজি বেশি হয়েছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তা পদ্ধতি অত্যন্ত সুরক্ষিত ও বহুস্তর বিশিষ্ট। সেখান থেকে কোনো স্বর্ণ এদিক, সেদিক হওয়ার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে যা চলে আসছে। ভল্টের ভেতরে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর বা যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা ঢুকতে চাইলেও চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে ঢুকতে হয়। ফলে ভল্টের ভেতর থেকে কেউ স্বর্ণের চাক্তি নিয়ে যাবে সেটা সম্ভব না। শুধু স্বর্ণ না অন্য কোনো বস্তু নিয়েও ভল্টের ভেতরে নিয়ে যাওয়া বা ভল্টের ভেতর থেকে বের করা সম্ভব না। আর এখানে জমা রাখা স্বর্ণ সাধারণভাবে বের করা হয় না। শুধুমাত্র যখন নিলামের সময় আসে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি করে সবার সামনে বের করা হয়। তখন আবার চুল চেরা বিশ্নেষণ করে নিলাম করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যেসব স্বর্ণ রাখা হয় তার সবই আদালতের নির্দেশনার আলোকে। আদালতের কাগজপত্র দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধুমাত্র জিম্মাদারি নেয়।
তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতি অনুসরণে স্বর্ণের মরিমাপ করা হয়। আর আধুনিক মেশিনের যে কথা বলা হচ্ছে, তা বিশ্বের কোথাও নেই- যে সব মেশিন একই রকমরে ওজনের সঠিকতা দেবে। আবার স্বর্ণের খুব বেশি ভেতরে যাওয়ার সক্ষমতা কোনো মেশিনের নেই। বর্তমান প্রচলিত মেশিনগুলো ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮ এমএম ভেতরে যেতে পারে। ফলে একটি গোলাকার চাকতির ভেতরে কি আছে ভাঙ্গা বা ছিদ্র করা ছাড়া সেটা বোঝার উপায় থাকে না। তবে আদালতের নির্দেশনা না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা চাকতির ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে পারে না। আবার আদালত যদি বলে অমুককে দিয়ে দেন সেটা দেওয়া হয়। আর আদালত বাজেয়াপ্ত করলে সেটা সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০:১০:৪৭ ৭৬৫ বার পঠিত # #স্বর্ণ অন্য ধাতু হওয়ার বিষয় সঠিক নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক #২২ ক্যারেট নাকি ১৮ ক্যারেট