বঙ্গ-নিউজ: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জয়ী হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের চেয়ে প্রাপ্ত ভোটে বড় ব্যবধানে এই জয় পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কে এই জাহাঙ্গীর আলম? যাকে কি না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ডেকে এনে নৌকা প্রতীক তার হাতে তুলে দেন।
গাজীপুর সিটির নব নির্বাচিত ‘নগরপিতা’ জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। মঙ্গলবার (২৬ জুন) টানটান উত্তেজনার মধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। যদিও দুই শতাধিক কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছে বিএনপির যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বলেছেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচনে দুইশর উপরে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
তবে দলটির এসব অভিযোগ নাকচ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ‘ভোট খুব সুন্দর এবং সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গোলযোগ হওয়া ভোট কেন্দ্র ছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের সরব উপস্থিতি ছিল। এমনকি নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে সেই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভোটে আওয়ামী লীগও হেরে যায়। পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই গণভবনে জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেন। এবং তখনই তাকে দল গোছাতে নির্দেশ দেন।
গাজীপুরে গত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ফেল করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান। এ বছরও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। তবে এবার দলীয় প্রতীক নৌকা জাহাঙ্গীরের হাতেই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। মনোনয়ন পাওয়ার পড়েই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম আধুনিক নগর গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা জানান।
৩৮ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম তার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই বিনিয়োগ করেছেন আওয়ামী রাজনীতির পেছনে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের পতাকাতলে আশ্রয় নেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেখান মানুষকে। তারুণ্যদীপ্ত জাহাঙ্গীর আলম বহুকাল ধরেই নিজের অর্থ ব্যয় করে মানুষের সেবা করে চলছেন।
গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালিত একটি ‘শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ আছে। ব্যবসা করে উপার্জিত টাকা এবং বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানে ফাউন্ডেশনের দাতব্য কাজ পরিচালিত হয়। তবে এ ফাউন্ডেশনের তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় ছিল না। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক টাকাও অনুদান নেননি। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অনুদান পেয়েছেন। সেই টাকায় ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলছে।
তিনি একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীও। সিঙ্গাপুরেও তার ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে যে টাকা আয় করেছেন, তা তিনি দানে ব্যয় করেছেন। দানের তথ্য হলফনামায় না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দানের ওপর কর নেই। দানের তথ্য কেনো দেব?’
গাজীপুরের যানজট নিরসনে জাহাঙ্গীর আলম পরিচালিত ফাউন্ডেশনের হয়ে সড়কে দায়িত্ব পালন করেন ৩০০ জন ‘ট্রাফিক সহকারী’। তাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন লাখ টাকা। যানজট নিরসনের এ উদ্যোগে বেতন বাবদ মাসে ব্যয় হয় ৫১ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম নিজেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রে তার মাসিক ব্যয় ৫০ লাখ টাকার মতো। জেলা প্রশাসন অনুমোদিত এ উদ্যোগে গত চার মাসে তার দুই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে গাজীপুর জেলা স্টেডিয়ামে তাদের হাতে বৃত্তির টাকা তুলে দেয় হয়।
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে ফাউন্ডেশনের কমিটির মাধ্যমে অনুদান দেওয়া হয় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে। এমনকি গাজীপুরে কোনো গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যু হলে দাফন বাবদ ২০ হাজার টাকাও দেন তিনি।
এর আগে দলের মনোনয়ন পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘মানুষের ভালোবাসাকে পুঁজি করে তিনি একটি আধুনিক নগর উপহার দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর। বিএনপি থাকাকালে গাজীপুর নগরবাসী সব রকমের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, মহানগরে দৃশ্যত কোনো কাজই হয়নি। উন্নয়নবঞ্চিত নগরবাসী তাকে আসন্ন নির্বাচনে নগরপিতা নির্বাচিত করলে তার প্রথম কাজ হবে, একটি আধুনিক মহানগর উপহার দেওয়া।
নির্বাচন শেষ, জয়ীও তিনি হয়েছেন। এখন কি তবে গাজীপুর মহানগরের মানুষদের একটি ‘আধুনিক মহানগর’ দেখার অপেক্ষা?
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের নগরপিতার আসনে বসতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। বেসরকারিভাবে মেয়র হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ৪,০০,০১০। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১,৯৭,৬১১ ভোট।
এর আগে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৩৬ জন। এর মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে আশা করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী হলেও মূল লড়াই হয় নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৬:৪০ ৫৩৭ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম