বঙ্গ-নিউজঃ স্কচটেপে মোড়ানো ছোট ছোট প্যাকেট। কোনো প্যাকেটে ৫০টি, আবার কোনো প্যাকেটে ৩০টি ইয়াবা। প্যাকেটগুলো আকারে ক্যাপসুলের চেয়ে কিছুটা বড়।
এসব ‘ক্যাপসুল’ পানি দিয়ে গিলে খাওয়ানো হতো আফসার বাবুল নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে। শিশুটির চাচা সেলিম মোল্লাকেও তা গেলানো হতো একই কায়দায়। এরপর টেকনাফ থেকে তাদের ঢাকায় এনে পাকস্থলী থেকে বের করা হতো কথিত ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা ইয়াবা।
বাবুল ও সেলিম মোল্লা দু’জনই রোহিঙ্গা। তারা শরণার্থী হিসেবে টেকনাফ ক্যাম্পে রয়েছে। একটি চক্র এই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে এভাবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর বিভাগ রোববার ঢাকার দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে ওই দুই রোহিঙ্গাসহ চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচারের গডফাদার মামুন শেখও রয়েছে।
এ ছাড়া গ্রেফতার অপর তিনজন হলো শরীফুল ইসলাম, ফাহিম সরদার ও রাজীব হোসেন। তাদের মধ্যে শরীফুল মামুনের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং অপর দু’জন খুচরা পর্যায়ের ইয়াবা বিক্রেতা। গ্রেফতারের সময় তিন হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ায় মামুন শেখের চক্রটি অভিনব পন্থায় টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা শিশুসহ রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে এভাবে ব্যবহার করছিল।
গ্রেফতার ছয়জনকে নিয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবি কর্মকর্তারা।
সেখানে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করে প্রথমে মামুন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর শিশুসহ দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে পেটে ইয়াবা পাওয়া যায়। মামুনের সহযোগী টেকনাফে অবস্থানরত পলাতক রেজোয়ান। সেই মূলত পেটের ভেতর ইয়াবা ভরে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় মামুনের কাছে পাঠায়।
অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানান, মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পর একটি চক্র পাকস্থলীতে ভরে ইয়াবা আনছিল। এ কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা ধারণা করছেন, গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গা শিশু বাবুল ও তার চাচা সেলিম ছাড়াও এই কাজে আরও অনেক রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে।
রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লা জানিয়েছেন, রেজোয়ানের সঙ্গে তাদের কক্সবাজারে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে সে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে টাকার প্রলোভন দেয় তাকে। তার শেখানো কৌশলে পেটে ভরে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসতেন তিনি। এ কাজে তার শিশু ভাতিজাকেও ব্যবহার শুরু করেন।
সেলিম জানান, তিনি ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে তৈরি প্রতিটি ক্যাপসুলের ৭০টি পানি দিয়ে গিলে খেতেন। তার ভাতিজা এ ধরনের ৩০টি ক্যাপসুল খেত। এভাবে তারা প্রতিমাসে তিন থেকে চারবার টেকনাফ থেকে বাসে বা ট্রেনে ঢাকায় আসতেন। পথে কোথাও তারা পানি বা অন্য কিছু খেতেন না এবং প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দিতেন না।
ডিবির উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান জানান, পাকস্থলীতে ইয়াবা বহনকারী ওই দুই রোহিঙ্গা ঢাকায় আসার পর তাদের গরম দুধ বা মিল্ক্ক অব ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ওষুধ সেবন করানো হতো। এরপর পাকস্থলীতে থাকা ইয়াবা বের করত মামুন শেখ। রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লা প্রতি চালানে পলাতক রেজোয়ানের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও শিশু বাবুল ১০ হাজার টাকা পেত।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, পলাতক রেজোয়ান কক্সবাজারে দীর্ঘদিন ধরে উখিয়ার লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্পে অবস্থানরত অসহায় ও দরিদ্র রোহিঙ্গাদের ইয়াবা বহনে ব্যবহার করত। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪১:২৬ ৭২৪ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News #yaba