আল-আমিন আহমেদ,বঙ্গ-নিউজ: মধ্যনগর থানা এবং ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনটি গঠিত। অত্যন্ত সম্পদশালী ও নান্দনিক কিন্তু চরম অবহেলিত হাওড় জনপদ হিসেবে পরিচিত এই সংসদীয় আসনটি। বরাবরই এখানে ছিল উচ্চশিক্ষিত, সুযোগ্য ও সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীর অভাব। আর একারণেই সবচেয়ে বেশি সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকা হলো এটি।
স্বাধীনতার প্রথম দিকে সরকারি সহায়তা এখানে কম ছিল, কিন্তু ১৯৯৬ সাল থেকে ক্রমেই এখানে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা বাড়ছে। কিন্তু নির্বাচিত সাংসদদের অদক্ষতা, নেতৃত্ব দুর্বলতা ও ক্ষেত্র বিশেষে চরম দুর্নীগ্রস্ততার কারণে স্থায়িত্বশীল ও মানসম্মত উন্নয়ন এখানে চোঁখে পড়েনা। এখানে উন্নয়নের নামে যা হয়েছে তা ভয়াবহ – অনেক রাস্তাঘাট যান চলাচলের অনুপযোগী, হাওড় অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে জন চলাচলের কোন পথ নেই বলেই চলে।
বর্তমান সাংসদের বেলায় নেতৃত্ব দুর্বলতা ও দুর্নীগ্রস্ততার ব্যাপক অভিযোগ আছে, তবে তার থেকে অনেক বেশি দুর্নীগ্রস্ততার অভিযোগ পাওয়া যায় বিগত বিএনপির সাংসদের বেলায়। পার্থক্যটা হল বর্তমান সাংসদ সরকারের কাছ তুলনামূলক অনেক বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন কিন্তু সেগুলোকে দায়িত্বশীলতার সাথে এবং পরিকল্পিত ও মানসম্মতভাবে কাজে লাগাতে পারেননি। অ্ধিকন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করে জামাত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোকতা দেয়ার অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। তবে উল্লেখ্য যে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কিছু রাস্তার মানসম্মত সংস্কার কাজ চলছে, হাওড় বাঁধ সতর্কতার সাথে নির্মিত হচ্ছে এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে দূরত্বও নানাভাবে কামানোর চেষ্টা চলছে; কিন্তু বাস্তবে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সাথে দূরত্ব এত বেশি হয়েছে যে তা আদৌ ঘুচবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এই অঞ্চলের মুক্তির জন্য, মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য, এর পরিকল্পিত, স্থায়িত্বশীল ও মানসম্মত উন্নয়নের জন্য এই এলাকার লোকজনকে, বিশেষ করে তরুণদেরকে এখানকার সকলস্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বকে জবাবদিহি করতে হবে। আর এখানে অত্যন্ত দায়িত্বশীল, অধিবাসি, তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল ও আলোকিত নেতৃত্বের খুব বেশী প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ–বিএনপি উভয় দল থেকেই অধিবাসি, প্রতিশ্ররুতিশীল ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা সহজেই ভোটারদের মন জয় করতে পারবে। তবে পর পর দু’বার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায়, বিশেষ করে সাংসদের স্বেচ্ছাচারী আচরণের জন্য ও দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বিরুধের জন্য এনটিইনকামবেন্সি তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই আসন ধরে রাখতে হলে অধিবাসি, তুলনামূলকভাবে তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল ও ক্লিন ইমেজের উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী দেওয়া খুব জরুরি। অধিকন্ত বিবেচনায় রাখতে হবে এখানে শিক্ষার হার কম থাকায় ধর্মীয় চেতনা ও পুরষতান্ত্রিকতা ভোটের হিসেবে দু’টি শক্তিশালী নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণসুরূপ প্রায় এক পঞ্চমাংশ রিজার্ভ মাইনরিটি ভোটব্যাঙ্ক থাকার পরও প্রায়ত জাতীয় পর্যায়ের নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এই আসনে পরাজয় বরণ করেন।
এই আসনে ১৯৭৩ সালে প্রয়াত আবদুল হেকিম চৌধুরী আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে অ্যাডভোকেট সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রয়াত কমরেড বরুণ রায়, ১৯৮৮ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বদরুদ্দোজা আহমেদ সুজা, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট থেকে নৌকা প্রতীকে নজির হোসেন জয়লাভ করেন। পরে বিএনপিতে যোগভউতেরদান করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আবারও নজির হোসেন এমপি হন। এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, ২০০১ সালে বিএনপি থেকে আবার নজির হোসেন ও ২০০৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আবার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
বর্তমানে বাংলাদেশ আময়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আছেন ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহ্বায়ক গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলাম লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালগঞ্জের সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিগত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হক চৌধুরী এবং সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজামান সেলিম।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মানুষের আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি নজির হোসেন, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ডাঃ রফিক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, ও ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালিব খান। প্রধান দু’দল ব্যাতীত আর কোনো দলের কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী গণমানুষের আলোচনায় নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২১:৪৩ ৩১৯৪ বার পঠিত #মনোনয়নের লড়াই