বঙ্গ-নিউজ: ইয়াবা ব্যবসার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন আসছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ।
দেশে বর্তমানে কার্যকর থাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মরফিন, এবং কোকেনসহ আরও কিছু মাদকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তবে এটা নির্ভর করে মাদকের পরিমাণ ও ব্যবহারের ওপর।
আর এই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। ফেনসাইক্লিআইন, মেথাকোয়ালন এলএসডি, বারবিরেটস অ্যামফিটামিন (ইয়াবা তৈরির উপাদান) অথবা এগুলোর কোনোটি দিয়ে তৈরি মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫ গ্রাম হলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫ গ্রামের ঊর্ধ্বে হলে কমপক্ষে ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে।
জামাল উদ্দীন বলেন, প্রচলিত মাদক প্রতিরোধ আইনের সমস্যা হলো কোনো ব্যক্তির কাছে মাদকদ্রব্য সরাসরি পাওয়া না গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তাই আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে৷ বাকিটা সংসদের হাতে। আর নতুন আইনে ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।
প্রচলিত আইনে মাদক ব্যবসায়ী, পাচারকারী, সরবরাহকারী এবং ব্যবহারকারী আলাদা করা নেই৷ যার কাছে মাদক পাওয়া যায় শুধু তাকেই আইনের আওতায় আনা যায়। ফলে সরবরাহকারী ও ব্যবহারকারীরাই প্রধানত আইনের আওতায় আসে৷ ব্যবসায়ী ও পাচারকারীরা আইনের বাইরে থেকে যায়।
প্রস্তাবিত নতুন আইনে এই বিষয়গুলোকে আলাদা করে, শাস্তির বিধানও আলাদা রাখা হয়েছে৷ আর পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেও বিবেচনায় নেয়ার আইন হচ্ছে বলে জানান অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। ফলে ব্যবসায়ী, পাচারকারী ও নিয়ন্ত্রকদের আইনের আওতায় আনা যাবে৷
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইন সংশোধন করাই যথেষ্ট নয়৷ অধিদফতরের জন্য আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। কারণ আমরা অভিযান চালাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়৷ এমন অনেক হয়েছে যে, তারাই মাদক ব্যবসায়ীদের অভিযানের খবর দিয়ে দিয়েছে।
১৪ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযদ্ধে’ ৭০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের সবাইকে মাদক ব্যবসায়ী বলা হলেও অধিকাংশই মাদক বহনকারী ও ব্যবহারকারী। তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১৪১ মাদক ব্যবসায়ীর কেউ বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন কিনা সে তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার নেত্রী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের সংবিধান এবং আইন মেনেই মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত যদি ঠিকমত ও নিয়মিত কাজগুলো হত। আমরা শুনছি যাদেরকে মারা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে, সাতটি মামলা আছে। দীর্ঘদিন ধরে এদেরকে পুলিশ চেনে। তারপরও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন? এখন যে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজটি করা হচ্ছে তাতে তো আইনি প্রক্রিয়ার বাধ্যবাধকতা মানা হচ্ছে না। আমি মনে করি এখন যেভাবে করা হচ্ছে এটা হটকারিতা। তাই রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানের মধ্যে থেকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সমাজ ও পরিবারকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এখন যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে মানবাধিকারের দিক থেকে এগুলো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আরেকজন মানবাধিকার কর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাদক ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই মাদকবিরোধী অভিযান এবং বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস ড্রাইভ দেয়া, সেটা ঠিকই আছে। প্রধানমন্ত্রী যে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন তা যথার্থ। কিন্তু যারা অভিযান পরিচালনা করছেন তাদের আইনের মধ্যে থেকেই এটা করতে হবে। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে হত্যা আইন সম্মত নয়, মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ এটা সমাজে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে৷ তবে এরমধ্যে কিছু যে সত্যিই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তা বোঝা যায়। কারণ আমাদের পুলিশ সদস্যরাও মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আইন যদি সঠিক সময় ব্যবহার করা হত তাহলে মাদকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। আর এর ব্যবহার না করার কারণ হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও প্রশাসনের কেউ কেউ এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। আমরা এমপি, পুলিশসহ আরও অনেকের গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনা জানি। মাদক ব্যবসায় জড়িত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, মাদক আসে সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে৷ আমরা জানি মিয়ানমার এর সঙ্গে জড়িত৷ তাই আমাদের আন্তর্জতিকভাবেও কাজ করার প্রয়োজন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:১৩ ৯৮২ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম