ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণে বিভ্রান্তি, পাইলটের সঙ্গে শেষ কথোপকথন

Home Page » এক্সক্লুসিভ » ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণে বিভ্রান্তি, পাইলটের সঙ্গে শেষ কথোপকথন
মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ ২০১৮



ছবি:ইন্টারনেট থেকে বঙ্গ-নিউজ:  নেপালের বিমান বন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণে বিভ্রান্তির ফলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ।

এদিকে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পাইলট বিমানবন্দরে অবতরণকালে কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশনা মানেননি। নির্দেশনা না মানার পরক্ষণেই এটি বিধ্বস্ত হয়। বলে অভিযোগ করেছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রাজকুমার ছেত্রী।

সোমবার (১২ মার্চ) দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রাজকুমার ছেত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, প্লেনটি ২টা ১৮ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়। তার আগে কন্ট্রোল টাওয়ারের পক্ষ থেকে প্লেনের পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, সে হিসেবে এটি ২টার দিকে অবতরণের কথা।

ছেত্রীর বলেন, যোগাযোগ করা হলে পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানান তিনি বিমাবন্দরের উত্তর-পার্শ্ব থেকে এসে নামবেন, কিন্তু হঠাৎ দেখা যায় প্লেনটি উত্তর-পূর্ব পাশে চলে গেছে। এরপর কন্ট্রোল টাওয়ার ফের তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চায়, তখনও পাইলট বলেন যে সব ঠিক আছে। তারপর দেখা গেলো প্লেনটি হঠাৎ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়লো এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গেলো।

বিমান দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এবং ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বিমানের ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে এর মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশের ও ৩৩ জন নেপালের বাকী দুইজন মালদ্বীপ ও চীনের নাগরিক বলে জানা গেছে।

সোমবার (১২ মার্চ) নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটদের কথোপকথনের একটি অডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে।

নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:

বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইউএস-বাংলার সংকেত ছিল বিএস-২১১। টাওয়ার থেকে ডাকা হচ্ছিল বাংলা স্টার টু ওয়ানওয়ান নামে।

কথোপকথনের প্রথমে টাওয়ার থেকে বলা হয় ‘রানওয়ে জিরো টু ইজ ক্লিয়ারড’। অর্থাৎ দক্ষিণ রানওয়েতে বিমানটি নামতে পারে। এর মধ্যেই জিরো টুতে আরেকটি উড়োজাহাজকে নামতে সংকেত দেয় টাওয়ার। এরপরের কথোপকথনগুলো ছিল এ রকম

টাওয়ার: আপনারা রানওয়ে টু জিরোর (উত্তর) দিকে যাচ্ছেন।

পাইলট: হ্যাঁ, ম্যাডাম।

এর মধ্যেই দক্ষিণের রানওয়েতে অন্য উড়োজাহাজটি নামার চূড়ান্ত সংকেত দেয় টাওয়ার। এরই মধ্যে ইউএস-বাংলার বিমানটিকে উত্তরের দিকে যেতে নিষেধ করে।

পরের কথোপকথনটা ছিল এ রকম:

টাওয়ার: বাংলাস্টার টু ওয়ানওয়ান আমি আবারও বলছি। রানওয়ে টু জিরোর (উত্তর) দিকে না যেতে। বর্তমান অবস্থা বজায় রাখুন।

পাইলট: আমরা ডান দিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরে আসছি। ডান দিকে ঘুরে ডান পথে রানওয়ের জিরো টুর (দক্ষিণে) দিকে যাচ্ছি।

টাওয়ার: ঠিক আছে, খুব ভালো। কিন্তু ল্যান্ড করবেন না। রানওয়ে জিরো টুতে ট্রাফিক চূড়ান্ত অবস্থায় আছে। বর্তমান অবস্থা বজায় রাখতে পারেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি রানওয়ের মধ্যে কোনটিতে পাইলট নামতে চান সে বিষয়ে জানতে চায় টাওয়ার।

টাওয়ার: বাংলাস্টার টু ওয়ানওয়ান। কোন রানওয়েতে নামতে চান। জিরো টু অথবা টু জিরো।

