এদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। আর মুসলমান মানেই সে তার নবীকে ভালবাসে। তার ভালবাসার নিদর্শন হল তাঁর আদর্শ গ্রহণ করা। তাঁকে ভালবাসার নিদর্শন হিসাবে এদেশের মুসলমানগণ তাঁর আদর্শ গ্রহণ করুক বা না করুক নিজেদের নামের শুরুতে মোহাম্মদ লেখবেই।যেন তারা এর মাধ্যমে সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি লাভ করতে চায়।
প্রায় সবাই নিজেদের নামের পূর্বে পুরুষ হলে মোহাম্মদ বা মো. এবং মহিলা হলে মোছাম্মাৎ (মোসাম্মাৎ)
বা মোছা. লেখে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এটাকে ধর্মের বিধান ফরজের মত মনে করে। যদিউ এটা ইসলামের কোন বিধান নয়। আর না এটা ইসলামিক সংস্কৃতি। বিষয়টা হয়ত অনেকেই জানেন না। ফলে যদি কেউ নামের আগে মোহাম্মাদ বা মোছাম্মাৎ না লেখে বা না বলে তাহলে দেখা যায় তারা তার উপর হামলে পড়ছেন।
এক দুইবার এমন সমস্যায় আমিও পড়েছিলাম। শুধু নাম “মনজুর আহমদ” বলায় তারা আমাকে তিরস্কার করে বলেছিল, তুই কি মুসলমান? যদিও এটা ইসলামিক নাম।
নামের শুরুতে মোহাম্মাদ না লেখাকে তারা রীতিমত খারাপ ও অন্যায় মনে করেন। কিন্তু তারা ভাবেন না যে কোন সাহাবী (রা:) নামের শুরুতে “মোহাম্মাদ” শব্দ ব্যবহার করেননি। না কোন তাবেয়ী আর না কোন ইমাম বা ইসলামিক পন্ডিতগণ এটা ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাদের নামের শুরুতে মোহাম্মাদ উল্লেখ করে “মোহাম্মাদ আবুবকর রা.”, “মোহাম্মাদ ওমর রা.” এবং “মোহাম্মাদ আবু হানীফা রহ.” ব্যবহার হতে আমরা দেখি না।
এমনিভাবে “মোছা. আয়েশা রা.”, “মোছা: ফাতেমা রা.” ইত্যাদি বলাটাও অসঙ্গতপুর্ণ ও বেমানান মনে হয়।
এমন শব্দের ব্যবহার (নামের আগে মোহাম্মাদ লেখা) বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ ছাড়া আরব দেশগুলোতে আজ পর্যন্তও লক্ষ্য করা যায় না।
বিশেষত এটা লেখার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেননা সেখানে প্রথম নাম, দ্বিতীয় নাম বলে দুটি অপশন থাকে। ফেইসবুক আইডিতে অবশ্যই বিষয়টা আপনারা লক্ষ্য করেছেন। প্রায় সকলেই প্রথম নামে মোহাম্মদ বা MD লেখেন। ফলে এটা বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।
তাছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে যখন কাউকে জিজ্ঞেস করা হল,
তোমার নাম কি?
মোসাম্মাৎ খাদিজা। তাহলে অর্থ কি দাড়ালো! নাম রাখা হয়েছে খাদিজা। নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা। মোসাম্মাৎ অর্থ নাম রাখা হয়েছে। এটা না নবী এর মোহাব্বতের নিদর্শন আর না এটা নবীর নাম। একজন ভদ্র মহিলা কিভাবে বলবেন “আমার নাম রাখা হয়েছে অমুক “! এটা হাস্যকরও বটে।
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ এটা কেন লেখেন বা ব্যবহার করে থাকেন?
এর উত্তর জানার জন্য আপনাকে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস জানতে হবে। যখন এই দেশে ইংরেজ শাসন চলছিল তখন ইংরেজরা তাদের নামের শুরুতে মিস্টার লেখত এবং ভারতীয়দের নামের শুরুতে মিস্টারের পরিবর্তে শ্রী লেখত। দেওবন্দের (ভারতের) আলেমগণ যখন দেখলেন যে শ্রী শব্দটির যদিও ভাল অর্থ আছে কিন্তু এতে হিন্দুদের সাথে মিশ্রণ হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় তাকে চিনাই সম্ভব হতো না। যেমন মনে করুন শ্রী বিপ্লব, শ্রী সুমন ইত্যাদি তাহলে সে মুসলিম না হিন্দু তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ত। তাছাড়া হিন্দু ধর্মের অবতার শ্রী কৃষ্ণের সাথে মিলে যাওয়ায় ভীষণ একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়। (প্রমাণ হিসাবে আপনি পুরাতন দলীলপত্র ইত্যাদি দেখতে পারেন। তাহলে দেখবেন যে মুসলিমদের নামের শুরুতেও শ্রী লেখা রয়েছে।)
যার কারণে ভারতীয় আলেমগণ আন্দোলন করতে লাগলেন যাতে মুসলিমদের নামের শুরুতে শ্রী এর পরিবর্তে মোহাম্মাদ লেখা হয় (যেন তা লোকটি মুসলিম সেই প্রমাণ বহন করে।) অবশেষে এই আইন পাস হয় যে, মুসলিম হলে মোহাম্মাদ আর হিন্দু হলে শ্রী লেখা হবে।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত নামের শুরুতে মোহাম্মদ লেখার প্রচলন হয়ে আসছে।
আজ ইংরেজ না থাকলেও সেই প্রচলন আমাদের সবার নামের শুরুতে শোভা পাচ্ছে।
সুতারাং জেনে রাখা ভাল নামের শুরুতে মোহাম্মদ বা মোছাম্মাৎ (মোসাম্মাৎ) বলাটা কোন ইসলামিক বিষয় নয়।
সুন্দর ইসলামিক নাম হলে শুরুতে মোহাম্মদ বা মোছাম্মদ ব্যাবহার করার প্রয়োজন নেই বরং না করাই ভাল।।
আরেকটি লক্ষ্যনীয় বিষয়, যারা নামের পুর্বে মোহাম্মদ লিখতে চান তারা শর্ট করে না লিখে পুর্ণ নাম তথা মোহাম্মাদ লিখবেন মোহা: বা মো: লেখাটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
কেননা আপনি মোহাম্মাদ লেখছেন কেন? আপনার নবীর নাম হিসাবে তাইতো! তাহলে কিভাবে আপনি নিজের নামটা পুর্ণ লেখে নবী সা. এর নামটা অপুর্ণ তথা শর্ট করে লিখছেন!
এটা সঙ্গত নয়, এতে আদবের খেলাফ হয়।
আমাদের উচিৎ সন্তানদের এমন নাম রাখা যাতে শুরুতে মোহাম্মাদ না লিখলেও সে একজন মুসলিম তা বুঝা আসে। যেসকল নাম মুসলমান হওয়া বুঝায় না বা ইসলামিক নয় সেসকল নামের শুরুতে মোহাম্মাদ ব্যবহার করা উচিত। আর যাদের নামই মুসলমান হওয়ার প্রমাণ বহন করে তাদের নামের শুরুতে মোহাম্মাদ লেখার কোন প্রয়োজন দেখি না।
লেখক:-মনজুর আহমদ
কইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৪:৫১ ৬১৬৪ বার পঠিত