রূপগঞ্জের সুবর্ণাকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা , গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে
Home Page » ফিচার » রূপগঞ্জের সুবর্ণাকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা , গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে
বঙ্গ-নিউজ প্রতিনিধিঃ সারা রাত পাষবিক নির্যাতন করা হয়েছিল শিশুটির ওপর। ঘটনা কাউকে না বলতে হুমকি দেয়া হয়েছিল। ধর্ষণের পর রক্তক্ষরণ শুরু হলে সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ওই অঙ্গে বালু চেপে দেয়া হয়েছিল। আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে ধর্ষকরা মেয়েটির মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। মৃত ভেবে ১২ বছরের শিশু সুবর্ণাকে ফেলে দেয়া হয়েছিল ইছাপুরা ব্রিজের পাশে। পরদিন মুমূর্ষু অবস্থায় সুবর্ণাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ধর্ষকরাও ভালো মানুষ সেজে সুবর্ণার বাবার উপকার করতে ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণার পাকস্থলী ওয়াশ করে বলেছিল, ‘মেয়েটিকে আইসিইউতে নিলে সে বাঁচবে।’ কিন্তু যারা চাচ্ছিল সুবর্ণা আর পৃথিবীতে না থাকুক তারা সুবর্ণাকে বাঁচতে দেয়নি। তারা চিকিৎসকের কথা মতো সুবর্ণাকে আইসিইউতে ভর্তি করার অনুমতি দেয়নি। চিকিৎসক বিনা টাকায় সুবর্ণাকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। চিকিৎসক বার বার বলছিল, ‘আগে মেয়েটির চিকিৎসা হোক, আপনারা পরে এলাকাবাসী থেকে টাকা তুলে বিল দিয়েন।’ কিন্তু তারা শুনেনি চিকিৎসকের সেই কথা। তারা অর্থের দোহাই দিয়ে মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসতে চাচ্ছিল। মেয়েটির বাবাকে ভুল বুঝিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসতে পরামর্শ দিয়েছিল। পরে চিকিৎসক যখন জানান, এভাবে তারা মুমূর্ষু রোগীকে ছাড়তে পারবে না। পরে সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার। চিকিৎসক মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিন্তু মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে দেয়নি ওরা। পথিমধ্যে হত্যা করা হয় তাকে। অপরাধীদের ধারণা ছিল সুবর্ণাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পারলেই সব সত্য মুছে যাবে। তাই তারা হত্যা করে সুবর্ণাকে। মৃত্যুর আগে সুবর্ণা তার বাবার কাছে সব সত্য প্রকাশ করে গেছে। সুবর্ণা জানিয়ে গেছে, জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে সারা রাত নির্যাতন করা হয়। তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল অপরাধীদের কথা মতো কাজ না করলে তার বাবা-ভাইকে হত্যা করা হবে। এরপর জোর করে সুবর্ণার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় সাব্বিরসহ তার সহযোগীরা। এরপর তার মুখে বিষ ঢেলে রাস্তায় ফেলে যাওয়া হয়। জানা গেছে, আসিয়ান হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেলে না নিয়ে প্রথমে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় (পঙ্ঘিরাজ) উঠানো হয়। সেখানে মেয়েটি তার বাবার কাছে সত্য প্রকাশ করলে সুবর্ণাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় হত্যাকারীরা সুবর্ণার বাবা রাকিব মিয়াকে হুমকি দেয় তাদের কথা মতো না চললে তাকেও হত্যা করা হবে। খুন করা হবে তার ছেলেদের। এ কথা প্রকাশ না করার হুমকি দেয় সাব্বির, রনি, ইয়ামিন ও অজ্ঞাতরা। দিশা হারিয়ে ফেলে রাকিব মিয়া। আত্মহত্যা বলে এ ঘটনা চালিয়ে দিতে হত্যাকারীরা সুবর্ণার বাবাকে দিয়ে প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করায়। আর এ মামলা করাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ভোলানাথপুরের পুলিশের সোর্সখ্যাত রাসেল। রাসেলই থানায় মামলার সবকিছু করে বলে জানান নিহত সুবর্ণার চাচা রাশেদুল ইসলাম। সহজ-সরল সুবর্ণার বাবা হুমকির ভয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন এবং ঘটনা চাপা দিয়ে রাখেন। পরে সত্য ঘটনা আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে থাকে। সুবর্ণার বাবা সব সত্য কথা তার নিকট লোকদের জানান। সুবর্ণার বাবার বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে তিনি হত্যাকারী ও হত্যার ঘটনার বর্ণনা করেছেন। পরে এলাকাবাসী হাসপাতাল থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখে যায় সাব্বির, রনি ও ইয়ামিনসহ অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জন সেদিন আসিয়ান হাসপাতালে গিয়েছিল রাকিব মিয়াকে সহায়তা করতে।
