বঙ্গ-নিউজ জাবি প্রতিনিধিঃসরকারি চাকরিতে বিদ্যামান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের ‘বর্বরোচিত’ হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে এর জবাব চেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। একই সঙ্গে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে এতে সমর্থন জানান তিনি।
সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সংলগ্ন ভেতরের রাস্তায় উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা।
তিনি বলেন, এটি একটি যৌক্তিক দাবি। পুলিশি হামলা চালিয়ে এ আন্দোলন দমানো যাবে না। এ দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু সরকার তা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। আমরা আর রক্তপাত চাই না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী এবং জাহাঙ্গীর কবির নানককে বিষয়টি জানিয়েছি। কেন আমার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা করে রক্তাক্ত করল আমি তার জবাব চেয়েছি।
উপযার্চ বলেন, ৫৬% কোটা আসলেই একটি জাতির জন্য লজ্জাজনক। এ আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে, আমরা তোমাদের পাশে আছি। প্রয়োজন হলে তোমাদের সাথে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করব। এ সময় উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আর আন্দোলন আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশে পরবর্তী কর্মসূচি আবার জানানো হবে বলে জানিয়েছেন এর আহবায়ক ও আইন ও বিচার বিভাগের ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী খান মুনতাসির আরমান।
এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে প্রায় হাজার খানেক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন। পরে সাড়ে বারোটার দিকে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও জলকামান মেরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পুলিশের এমন হামলার প্রতিবাদে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছেন জাহাঙ্গীরনরগর বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৫০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫জনকে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন ও আহত হয়েছেন। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধে মহাসড়কের উভয় পাশে পায় ৩০ কি. মি যানজট লেগে যায়। এতে ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের সকল জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর আগে সকাল থেকেই ব্যপক সংখ্যক পুলিশ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রান্তিক গেইটে সাঁজোয়াযান নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। যাতে কেউ মহাসড়কে অবস্থান নিতে না পারে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সব বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক দখলে নিয়ে নেয়।
এর আগে এ হামলার প্রতিবাদে আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত চলছে। সকাল থেকে কোনো বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সবাই উপস্থিত হয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন এবং সকল অনুষদেও প্রদক্ষিণ করেন। তবে পূর্ব নিধারিত ফাইনাল পরীক্ষা এর আওতামুক্ত রাখা হয়।
গতকাল মধ্যরাতেও জাবি ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। মিছিলে মুহূর্মুহু শ্লোগানে পুরো ক্যাম্পাসের মুখরিত হয়। মিছিলটি বটতলা থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ছাত্রীদের হল, চৌরঙ্গী মোড়, পরিবহন চত্ত্বর হয়ে বটতলায় এস শেষ হয়। মিছিল- সমাবেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমর্থন জানায়।