বঙ্গ-নিউজঃ টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আর তা না করলে অভিযোগ না করে চুপ থাকারও পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া শান্তি প্রস্তাবের শর্তগুলো অবশ্যই ফিলিস্তিনি নেতাদের মানতে হবে।
সোমবার দ্যা ফক্স নিউজ ও টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ইহুদিগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে এক আলাপে ফিলিস্তিনের প্রতি এসব কথা বলেন যুবরাজ সালমান।
ফিলিস্তিনের নেতৃত্বের প্রতি মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য টেবিলে বসুন। আর তা না করলে অভিযোগ জানানো বন্ধ করে চুপচাপ থাকুন।’
সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘গত কয়েক দশকে শান্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি নেতারা একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। এখন সময় এসেছে ফিলিস্তিনিদের প্রস্তাব গ্রহণ করার এবং আলোচনার টেবিলে আসা অথবা চুপ থেকে অভিযোগ দেওয়া বন্ধ করা।’
সালমানকে উদ্ধৃত করে চ্যানেল টেন নিউজের খবরে বলা হয়, সৌদি সরকারের উদ্বেগের শীর্ষ তালিকায় নেই মধ্যপ্রাচ্যর ফিলিস্তিন সমস্যা। তবে উপসাগরীয় এ রাষ্ট্রের কাছে এ সমস্যা ‘মোকাবিলা করার চেয়ে আরও জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ রয়েছে। কারণ এ অঞ্চলে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সৌদি আরবের উদ্বেগের কারণ। সালমান আরও বলেন, সৌদি আরবের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য শান্তির প্রক্রিয়ায় এখনো অনেক কাজ করা দরকার।
সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। দুই দেশের মধ্য কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুতগতিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের একই ও অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুটি দেশই ইরানকে তাদের উভয়ের হুমকি বলে মনে করে।
ইসরায়েল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি কর্মকর্তারা এই দুই দেশের মধ্যে গোপন সম্পর্কের গুজব অস্বীকার করেন। যদিও সৌদির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কিন সংবাদ সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে সৌদি যুবরাজ এক সাক্ষাৎকার দেন। দ্য আটলান্টিকের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ সৌদি প্রিন্সের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, নিজেদের পিতৃপুরুষের ভূমিতে একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ইহুদিদের বসবাসের সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন কি না। জবাবে যুবরাজ বলেন, ‘আমি মনে করি, যেকোনো মানুষের একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, নিজেদের ভূমির ওপর ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের অধিকার আছে। কিন্তু আমাদের এখন একটি শান্তিচুক্তি দরকার, যাতে সব পক্ষই স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক একটি সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।’
২০০২ সাল থেকে চলা আরব শান্তি উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৌদি আরব। তাদের স্বপ্ন দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের সংকট সমাধান হবে।
যুবরাজ আরও বলেন, ‘জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদের ধর্মীয় গুরুত্ব এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে আমাদের মূল আগ্রহের বিষয়। আমরা শুধু বলতে চাই, অন্য কারও বিষয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।’
ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল ও প্রধান তীর্থভূমি সৌদি আরব ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না।
ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় আরব ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ওই ভূমি ফেরত দেওয়ার ওপর ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক নির্ভর করবে—এমন নীতিই রিয়াদ এত দিন বজায় রেখে এসেছে। ফিলিস্তিনিরা ওই ভূমির দাবিদার।
কিন্তু এখন মোহাম্মদ বিন সালমানের এ বক্তব্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
ফিলিস্তিনি নেতারা পূর্ব জেরুজালেমকে তাঁদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখেন। কিন্তু ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মার্কিন ধাঁচের শান্তি প্রক্রিয়া মেনে নিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন বিন সালমান। তবে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের এ ‘শান্তি প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ৩:০৪:২৭ ৯১৩ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #breaking news #World News