বঙ্গ-নিউজ: ‘ক্ষমা করে দিও বাবা …’। চারটা শব্দেই যেন অনেক না বলা কথা বলা হয়ে যায়। মনের মধ্যে পুষে রাখা বেদনার স্পর্শও পাওয়া যায় বাক্যটাতে।
রংপুরের পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনার লাশ উদ্ধারের পর তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে দীপ্ত ভৌমিক নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত বুধবার ওই কথা বলেছেন ফেসবুকে।
একই সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছেন তিনি। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে এ দাবি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী দীপ্ত।
তিনি আরও বলেন, অপরাধী কখনও আমার মা হতে পারে না। অপরাধী অপরাধীই, সে যেই হোক না কেন। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমি আমার বাবার খুনিদের ফাঁসি চাই।
দীপ্ত বলেন, সব পরিবারেই তো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝগড়া হয়। আমাদের পরিবারেও হতো। কিন্তু আবার তা সমাধানও হয়ে যেত। কিন্তু মা অন্যের সহায়তায় যেভাবে বাবাকে খুন করেছে, তা মেনে নিতে পারি না। বাবা বলতেন, মানুষের সেবা করাই বড় ধর্ম। ভাবতেও পারিনি সহজ-সরল বাবার এমন পরিণতি হবে। সুন্দর সাজানো একটি সংসার তছনছ হয়ে যাবে।
দীপ্ত বলেন, বাবা বলতেন, তুমি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে উকিল হও। সাধারণ মানুষের সেবা কর। তার ইচ্ছায়ই আমি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছি।
এদিকে রথীশ চন্দ্র হত্যার প্রধান আসামি তার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের কথিত প্রেমিক কামরুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার।
জিজ্ঞাসাবাদে স্নিগ্ধাকে নিয়ে হত্যার ব্যাপারে পুলিশকে নানা তথ্য দিয়েছেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্যের সবটা সাংবাদিকদের বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কামরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনিই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এ ব্যাপারে স্নিগ্ধা ও তাদের দুই স্কুলছাত্র রোকন ও সবুজ পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ জানায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যের নানা বিষয় কামরুলকে জানাতেন স্নিগ্ধা। কামরুলও সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে থাকেন। মূলত দুই বছর ধরে তারা পরকীয়া শুরু করেন। এরপর কামরুল স্নিগ্ধাকে ধর্মান্তরিত হওয়ার এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তা নাকচ করে পরকীয়া চালিয়ে যান স্নিগ্ধা।
রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া বলেন, স্নিগ্ধা, কামরুল, রথীশ চন্দ্রের গাড়িচালক মিলন মোহন্ত এবং দুই ছাত্র রোকন ও সবুজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
র্যাব ও পুলিশ জানায়, জাপানি নাগরিক হত্যা ও মাজারের খাদেম হত্যা মামলার পিপি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা। গত ৩০ মার্চ বাবু সোনার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় বাবু সোনা নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এরপর বিভিন্ন সংগঠন তাকে উদ্ধারে মানববন্ধন, সমাবেশ, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এরপরই মাঠে নামে র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তারা প্রথমেই পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্তে নামেন। এরপর পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার কথিত প্রেমিকা একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনের কললিস্ট বের করেন।
কললিস্ট দেখে আতকে ওঠে পুলিশ। প্রতিদিন ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ জুটি ৩০ থেকে ৩৫ বার মোবাইলে কথা বলতেন। ওই কললিস্ট দেখে সন্দেহ হলে নগরীর রাধাবল্লভ এর বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করে কামরুল ইসলামকে। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানায় কামরুল।
এরপর র্যাব বাবু পাড়ার বাড়ি থেকে স্নিগ্ধা ভৌমিককে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য পেয়ে র্যাব মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে বাবু সোনার বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোল্লাপাড়ায় খাদেমুল ইসলাম জাফরীর নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে তার লাশটি উদ্ধার করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৬:৫০ ১০৯৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম