সকালে ঘুম থেকে উঠে শেষ কথাটি হয়েছিল নীলিমার সাথে।প্ল্যান ছিল দুপুরে যদি বৃষ্টি হয় দুজন একসাথে ভিজবো।একসাথে বলতে হাতে হাত রেখে নয়,চোখে চোখ রেখে,হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে স্পর্শ করে।
বিশাল নগরীর ইট-কাঠ-ধূলা-বালির মাঝে একটুখানি শান্তির আশ্রয় বহুতল ভবনের পঞ্চম তলার একটি সংকীর্ণ কক্ষে।যখন একে আমাদের গ্রামের হেঁসেল ঘরের সাথে মিলাই তখন সংকীর্ণ লাগে।আর যখন কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন বস্তীর ঘরের সাথে মিলাই তখন একে ফুটবলের মাঠ না হলেও কাছাকাছি কিছু একটা মনে হয়।যাহোক এতটুকুর মধ্যেও আমার একটি নিজস্ব পৃথিবী আছে।তা হলো এই ছোট্ট ঘরের সাথে একটি সরু ও ছোট্ট বেলকনি আর তার এককোণে গোসলের ভাঙা মগটাতে লাগানো একটি মানিপ্লান্টের চারা।এই নিষ্ঠুর,নীরস নগরীর মাঝেও রস আছে বোঝা যায় আমার বেলকনিতে দাঁড়ালে উঁচু উঁচু সুদৃশ্য বিল্ডিংয়ের মাঝে এক টুকরো সবুজ যেন আমায় হাতছানি দেয়।সারাদিনের ক্লান্তি আর বিষাক্ত হাওয়ায় ডুবে থাকা আমি একটু অক্সিজেন পাওয়ার আশায় তাই ছুটে যাই সেখানে।সেই সাথে সেই সবুজের ওপারে নীলিমাদের বহুতল ভবন আর ওর ঘর সংলগ্ন বেলকনি।দুজনে এই দুই বেলকনিতে দাঁড়িয়েই একসাথে ভিজবার কথা হয়েছিল।
প্রচন্ড মেঘ হয়েছে আকাশে।নীলিমার মুখে হয়তো পড়েছে তার কালো ছায়া।হয়তো মুষলধারার সাথে একাকার হবে নীলিমার অশ্রুবারিধারা।কেউ বুঝতেও পারবে না,বুঝবে শুধু আমার রক্তক্ষয়ী হৃদয়।সিংহের গর্জনের মতন আর্তনাদ করতে চাইলেও পারবো না,বাঘের থাবা যেন হৃদয়টাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনবে,তবুও তা বুকের বামপাশে স্থির হয়ে থাকবে।
নীলিমাকে কথা দিয়েছিলাম-খুব দ্রুত একটি ফার্স্ট ক্লাস চাকরি জুটিয়ে ফেলবো আমার ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্টের মতন।কিন্তু রেজাল্ট যতটা সহজ,চাকরি ততটা নয়।তাই আমার আর্তনাদ আজ পা হারা পঙ্গু সিংহের হুংকার।আর তোমার টাকাওয়ালা বাবার ভাড়াটে…যাক সে কথা।আজ সন্ধ্যায় নগরীর নামকরা রেস্টুরেন্টে নানা রঙের কাঁচা ফুলের আর ঝলমলে আলোক সজ্জায় ধনী বাবার ব্যরিস্টারি পড়া পুত্রের দামি আঙুলের স্পর্শে তোমার আঙুলে উঠবে দামি হীরার আংটি।আমার সন্ধ্যা এখনি নেমেছে।ভাঙা ঠেলাগাড়িতে আমার ব্যাচেলর জীবনের তৈজসপত্র আর ছোট্ট পৃথিবীর সেই সবুজ প্রাণটুকু নিয়ে চলেছি আজানার সন্ধানে।মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে রেখেছি।ভাবছি সিমটি রি-রেজিস্ট্রেশন করবো না।এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
এই যা,বৃষ্টি নামলো মুষলধারে।মানিপ্লান্টায় অনেকদিন পানি দেয়া হয়নি।আজ খোলা আকাশের নিচে আমার সঙ্গী হয়ে ও একটু সতেজ হয়ে উঠুক।