সুবর্ণা রূপগঞ্জের ভোলানাথপুর এলাকার রাকিব মিয়ার মেয়ে ও ইউসুফগঞ্জ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। গত ৩ জুন মুমূর্র্ষূ অবস্থায় সুবর্ণাকে ইছাপুরা খালের পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। সুবর্ণা নিহতের ঘটনায় তার বাবা প্রথমে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করলেও পরে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে সাব্বিরকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। জানা গেছে, গত ২ জুন রাত ১০টায় হঠাৎ বিদ্যু চলে গেলে সুবর্ণা পার্শ্ববর্তী দোকানে যায় মোম কিনতে। ওই সময় তার বাবা ছিল দোকানে আর মা ছিল তার নানা বাড়ি। সুবর্ণা যখন মোম কিনতে যাচ্ছিল তখনই তাকে ধাওয়া করে পাশের বাড়ির সাব্বির। সাব্বির ভোলানাথপুরের একাধিক মাদক মামলার আসামি রাকা মিয়ার ছেলে। সাব্বির যখন সুবর্ণাকে দৌঁড়ানী দিয়েছিল তখন ভয়ে সুবর্ণা সাব্বিরের চাচির বাসার কোনায় আশ্রয় নেয়। সাব্বিরকে তখন দেখা যাচ্ছিল না। ওই সময় সাব্বিরের চাচি সুবর্ণাকে বলে, ‘এখানে কি করস। বাড়ি যা।’ এ কথা বলার পর সুবর্ণা ওই স্থান ত্যাগ করে। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সুবর্ণা। রাতে সুবর্ণার বাবা ঘরে ফিরে তার মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। সুবর্ণার মা তার নানা বাড়ি থেকে ফিরে বাড়ির আশপাশের লোকজন নিয়ে সুবর্ণার খোঁজে বের হলেও তার কোন সন্ধান মিলেনি। মেয়ের খোঁজে অস্থির হয়ে পরে সুবর্ণার বাবা-মা। পরদিন সুবর্ণাকে ইছাপুরা ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। ওই সময় একটি মেয়ে গুঙরাচ্ছিল দেখে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে। কিন্তু কেউ তাকে চিনতে পারছিল না। মেয়েটি তার বাড়ি ভোলানাথপুরে জানালে স্থানীয়রা ওইখানকার এক দোকানীকে খবর দেন যার বাড়ি ভোলানাথপুরে। পরে ওই দোকানী এসে মেয়েটিকে চিনতে পারেন। তিনি সুবর্ণার বাড়িতে খবর জানান। সুবর্ণার বাবা এ কথা শুনে ছুটে যান ইছাপুরা ব্রিজের কাছে। মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে ভেঙে পরেন রাকিব মিয়া। তিনিসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে সুবর্ণাকে আসিয়ান হাসপাতালে নিয়ে যান। যখনই হাসপাতালে পৌঁছে তখন তাদের সাথে সাথে হাসপাতালে যায় সাব্বির, রনি, ইয়ামিন ও অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জন (পরবর্তীতে হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ দেখে ও রাকিব মিয়ার কথা অনুযায়ী তাদের শনাক্ত করা হয়)। সাব্বির, রনি ও ইয়ামিন একই এলাকার হওয়ায় রাকিব মিয়াকে তারা বলে মেয়েটির চিকিৎসার জন্য তারা সহায়তা করবেন। তারা তখন মেয়েটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। মেয়েটির বাবা অনেকটা অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় ছিল। চিকিৎসক মেয়েটির পাকস্থলী ওয়াশ করে যখন জানান, ‘মেয়েটি বাঁচবে। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে হবে।’ তখনই সাব্বির, রনি, ইয়ামিন ও অজ্ঞাতরা সুবর্ণাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে বলে। কিন্তু চিকিৎসক তাকে ছাড়তে চাননি। পরে সুবর্ণার বাবার সাথে কথা বলে সাব্বিরসহ অন্যরা রাকিব মিয়াকে পরামর্শ দেন এ হাসপাতাল থেকে সুবর্ণাকে নিয়ে যেতে। পরে চিকিৎসককে অনুরোধ করলে তিনি রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করেন। পরে সাব্বির, রনি, ইয়ামিনসহ অন্যরা একটি অটোরিকশা নিয়ে মেয়েটিকে পেছনে বসিয়ে মেয়েটির বাবাকে সামনে বসায়। ওই সময় সুবর্ণা তার বাবার কাছে ঘটনা খুলে বলে। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সুবর্ণাকে গলা টিপে হত্যা করে সাব্বির, রনি, ইয়ামিনসহ অজ্ঞাতরা। সুবর্ণার বাবাকে তারা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। হত্যাকাণ্ড অপমৃত্যুর মামলা বলে চালিয়ে দিতে অপতৎপরতা চালানো হয়। রাকিব মিয়াকে দিয়ে প্রথমে মিথ্যা অপমৃত্যু মামলাও দায়ের করানো হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ওই রাতে সুবর্ণা যখন বাড়ি ফিরছিল তখন জোর করে তাকে তুলে নিয়ে যায় সাব্বির। ওই সময় সাব্বিরের হোটেল কর্মচারী রাজুও সাথে ছিল বলে জানা গেছে। পরে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে সাব্বির, ইয়ামিন, রনিসহ কয়েকজন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মুখে বিষ ঢেলে সুবর্ণাকে ইছাপুরা ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়।
সুবর্ণাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা-মা। সুবর্ণা লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় তাকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। মেয়েটি লেখাপড়ার পাশাপাশি শীতকালে পিঠা বিক্রিতে বাবা-মাকে সহায়তা করতো। সুবর্ণা হত্যার ঘটনায় পুরো এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার এসআই শফি উদ্দিন জানান, আসামি গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমরা মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আসামি ধরতে চেষ্টা করছি। আসামিরা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করায় তাদের ধরতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ মামলায় আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। ১৪ জুন বৃহস্পতিবার ভোরে রাসেল নামে একজন কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৫:২২ ৯৫১ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)ফিচার’র আরও খবর
অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]