বঙ্গ নিউজ- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় ৬ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা গত ছয় মাসের অধিক সময় ধরে অবস্থান করেছে। এ স্থানের উত্তর দিকে ছোট একটি ছড়া (ছোট খাল) প্রবাহিত হচ্ছে। ছড়ার একপাশে রয়েছে বাংলাদেশ, অন্যপাশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শূন্যরেখাকে আলাদা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। কাঁটাতারের বাইরে এতদিন বন্দিজীবন কাটালেও এখন এ স্থান থেকেও সরতে হচ্ছে অসহায় এ রোহিঙ্গাদের। এদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গত দু’দিন ধরে মাইকিং করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এ স্থান ত্যাগ করার জন্য। তবে ভাগ্যবিড়ম্বিত এ রোহিঙ্গারা কোথায় যাবে জানা নেই তাদের। এখানে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মংডুর তমব্রু, মোদি, রাইমাখালী, চামবলা, পানিরছড়াসহ অন্তত ১২ গ্রামের ১ হাজার ৩২১ পরিবারের এসব রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে সীমান্তের জিরোলাইনে আশ্রয় নিয়েছেন। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এখানে তারা বসবাস করলেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এতদিন কিছু বলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার, হঠাৎ করে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী ও বিজিপির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা চায় না যে এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। প্রকাশ্যে উচ্চারণ না করলেও তারা চায়, রোহিঙ্গারা যেন নো-ম্যানসল্যান্ড ত্যাগ করে বাংলাদেশে চলে আসে।
অবশ্য শুক্রবার অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ প্রতিনিধি দল বলেছে, তারা তমব্রু জিরোলাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের এই আশ্বাসে বিশ্বাস করে না। তারা বলেছেন, দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে তারা। এখন মাত্র ৬ হাজার রোহিঙ্গার ক্ষেত্রে সে দেশের সেনাবাহিনী মানবিক হয়ে উঠবে, এটা তারা বিশ্বাস করে না।
শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরিফ বলেন, সেনাসদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। শুক্রবার ভোর রাতেও ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ হয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের মিয়ানমারে ফেরত যেতে দেবে না। তারা চায় আমরা যেন অন্যদের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ি। তবে আমরা বাংলাদেশে যেতে চাই না। ‘
আরেক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে বর্মী সৈন্যরা কাঁটাতারের ওপর মই দিয়ে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। এ সময়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা চিৎকার শুরু করলে সেনাসদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা ওই স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার জন্য অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। কখনও ইটপাটকেল ছুড়ে মারছে।
দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন জিরোলাইনে আশ্রয় নিয়েছি। সেখানেও যদি থাকতে না পারি তাহলে কোথায় যাব।’
তিনি বলেন, শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গা এখন না পারছে বাংলাদেশে ঢুকতে, না পারছে মিয়ানমার ফিরতে। ফলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির নেতা নুর মোহাম্মদ ও শফিউল আলম জানিয়েছেন, রেডক্রসের দেওয়া মানবিক সহায়তা এবং খাবার নিয়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা বেঁচে আছে। এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের মেরে ফেলতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:২৩ ৪৫৮ বার পঠিত