টিভি সমালোচনা
বঙ্গ-নিউজঃ ২২ মার্চ রাত ১১টায় মোহন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো টেলিছবি নিখোঁজ ভালবাসা। অভিনয় করেছেন শখ, আফরান নিশো প্রমুখ। টেলিছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম, একটি চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক আফরান একদিন সেট থেকে ছুটি নিয়ে কাজি অফিসে যায় বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সারা দিন অপেক্ষার পরও শখ আসে না। এ ঘটনার পর তার জীবনধারা ও উপলব্ধিই পাল্টে যায়। এর পাঁচ বছর পর সে যখন একজন প্রতিষ্ঠিত পরিচালক, তখন হঠাৎ একদিন একটি মেয়ে এসে শুটিংয়ের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। মেয়েটিকে দেখে চমকে ওঠে আফরান। এই সেই মেয়ে, ৫ বছর আগে যার সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এরপর মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, সে শখ নয়, তার প্রবাসী ছোট বোন। মেয়েটি জানায়, পাঁচ বছর আগে সেদিন শখ আফরানের পছন্দমতো নীল শাড়ি পরে বিয়ের উদ্দেশ্যে ঠিকই বেরিয়েছিল, কিন্তু রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। পাঁচ বছর পর খবরটি জেনে ভুল ভাঙে আফরানের, সে ভীষণ কষ্ট পায়। পরে শখের ছোট বোনের সান্ত্বনায় সে আবার সুস্থভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। বলা যায় গল্পটি নিতান্তই সাদামাটা, উপস্থাপনাও তাই। তবে গল্পের অনেক জায়গায় দর্শকমনে প্রশ্ন জাগে, শখ নীল শাড়ি পরে বেরিয়ে আফরানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে। মোবাইলের এ যুগে আফরান শখের মারা যাওয়ার কোনো খবরই পেল না! সে নিজেও খুঁজে বের করল না—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হয়? দুর্ঘটনার দৃশ্যটি অত্যন্ত দুর্বল। মনে হয়েছে একটা দাঁড়ানো গাড়ির ওপর ঢলে পড়েছে শখ। তারপর সে রাস্তার ওপর একা মরে পড়ে আছে। মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়েছে, অথচ মাথায় কোনো রক্ত নেই। গড়ানো রক্তও মাথা থেকে বেশ দূরে। দুর্বল গল্প ও নির্মাণের কারণে টেলিছবি নিখোঁজ ভালবাসা মনে দাগ কাটতে পারেনি।
অন্যদিকে ২৪ মার্চ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এনটিভিতে পুনঃপ্রচারিত হলো আরেকটি টেলিছবি ছায়াফেরী। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, অপি করিম ও সজল। অসুস্থ ও হুইলচেয়ারে জীবনযাপন করা সজলকে নিয়ে অপির সংসার। অপি সারা দিন ব্যস্ত থাকে অফিসে। আর সজল দুঃস্বপ্ন ও দুর্ভাবনায় ডুবে একা একা হুইলচেয়ারেই কাটিয়ে দেয়। এর মাঝে ঘটনাক্রমে একটি পারিবারিক ছবি নিয়ে প্রবাসী শিল্পী আফজালের সঙ্গে অপির সাক্ষাৎ ও মেলামেশা হয়। সজল নানা কল্পনায় সন্দেহে ও অভিমানে দগ্ধ হয়। শেষে প্রতীকীচিত্রে দেখানো হয়, আফজাল ঈর্ষাবশত খুন করছে সজলকে।
ঘটনা সামান্যই কিন্তু নির্মাণ পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং অভিনয়—সবই মনে দাগ কাটার মতো। তিনটি চরিত্রেরই চরিত্রায়ণ হয়েছে যথাযথ এবং অভিনয় হৃদয়স্পর্শী। বিশেষ করে অপি করিমের অভিনয় ছিল অনবদ্য। আফজাল ও সজলের অভিনয়ও ছিল চরিত্রানুগ ও প্রশংসনীয়। শুধু টেলিছবিটির শেষ পরিণতি যুক্তিসম্মত মনে হয়নি। কারণ, শিল্পী আফজালের সঙ্গে অপির এমন কোনো সম্পর্ক দেখানো হয়নি যে কারণে তাঁর স্বামীকে হত্যা করতে হবে। এটি আরোপিত মনে হয়েছে। তারপরও যেন প্রতিটি দৃশ্য, সংলাপ ও অভিনয় ছুঁয়ে গেছে দর্শকহৃদয়।
