ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা ‘ শাল পিয়াল এর মাঝে’

Home Page » সাহিত্য » ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা ‘ শাল পিয়াল এর মাঝে’
রবিবার, ১ জুলাই ২০১৮



শাল পিয়াল এর মাঝে

মনে পড়ে……………..
স্কুল যেতে ভালো লাগতো না।
সেই অনেক দিন আগে ……………
তোর কলেজ থেকে ফেরার সময় হলেই
ছুট্টে বেরিয়ে যেতাম, খেলার মাঠে।
লুকিয়ে থাকতাম, যাতে খুঁজে না পাস আমায়।
কলেজ থেকে ফিরে বই খাতা টেবিলের উপর রেখেই…..
খুঁজতে যেতিস আমায়।
খপ করে হাতটা ধরে হিড়-হিড় করে
বাড়ি নিয়ে তৈরী করে পাঠাতিস স্কুলে না যেতে চাওয়া এই বাচ্চা টাকে।
নিজের হাতে স্নান করিয়ে, খাইয়ে জামা কাপড় পরিয়ে চুল আঁচড়েয়ে ,
স্কুল ব্যাগটা পিঠে চাপিয়ে দিতিস।
কত যত্ন করে খাইয়ে দিতিস, মধ্যাহ্নের থালা ভরে উঠত নানা সাজে…..
……উৎসাহ কম ছিল না……ঐ ভদ্রলোকটার
তিনিও খাওয়াতে বড্ড ভালোবাসতেন, নিজে খেত পাখির মত।
খাওয়ার পর হালকা ভাতঘুম,তারপর একটু গল্প, আবার ফিরে আসি বাড়ি।
আজ প্রায় ৪০ বৎসর পরে, তুই আজ শরীরের যন্ত্রণায় কাতর, শরীরটা দিন দিন বোঝা হচ্ছে।
ঠিক মতো পথ চলতে পারিস না, পথ - ই তোকে ছেড়ে অন্য পথে বাঁক নিয়েছে।
তবুও তোর সেই কিশলয় মনটা ছুটে বেড়ায়,
সবুজ ঘন শাল - পিয়ালের বনে।
হারিয়ে যেতে চায় নানা রং এ পাহাড়ে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুলের মাঝে।
বহুদূর থেকে ভেসে আসে একটানা ঘুঙুরের শব্দ, আর ঢোলের আওয়াজ ….
ক্রমশ বুঝিয়ে দেয়……আসছে ওরা এই বনের শরু পথে……
ভোরের আলো কালো কুচকুচে গাল পর্শ করে বলে যায়……
ফিস ফিস করে ‘ ওরে কালো মেয়ের দল, এত খুশি কেনো?’
চুলের খোঁপায় লাল টুকটুকে পলাশ ফুল বলে ওঠে
‘আজ তোর মনের সঙ্গী খুঁজে নে ‘ মহুয়ার মিষ্টি …….. গন্ধ মাতাল করেছে আজ ওদের।
শীতের নরম রোদের স্পর্শ রোমাঞ্চ আনে,
আলো আধাঁরের লুকোচুরি ওই পাহাড়ি বনের মাঝে।
তুই একবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড় ……চল বেরিয়ে আসি ওই ঘন জঙ্গলে, কান পেতে শুনি নাম না জানা পাখির গান,
চল না আরো একবার দেখি ওই ছোট্ট হলুদ ফুল টার পাশে বেগুনী ফুল টা কেমন মন ভরিয়ে দেয়’
একবার উঠে পড় …… দেখ চেয়ে দেখ ….. ওই পাহাড়ি ঘন জঙ্গলে আলো - ছায়ার খেলা ।
শোন কান পেতে শোন, ওই নাম না জানা পাখিটা তোকে দেখে খুশিতে গাইছে…….
ঘন জঙ্গলের গাছে……ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে আর বলছে …………
‘শরীর ছেড়ে মনে আশ্রয় নে’।
অনেক দিন পর আরো একবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে; চল ওই পাহাড়ি জঙ্গলের পথে।
শাল পিয়ালের মাঝে।

ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ২১-শে এপ্রিল ১৯৬১, কলকাতার সঙ্গীতমনস্ক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। বাবা স্বর্গীয় চিত্তপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বিখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী ভীশ্বদেব চেট্টাপাধ্যায় এর প্রিয় ছাত্র। কাকা পীযূষপ্রসন্ন পণ্ডিত রবিশঙ্করের শিল্পশিক্ষায় দীপ্ত। ১৭ বছর বয়সে নিজেকে স্বাবলম্বী করা ও দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে সমর্পিত করার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগদান এবং ২১ বছর ধরে এই নিষ্ঠাপালন। ১৯৯৯ সালে বায়ুসেনা থেকে সেবানিবৃত্তির পর আই আই টি খড়্গপুরে যোগদান। ২০০৭ সালে রবীন্দ্রভারতীকে আপন করে নেওয়া এবং নিরাপত্তা সুরক্ষা অধিকারী হিসেবে যোগদান। বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছাত্রকল্যাণ অধিকারী, Purchase Officer এবং Law Officer এর দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের Security and Disaster Management পাঠ্যক্রমের কো-অর্ডিনেটর এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। ২০১৬ -তে আমন্ত্রণমূলক বক্তৃতা প্রদান অক্সফোর্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:১০:৪০   ১৫১৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