মিজানুর রহমান লালমনিরহাট প্রতিনিধি:বঙ্গ-নিউজঃ শশুরের মৃত্যু পরে বশতভিটা জমির ভাগ অথবা মোটা অংকের যৌতুকের টাকা দাবী করে আদায় করতে না পেয়ে চার সন্তানের এক অসহায় জননীর মাথার চুল ব্লেড দিয়ে নেড়া করে দেবার অভিযোগ উঠেছে এক পাষণ্ড স্বামী, ভাসুর ও তার দুই বোনের বিরুদ্ধে। আর এ ঘটনাটি যেন আদিমকালের নির্মম বর্বরতাকে হাড় মানিয়েছে। বর্তমানে মহিলাটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা হাসপাতালে বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
বুধবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টায় ঐ উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি এলাকায় এ নেক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ঐ জননী তার স্বামীসহ ৪ জনের নামে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
আটককৃতরা হলেন ঐ এলাকার মৃত্যু মহির উদ্দিনের ছেলে (স্বামী) বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছা।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ঐ উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের মৃত্যু ঝুল্লুর রহমানে ছোট মেয়ে শাহানারা বেগমের সহিত ১০ বছর পুর্বে বিয়ে হয় সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি (৫ নং ওয়ার্ড) এলাকার মৃত্যু মহির উদ্দিনের ছেলে বাবলু মিয়ার।
বিয়ের সময়ে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করলে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাইকে ব্যবসা বাণিজ্য করে খাবার জন্য ১ লক্ষ টাকা জোগাড় করে উপটৌকন বাবদ দেন তিনি। বিয়ের পর ইতিমধ্যে তারা স্বামীস্ত্রী ৪ সন্তানের জনকজননী হয়েছে।
কিছুদিন পুর্বে ঝুল্লুর রহমানের মৃত্যু হলে বাবলু মিয়া আরও ১ লক্ষ টাকা অথবা তার শশুরের বসতভিটা ১০ শতাংশ জমির ভাগ বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসার জন্য তার স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করেন। শাহানারা বেগম এতে রাজি না হলে তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
এমত অবস্থায় গতকাল বুধবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টার সময় আসামী বাবলু মিয়া (৩৫), তার বড় ভাই আব্দুল গফুর (৪০), স্বামী পরিত্যাক্ত দুই বোন মহুরন নেছা (৩৭) ও আমেনা বেগম (৩০) দয় মিলে যৌতুকের টাকা নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে শাহানারা বেগমকে বেধড়ক মারধোর করেও তার শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ফুলা জখন করেন। এতেও তাড়া ক্ষান্ত হয়নি। এরপরে সকলেই মিলে তার স্বামী শাহানারা বেহমের হাত-পা বেধে গলায় ছোড়া লাগিয়ে তার মাথা চুল ব্লেড দিয়ে নেড়া করেন এবং ঘরের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখেন।
বিকাল বেলা বাবলু মিয়া বাজারে গেলে ঐ সুযোগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহানারা বেগম ঘরের বেড়ার বাঁধন কেটে ভুট্রা ক্ষেতের ভিতর দিয়ে পালিয়ে এসে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি হন।
অতঃপর রাত ১০টার দিকে এবিষয়ে শাহানারা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামীসহ ঐ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাতেই বাবলু মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকেসহ তার বড় বোন মহুরন নেছাকে গ্রেপ্তার করেন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শাহানারা বেগম তার ৪ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালের বেডে কুঁকড়ে কুঁকড়ে কাদছে। তার মাথার চুল সমস্ত নেড়া করা আছে এবং শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ফুলা যখন আছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিককে বলেন, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী, ভাশুর ও তাদের দুবোন যৌতুকের জন্য প্রায়ই তাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে এর মাত্রা বেড়ে যায় তার বাবার মৃত্যুর পরে। তার কোলের ৪ সন্তানের ভবিষতের কথা চিন্তা করে তিনি শত অত্যাচার, নির্যাতন নিরবে সহ্য করে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও তার স্বামীর আরও একটা স্ত্রী ছিলো। যৌতুকের জন্য প্রায়ই তাকে মারধোর করার কারণে তার বাবা-মা তাকে ছেড়ে নিয়ে অন্যত্র বিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, তার বাবা-মা খুবই গরীব লোক। গত একবছর আগে ট্রেনে কাটা পড়ে তার বাবা মারা গেছেন। তারা ৪ বোন, এক ভাই দুই মা। তার বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতাংশ জমি উপর তার দুই মাসহ বড় ভাই আবু বকর তার স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন। এখন কিভাবে তার দুই মা, ভাইকে তাড়িয়ে সেই জমি বিক্রি করে টাকা এনে বাবলু মিয়াকে দিবে। যাহা দিতে না পাড়ায় তাকে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিঠিতে তার মাথা ব্লেড দিয়ে নেড়া করে দেয়া হয়েছে।
তিনি ঐ নরপশু বাবলু মিয়ার শাস্তি দাবি করে।
এবিষয়ে কথা হলে সিন্দুর্না ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমি ঘটনাটি এখনি শুনলাম। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, আইনের উর্ধে কেউ নয়। কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
ঐ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য জাহেদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বাবলুর পরিবারের সকল সদস্য হট মেজাজি লোক, তারা এলাকার কাউকেই মানেন না। আর তাদের পরিবারে এজন্য কেউ যাতায়াত করেন না।
হাতীবান্ধা থানার অফিসারস ইনচার্জ (অসি) উমর ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিককে জানা, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাবার পরে তিনি বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। এছাড়াও আজ বৃহস্পতি সকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে বলে তিনি জানা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৭:১৫ ১৪৬৭ বার পঠিত # #bangla news #bd news #breaking news #headlines #online news paper