গানের ‘মোমেন্টস অব মিউজিক’। প্রচারিত হলো ২৪ মার্চ রাত ১১টায় এটিএনে। উপস্থাপনা করেছেন নাভিদ মাহমুদ। শিল্পী ছিলেন ফাহমিদা নবী, বাপ্পা মজুমদার, কনা ও ইমরান। প্রথমে সবাই একে একে গাইলেন তাঁদের নিজের গান। পাশাপাশি ওই গানের মিউজিক ভিডিও ও দেখানো হচ্ছিল পর্দায়। কনা গাইলেন, ‘আমি চাঁদের কণা, আমাকে ছোঁয়া যাবে না’। বাপ্পা গাইলেন ‘তুমি নাই তুমি নাই, নাই নাই’। ফাহমিদা গাইলেন ‘চোখের কার্নিশে’। শেষে ইমরান গাইলেন ‘এ শহরে যাই হারিয়ে’। এরপর দুজন দুজন মিলে গাইলেন দ্বৈত সংগীত। এরপর শুরু হলো প্রতিযোগিতা পর্ব, সিনেমার গানের শুধু ভিডিও দেখে বলা কোনো গান এবং তৎক্ষণাৎ গানটি স্বকণ্ঠে গাওয়া। এক এক করে সবাই অংশগ্রহণ করলেন এ পর্বে এবং সবাই সফলও হলেন। শোনা গেল আরও চারটি গান।
এভাবে বৈচিত্র্যময় পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি হয়েছে আকর্ষণীয়। গতানুগতিক গানের অনুষ্ঠান থেকে এটি ছিল কিছুটা ভিন্নতর। নাভিদ মাহমুদের উপস্থাপনা ছিল কৃত্রিমতাবিবর্জিত ও আন্তরিক। আর তাঁর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে শিল্পীরাও হয়ে উঠেছেন অকৃত্রিম ও অন্তরঙ্গ। তবে নামকরণটি আমাদের মোটেই ভালো লাগেনি। ইংরেজি নামকরণের প্রতি নির্মাতা ও চ্যানেলগুলোর কেন এত আগ্রহ, বুঝতে পারি না। বাংলা গান এবং বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান, অথচ অনুষ্ঠানের নাম ‘মোমেন্টস অব মিউজিক’ এটি একেবারেই বিসদৃশ। আশা করি বিষয়টি অনুষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন।
এরপর আরটিভির সেলিব্রিটি শো ‘এবং পূর্ণিমা’ প্রচারিত হলো ২৪ মার্চ রাত ১০টায়। উপস্থাপক জনপ্রিয় অভিনেত্রী পূর্ণিমা। তাঁর নামানুসারেই অনুষ্ঠানের নামকরণও করা হয়েছে। এদিন অতিথি ছিলেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ও নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ। দুজনকে ঘিরে দর্শকের আগ্রহ আছে। যেমন তাঁদের পরিচয়, প্রণয়, দাম্পত্য জীবন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন ও তার খোলামেলা উত্তর অনুষ্ঠানকে করেছে আকর্ষণীয়। পাশাপাশি দুজনের কাজ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে এই অনুষ্ঠানে। পূর্ণিমা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে দর্শকদের আগ্রহ মিটিয়েছেন।
কিন্তু পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার দিক থেকে আরও আকর্ষণীয় করা যেতে পারে। উপস্থাপক হিসেবে পূর্ণিমার যে জনপ্রিয়তা ও উচ্চতা, এই অনুষ্ঠানে তার প্রমাণ মেলেনি। এর চেয়ে তাঁর লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও অনেক আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মাথায় রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৫:২৪ ৬৭৮ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News