বঙ্গ-নিউজ: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন টানটান উত্তেজনার মধ্যে শেষ হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে কয়েকটি স্থানে ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। যার ফলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নয়টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে। তবে নির্বাচন শেষে কে হবেন ‘নগরপিতা’ সেই আলোচনা চলে নগড়জুড়ে।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনা শেষে প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ‘নগরপিতা’ হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। বেসরকারীভাবে মেয়র হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ৪,০০,০১০। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১,৯৭,৬১১ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রায় ২,০২,৩৯৯ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
এর আগে উৎসাহ আর শঙ্কার মধ্যে মঙ্গলবার (২৬ জুন) সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে গাজীপুর সিটির নির্বাচন। এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল।
নির্বাচন শেষে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তাছাড়া আমাদের নির্দেশ ছিল কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে তা বরদাশত করা হবে না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নয়টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দিই।’
অন্যদিকে নির্বাচন চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দুই শতাধিক কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে গাজীপুরের নির্বাচনে দুইশর উপরে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
‘মুন্সিপাড়া, ৩, ১৫, ১৭, ৩১, ৩৫, ৩৭, ৪২ ও ৪৯ ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রের মুখে, পুলিশের হুমকির মুখে এসব কাজ করেছে ক্ষমতাসীনরা।’
ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সোহরাবউদ্দিন এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার তারা পাননি বলে মন্তব্য করেন রিজভী। বলেন, ‘পুলিশ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটে ‘ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারের ভূমিকা’ পালন করেছে।
এর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমনকি গাজীপুরে দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করবে নৌকা এ আশাবাদও ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘বিএনপি ছাড়া নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। রেজাল্ট না হাওয়া পর্যন্ত তারা এই ভাঙা রেকর্ড বাজাতেই থাকবে।’
‘নির্বাচনে ভায়োলেন্সের কোনো অভিযোগ নেই, সহিংসতার প্রমাণও নেই। জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে’ বলে জানান তিনি।
আলোচিত এই নির্বাচনের ভোট শেষে সন্ধ্যায় গাজীপুরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এই নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, ‘ভোট খুব সুন্দর এবং সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো ‘সুষ্ঠু’ হবে, উৎসবমুখর হবে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ মহানগরের এই ভোটকে ‘সেমিফাইনাল’ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। ইতোমধ্যে গত ১৫ মে খুলনা সিটিতে ভোট হয়েছে। আর সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকা আওয়ামী লীগ আজ মঙ্গলবার (২৬ জুন) গাজীপুর সিটির পরীক্ষাতেও পাশ করেছে। এখন বাকি কেবল রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল। এই তিনি সিটিতে ভোট হবে ৩০ জুলাই।
২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে পাঁচটি মহানগরেই জিতেছিল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। আর এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া ভোটে ক্ষমতাসীনরা লড়াইয়ে নেমেছে আঁটঘাঁট বেঁধে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়াও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:৫৯ ৫৪৩ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম