ফজলুল হক. বঙ্গ নিউজ: বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ করেননি জনপ্রতিনিধিরা। এবার তাই বাধ্য হয়েই নিজেরাই রাস্তা নির্মাণ করেছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া গ্রামবাসী। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, কিন্তু নির্বাচন শেষে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়নের ঢালজোড়া পূর্বপাড়া, ঢালজোড়া সূত্রধরপাড়া, ঢালজোড়া মাঝিপাড়া, ঢালজোড়া শাহপাড়া এই চারটি পাড়ার লোকজনের একটি মাত্র রাস্তা এটি। এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থী ও রোগীসহ ওই চার পাড়ার লোকজন চলাচল করে। এই রাস্তা মুলত সরকারি হালট ছিল। হালটটি নিচু হওয়ায় ও শুকনো মৌসুমে প্রায় পুরো হালটটি পানিতে তলিয়ে থাকতো। কষ্ট করে এভাবেই চলাচল করতে হয়েছে বছরের পর বছর। স্থানীয় ইউপি সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ওই চার পাড়ার লোকজনের দাবি ছিল একটাই। সেটি হলো তাদের চলাফেরার জন্য ব্যবহৃত একমাত্র অনুপযোগী হালটে মাটি ফেলে উচু সড়ক নির্মাণ করা। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন কিন্তু নির্বাচন শেষে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ওই রাস্তার দাবি নিয়ে গেলেও বিভিন্ন সময় অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। ত্যক্ত-বিরক্ত গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেই ক্ষোভ থেকে নিজেরাই রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিলেন প্রত্যেকেই। এরপর কোনো শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে নিজেরাই নেমে হালটের পানি সেচে হালটটি শুকনো করেন। এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন ছোট-বড় থেকে শুরু করে ধনী-গরিব, উচ্চপদস্থ পেশাজীবী, স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দেওয়ার বাজার-আড়াইগঞ্জ পাকা সড়কের ঢালজোড়া এলাকার ছোট্র একটি ব্রীজের পাশ থেকে এই সড়কটি শুরু। প্রায় ৫০০ মিটার এই একটি রাস্তা দিয়ে ঢালজোড়া পূর্বপাড়া, ঢালজোড়া সূত্রদরপাড়া, ঢালজোড়া মাঝিপাড়া, ঢালজোড়া শাহপাড়া এই চারটি পাড়ার লোকজনের চলাচল করেন। বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচলের অন্য কোনো উপায় ছিল না। যার কারণে পারাপারের জন্য প্রতি পরিবারই প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মুল্যে একটি করে নৌকা কিনে তা দিয়ে পারাপার হতেন। শুকনো মৌসুমেও ওই রাস্তার কিছু কিছু স্থানে হাটু পানি ভেঙ্গে চলাচল করতেন স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রোগী, পেশাজীবিসহ প্রায় দেড়-দুই হাজার মানুষ। ওই রাস্তায় কথা হয় উদ্যোগক্তা জাহাঙ্গীর আলম, সোহরাব হোসেন বলেন, নানা দুর্ভোগের মধ্যে আমাদের চলাচল করতে হয়েছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ করেননি জনপ্রতিনিধিরা। গত ইউপি নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান ওই পাড়ার একটি মসজিদে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভোট চান এবং ওই রাস্তায় মাটি ফেলে উচু করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি তা আমলে নেননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের কাছে গেলেও কেউ রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। এ বছর বাধ্য হয়েই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ওই রাস্তার নির্মাণ কাজ ধরি। এর জন্য ওই চারপাড়ার প্রতি ঘর থেকে সামর্থ্য মতো চাঁদা দেওয়া হয়। তবু পর্যাপ্ত পরিমানে টাকা তোলতে না পেরে গত ইউপি নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খোরশেদ আলমের কাছে যান এলাকাবাসী। তিনি নির্বাচিত হতে না পারলেও জনগনের কথা ভেবে রাস্তা নির্মাণে আর্থিক সহযোগীতা করেন। এভাবে গত মাসখানেক আগে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তার কাজের উদ্ভোধনের জন্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি আসেননি।
এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য খন্দকার হান্নান তার পরিষদে চায়ের দাওয়াত দেন।
স্থানীয় ঢালজোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান জানান, দেখেছি, গ্রামবাসি সকলের সহযোগীতায় মাটি ফেলে রাস্তাটি করেছে। সরকারিভাবে কেন কাজ করা হয়নি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারিভাবে যে পরিমাণ বরাদ্ধ সেটা দিয়ে সারা ইউনিয়নে উন্নয়ন কাজ করার চেষ্টা করতেছি। আগামী বছর ওই রাস্তাটি করার পরিকল্পনা আছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আহম্মেদ রেজা আল মামুন জানান, এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি তার জানা নেই। সরকারি কাজ হলে রাস্তার বিষয়টি জানা থাকতো। তবে এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করলে অবশ্যই একটি ভালো কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০২:১৪ ৭০৯ বার পঠিত