বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ জাতীয় সংসদে সরকার ও সরকারপ্রধানের নিকটাত্মীয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লুটপাটের অভিযোগ এনেছে বিএনপি। এর পাল্টা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের নিকটাত্মীয় এবং বিএনপির নেতাদের আর্থিক দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জবাব দিয়েছে সরকারি দল।স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশনে এসব অভিযোগ তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ছিলেন না।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফী ক্ষিপ্র গতিতে সরকারের মন্ত্রী, সাংসদদের বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দেন। তারপর শুরু করেন দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপ্যায়ন ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আসিফা আশরাফী। তিনি বলেন, তাঁদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খরচ করেছিলেন ৮০ লাখ টাকা। আর শেখ হাসিনা খরচ করেছেন সাত কোটি ৮০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে এ খাতে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সুখের খবর হলো, পাঁচ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত ছিল।
আসিফা আশরাফী বলেন, তারেক রহমান বিদেশে স্ত্রী-সন্তানসহ ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয় আর পুতুল যে থাকছেন, তাঁদের বাড়ির উৎস কী? ২০০৬ সালে ভার্জিনিয়ার একটি শহরে ১০ লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন জয়। ভার্জিনিয়ার আরেকটি শহর আলেকজান্দ্রিয়ায় ১০ লাখ ডলারে আরেকটি বাড়ি কিনেছেন সজীব ওয়াজেদ। ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে ফ্লোরিডায় পাঁচ লাখ ডলার খরচ করে বাড়ি কিনেছেন জয়। ১৬ অক্টোবর ২০০৪ সালে সাড়ে ১০ লাখ ডলার খরচ করে ফ্লোরিডায় আরেকটি বাড়ি কিনেছেন জয়। এ ছাড়া একই অঙ্গরাজ্যে আরও তিনটি বাড়ি আছে তাঁর। ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কী করেছেন আর করেননি, সেটা পরবর্তীকালে জানানো হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের চিত্র তুলে ধরে আসিফা আশরাফী বলেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের ব্যাংক ডাকাতের পাল্ল্লায় পড়ে আজকের ব্যাংকগুলো জামানতশূন্য ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন কর্তাব্যক্তির চাচা পরিচয় দিয়ে, আর সরকারি দলের সাংসদ নামমাত্র সম্পদ দেখিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। দুর্নীতির দরবেশ সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন জিএমজি এয়ারলাইনস আর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নামে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। সাংসদ নসরুল হামিদের হামিদ রিয়েল এস্টেটের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৭০ কোটি টাকা। আওয়ামী-বাকশালীদের হরিলুটে ব্যাংকিং খাত আজ পথে বসেছে। বিসমিল্ল্লাহ গ্রুপের ২০০ কোটি টাকা দেখা গেছে প্রিমিয়াম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল সুন্দর করে তুলে নিয়েছেন। ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলো থেকে তুলে সেগুলোকে দেউলিয়া বানিয়েছেন এঁরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সমালোচনা করে আসিফা আশরাফী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। সাংবাদিকেরা যখন জানতে চান-উনি বলেন, ‘আমার বলার কিছু ছিল না। চেয়ে চেয়ে দেখলাম বাহাত্তরের ব্যাংক ডাকাতেরা ডিজিটাল কায়দায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছে।’
টেলিকম খাতের আইজিডব্ল্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজির লাইসেন্স সরকারদলীয় সাংসদেরা নিজেদের নামে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন আসিফা আশরাফী।
জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে আসিফা বলেন, জিয়াউর রহমান পশ্চিম আকাশের সূর্য, রাতের তারা। আর যাঁরা তাঁর সমালোচনা করেন তাঁরা ঝিঁঝি পোকা, কিম্ভূতকিমাকার অন্ধকারের প্যাঁচা।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদের আয় এবং সম্পত্তি নিয়ে আনা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুর রহমান বলেন, সজীব ওয়াজেদ আমেরিকায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। ওইটা বোঝার ক্ষমতা রাত জাগা পাপিয়াদের নেই। আমেরিকায় ডাউন পেমেন্ট (্এককালীন কিছু জমা) দিয়ে বাড়ি কেনা যায়। তিনি বলেন, পুতুল এবং তাঁর স্বামী চাকরি করেন। সায়মা ওয়াজেদের প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত হয়।
আবদুর রহমান বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার আগে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে দুই হাজার ৮৮২ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিদেশ সফরে ৩৭টি সুটকেস খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীর কাছে ছিল। আর তাঁর (খালেদা জিয়া) কাছে আরও ২২টি সুটকেসে ছিল দুই হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।
সাংসদ আবদুর রহমান আরও বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তাঁর বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন শত শত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম করেছেন। আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। কোকোর ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি প্রভাব খাটিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন, সাভারে জমি কিনেছেন।
আবদুর রহমান বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে থাকেন। ২২ হাজার পাউন্ড মাসে ভাড়া দিয়ে সেখানে থাকেন। যদিও স্বনামে-বেনামে ব্রিজটনে আটটি বাড়ি আছে। এই টাকা কোথা থেকে আসে? তিনি কি চাকরি নিয়েছেন? মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সাক্ষ্য দিয়েছে। দুবাইয়ে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তারেক রহমান বৈঠক করেছেন। তারেকের স্বেচ্ছাচারিতার অনেক নজির বগুড়ায় রয়েছে। তারেকের একটি বাড়ি আর তাঁর স্ত্রীর পাঁচটি। খালেদা জিয়ার নির্দেশে বসুন্ধরার কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন তারেক।
আবদুর রহমান বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য পাকিস্তান ও সৌদি আরব থেকে ৩০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগের অপর সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে বক্তব্য দিলে বিএনপি হইচই করে মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করে।
বাজেটের ওপর গতকাল আরও আলোচনা করেন প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরী, ছায়েদুল হক, আশরাফ আলী খান, ফজলে রাব্বী মিয়া প্রমুখ।
সংসদ অধিবেশন আগামী রোববার বিকেল তিনটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:৩৭ ৪৩২ বার পঠিত