বঙ্গ-নিউজঃ শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা দাবি করলেও সরকার তা নির্ধারণ করতে চায় ১০ হাজার টাকা বা এর কিছু বেশি। তৈরি পোশাক, গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল এবং সিকিউরিটি সার্ভিস—এই ছয় শিল্প খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড সূত্রে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বাজেট পাসের আগে অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা সরকারের কাছে জমা দিতে চায় মজুরি বোর্ড। আর মজুরি বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই। দেশের এই ছয় শিল্পের শ্রমিকদের সমর্থন আদায়ে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এসব শিল্পের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং করছেন। গত ৩ মার্চ বৈঠক করেন বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি শিল্পের কর্মকর্তারা। ৪ মার্চ বৈঠক করেন গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট শিল্পের কর্মকর্তারা। ১৯ মার্চ বৈঠক করেন তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মকর্তারা। ২০ মার্চ বৈঠক করেছেন সিকিউরিটি সার্ভিস খাতের কর্মকর্তারা। ২১ মার্চ (বুধবার) বৈঠক করবেন অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ শিল্পের কর্মকর্তারা। ২৭ মার্চ শেষ বৈঠক করবেন অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল শিল্পের কর্মকর্তারা।
ইতোমধ্যে যারা বৈঠক করেছেন এবং যারা করেননি, সেসব শিল্পের শ্রমিক নেতারা এক হয়ে সর্বনিম্ন বেতন কত হবে, কী কী সুবিধা চাওয়া হবে তা মোটামুটি ঠিক করেছেন। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবও তারা মজুরি বোর্ডে দিয়েছেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠন উল্লেখযোগ্য। একাধিক সংগঠনের একটি জোট স্মারকলিপি দিয়েছে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর।
স্মারকলিপিতে তারা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মূল বেতন ১০ হাজার টাকাসহ মোট ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছেন। এর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি হবে ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ভেরিয়েবল ডিএ, কন্ট্রিবিউটর প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
তবে এ জোটের বাইরে থাকা পৃথক সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান বিবেচনায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য এটি নির্ধারণ করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
উল্লেখ্য, দেশের পোশাক শিল্পের মজুরি কাঠামো সর্বশেষ পর্যালোচনা হয় ২০১৩ সালে। সেই বছর ন্যূনতম মজুরি হার নির্ধারণ হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামোর ঘোষণা দেয়া হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ) সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব দাবি আসবে, তা এক করে পর্যালোচনা করা হবে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে সর্বনিম্ন বেতন কত হবে। অবশ্যই যা ঘোষণা করা হবে তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাও থাকতে হবে। শিল্প সক্ষমতা এবং শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা—এই দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা সে ধরনের একটি বেতন কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করছি।’
এ বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হয়। বোর্ড গঠনের তিন মাস পর সোমবার (১৯ মার্চ) ওই বোর্ডের প্রথম সভা হয়। সভায় বেতন কাঠামো নিয়ে ততটা গুরুত্ব দিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে বিদ্যমান শ্রম আইন এবং বিধিতে যেসব বিধান আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের কী কী সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধা আছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ এপ্রিল নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা হবে। ওই সভার আগে সংশ্লিষ্টদের নিজেদের পক্ষে থাকা দাবি-দাওয়া ও সুপারিশ, পরামর্শ, অনুরোধ কিছু থাকলে তা জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯ মার্চের সভায় জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৩:৪৬ ৫৩৭ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News