পাইলট: আমরা টু জিরোতে (উত্তর রানওয়ে) নামতে চাই। (কথোপকথনের ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড)

টাওয়ার: ঠিক আছে। রানওয়ে টু জিরো ল্যান্ডিংয়ের জন্য ক্লিয়ার। বাতাসের গতি ২৭০ ডিগ্রি ৬ নট।

পাইলট: জানলাম (কপিড)। ল্যান্ডিংয়ের জন্য ক্লিয়ার।

টাওয়ার: বাংলাস্টার আপনারা কি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন, নিশ্চিত করুন।

পাইলট: নেগেটিভ স্যার

টাওয়ার: বাংলাস্টার টু ওয়ানওয়ান ডানে ঘুরুন…এখনো রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন না?

পাইলট: হ্যাঁ, পাচ্ছি…ল্যান্ডিংয়ের জন্য অনুমতি চাচ্ছি। (রিকোয়েস্টিং ক্লিয়ার টু ল্যান্ড স্যার।)

টাওয়ার: হ্যাঁ, অনুমতি দেওয়া হলো। (২ মিনিট ২২ সেকেন্ড)

এতক্ষণ রানওয়ের উত্তর অংশে নামার কথোপকথন চলছিল। উত্তর অংশে নামার অনুমতি পাওয়ার ঠিক এক মিনিটের মাথাতেই পাইলট আবার দক্ষিণ (জিরো টু) রানওয়েতে অবতরণ করতে যাচ্ছেন বলে জানালেন। টাওয়ারও অনুমোদন দিল। এ সময়ই আবার পাইলট টাওয়ারকে জিজ্ঞেসও করলেন তাঁদের অবতরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না? জিরো টুতে অনুমোদন দেওয়ার ঠিক ৫০ সেকেন্ড পরে টাওয়ার চিৎকার করে ডান দিকে ঘুরতে বলে। এর কিছুক্ষণ পরেই রানওয়ে বন্ধের ঘোষণা আসে।

শেষ কথোপকথনটা ছিল এ রকম:

পাইলট: বাংলাস্টার টু ওয়ান ওয়ান রানওয়ে জিরো টুতে (দক্ষিণ) ল্যান্ডিং করতে যাচ্ছে। (ল্যান্ডিং অন জিরো টু। বাংলাস্টার টুওয়ান ওয়ান।)

টাওয়ার: রানওয়ে জিরো টু (দক্ষিণ) ল্যান্ডিংয়ের জন্য ঠিক আছে। (রজার, রানওয়ে জিরো টু ক্লিয়ার টু ল্যান্ড বাংলাস্টার টু ওয়ান ওয়ান)

এরপরে টাওয়ার অন্য বিষয়ে কিছু কথা বলে। কিছু কথা হয় টাওয়ারের ভেতরে নেপালি ভাষায়। এ সময় টাওয়ার থেকে ইউএস-বাংলাকে বলা হয়, আপনারা কি বর্তমান অবস্থা বজায় রাখতে পারবেন?

পাইলট: স্যার আমরা কি নামতে পারি (…স্যার আর উই ক্লিয়ার টু ল্যান্ড?)

টাওয়ার: বাংলাস্টার টু ওয়ান ওয়ান আমি আবারও বলছি ঘুরুন। (বাংলাস্টার টুওয়ান ওয়ান আইসে অ্যাগেইন, টার্ন…)

এর মধ্যে কিছু গোলোযোগের মতো শোনা যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে টাওয়ার আবার সক্রিয় হয়ে রানওয়ে বন্ধের ঘোষণা দেয়।


বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:০৪   ৫৫৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

এক্সক্লুসিভ’র আরও খবর


এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
শক্তিশালী প্রসেসরে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনছে মটোরোলা
ভারত ৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপন করল একসঙ্গে !!
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস, পরে কথিত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে পদযাত্রা
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাবমেরিন!
টিকিট দুর্নীতির প্রতিবাদে রনি, সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ট্রাকচাপায় মেয়েসহ তারা তিনজন নিহত; রাস্তায় গর্ভস্থ শিশু ভুমিষ্ঠ
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার

আর্কাইভ