বঙ্গ-নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনেই বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদনও পাচ্ছে। শেষ সময়ে এসে ভোটারদের মন জয় করতে সংসদ সদস্যরাও নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রী-এমপিদের আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) জমা পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে নেওয়া এসব প্রকল্পের বরাদ্দ ও সময় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও বাড়াতে হবে। এতে সম্পদের অপচয় হতে পারে। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকরা তা মনে করছেন না। তাদের মতে, সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এসব কাজ হচ্ছে।
নির্বাচনের আগে এসে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় মসজিদ-মন্দিরসহ সামাজিক, ধর্মীয় ও খেলাধুলা বিষয়ক অবকাঠামোও নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে গৃহীত মেগা প্রকল্পে ২৩ হাজার কোটি টাকার কাজ করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। তিন হাজার নতুন ভবন এবং তিন হাজার ২৫০টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্র্রসারণে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়াও ৩২৩টি সরকারি স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে চার হাজার ছয়শ’ কোটি টাকা এবং ২০০ সরকারি কলেজ উন্নয়নের জন্য এক হাজার আটশ’ কোটি টাকা ছাড়ের সরকারি অর্ডার (জিও) অপেক্ষমাণ।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সমকালকে বলেন, সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ পাবেন সংসদ সদস্যরা। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা, ঈদগাহ ও খেলার মাঠের উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের ৪৯১টি উপজেলায় এক কোটি করে মোট চারশ’ ৯১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এ জন্য পরে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এ ছাড়া পূর্ত কাজের বরাদ্দ হিসেবে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রতিটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ হবে।
নির্বাচনের বছরে এমন বরাদ্দ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেষ সময়ে বাস্তবতা বিবেচনা না করেই নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া উচিত। এখন যেগুলো অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এসব প্রকল্প পুরোপুরি নির্বাচনী প্রকল্প। নির্বাচনে এমপিদের সহায়তা করা ছাড়া এসব প্রকল্প নেওয়ার আর কোনো কারণ দেখি না। প্রকল্পগুলোর যৌক্তিকতাও নেই। কারণ চাহিদামতো নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্নিষ্ট বিভাগ আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক সাংসদ তার নির্বাচনী এলাকায় ১০টি নতুন ভবন করতে পারবেন। এ প্রকল্পের আওতায় সাতটি ক্যাটাগরিতে তিন হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও আসবাবপত্র দেওয়া হবে। প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি, ছাত্রীদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। দেশে চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে দুই হাজার ১৫০টি, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা ভবন হবে ১০০টি, পাহাড়ি এলাকায় চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে ৫০টি, উপকূলীয় এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা ভবন (নিচতলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-কাম শ্রেণিকক্ষ) হবে ১৫০টি। এ ছাড়া হাওর এলাকায় পাঁচতলা ভবন হবে ৫০টি, লবণাক্ত এলাকায় চারতলা ভিতবিশিষ্ট ভবন হবে ১৭৫টি এবং নদী-ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থানান্তরযোগ্য সেমিপাকা কাঠামোয় নির্মাণ হবে ২৫টি ভবন। এসব ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।
ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে সারা দেশে আরও তিন হাজার ২৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও আসবাবপত্র কেনার জন্য পাঁচ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাঁচটি করে নতুন মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একনেকে এটি পাস হওয়ার অপেক্ষায়। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে সাত হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। দেশে ৩২৩টি সরকারি স্কুলের জন্য চার হাজার ছয়শ’ কোটি টাকা এবং ২০০টি সরকারি কলেজের ভবনের অবকাঠামো নির্মাণে এক হাজার আটশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত সাড়ে আট বছরে সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ১০ হাজার ১১টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আরও চলমান রয়েছে দুই হাজার চারশ’ ৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজ।
মসজিদ-মন্দিরের উন্নয়নেও বরাদ্দ পাচ্ছেন এমপিরা। এ লক্ষ্যে ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলায় অন্তত দুই কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম হবে, যা পরিচালনা করবেন এমপিরা। ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ পাঁচ হাজার ১৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে চার হাজার চারশ’ ৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা; সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ কোটি ৯৩ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ৬৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৯০৩ কোটি টাকায় বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী আসনে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের বিশেষ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন দিয়েছে। পুরো টাকা সরকার নিজস্ব উৎস থেকে দেবে।
এমপিরা নিজের নির্বাচনী এলাকায় কোথায় কোথায় নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণ করতে হবে, তা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানাবেন। অধিদপ্তর সাংসদদের চাহিদামতো নলকূপ ও টয়লেট তৈরি করবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
২০১০ সালে চার হাজার ৬৯১ কোটি টাকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে পরের পাঁচ বছরে ২৭৯ জন এমপি প্রত্যেকে ১৫ কোটি টাকার কাজ শেষে করেছেন। এসব কাজ নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
সুত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:২৭ ৭৪৩ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #breaking news #World News