বাউল জগৎ ও একজন সুধীর রঞ্জন সরকার
Home Page » বিবিধ » বাউল জগৎ ও একজন সুধীর রঞ্জন সরকারজীবন কৃষ্ণ সরকার
বাউল শব্দটির সাথেই একটি কি যেনো মায়া, মমতা জড়িত আছে।তাঁরা সাধারণত দেশে দেশে ঘুরে অন্যকে আনন্দ দেয়ার মাঝেই নিজের আনন্দ খুঁজে পান।কি পেল,আর কি আর দিল তা নিয়ে তাঁদের কোন মাথা ব্যথা নেই।বিধির এই দুনিয়ায় তাঁরা যেনো নিজেকে একটু ব্যতিক্রমই ভেবে থাকেন।যন্ত্র সভ্যতার এ যুগে মানুষ যেখানে কেবল নিজের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত এই জায়গাটাতে তাঁরা যেনো একেবারেই নিষপ্রভ।তেমনই একজন ব্যাক্তি বাউল সুধীর রঞ্জন সরকার।
আজ এই সাদা মাঠা মানুষটির কথা
আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।
বংশীকুন্ডা তথা সুনাম
গঞ্জ জেলার মধ্যে যে কজন প্রতি ভাবান বাউল
শিল্পী জন্ম নিয়েছেন তিনি তাঁদের মধ্যে
অন্যতম।হারমোনিয়াম,বেহালা,স্বরাজ, বাঁশি,তবলা
থেকে শুরু করে বাউল জগতের প্রায় প্রতিটি
যন্ত্রই তাঁর দখলে।আমার যত দূর মনে পড়ে আমি
যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ালেখা করি তখন
আমাদের গ্রামে ( বাট্টা) লক্ষী পূজায় বিখ্যাত বাউল শিল্পী
আসমান উড়ির সাথে নারী পুরুষের পালায় তাঁর
পুরুষের ভূমিকার পালাটি আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
উক্ত আসরে তাঁর গানের নান্দনিকতা এলাকার মানুষ
আজো ভুলতে পারেনি,ভুলবেও না।এছাড়াও
জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন বাউলের সাথে
পালাগান করে গ্রাম বাংলার মানুষদের আনন্দ
দিয়েছেন।অন্যতম আসর গুলো হলো- -
রুপনগরে বেগম আনোয়ারার সাথে হযরত আলী
এবং নবীজীর পালা গেয়ে সুনাম কুঁড়িয়ে ছিলেন।
আসরের অন্যান্য শিল্পীরা হলেন বাউল নেচার মিয়া
এবং বাউল আব্দুল হোসেন।এছাড়াও
বংশীকুন্ডায়,মকসুদ পুরে বাউল নেছার মিয়ার সাথে
গান করেছেন এবং বারহাট্টার দশালে বাউল ইউনুসের
সাথে পালাগান করে দর্শক নন্দিত হয়ে বারবার
পুরস্কৃত হয়েছেন।সর্ব শেষ গত ২০০৮ সালের
জাতীয় নির্বাচনের সময় আমাদের বংশীকুন্ডায়,মান
নীয় সংসদ সদস্য জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন
রতন এর নির্বাচনী সভায় প্রায় পঁচিশ হাজার দর্শকের
সামনে গান গেয়ে আবারো প্রতিভার স্বাক্ষর
রাখেন সময়ের অন্যতম গুণীন এই শিল্পী।হে
তিনিই,তবে কোন নাম করা গীতিকারের গান
গেয়ে নয় বরং তাঁর আপন মেধায় স্বরচিত গান
গেয়ে। গানটির খন্ডিত অংশ,……দুই হাজার
আট সালেতে আইল স্বচ্ছ নির্বাচন,নৌকার প্রতীক
নিয়ে আইল মোয়াজ্জেম হোসেন রতন,শেখ
মুজিবর নৌকা গড়তে করলেন বিশাল
আয়োজন,বাংলাদেশের জনগনে গড়লেন একটি
সংগঠন,শেখমুজিবর হেডমেস্তুরী বাইসা দেশের
জনগন,নৌকার প্রতীক নিয়া আইলেন মোয়াজ্জেম
হোসেন রতন।……. হাজারো করতালির আব্দারে
তিনি আরেকটি স্বরচিত গান উপহার দিলেন। গানটির
একাংশ…….. বাংলাদেশের নয়ন মনি ভৈরবের কৃতি
সন্তান, জন্মের মত বিদায় নিলেন মোহাম্মদ জিল্লুর
রহমান, ১৯৫২ সালে হইল ভাষার আন্দোলন,রফিক,শফিক,জব্বার, বরকত প্রাণ দিয়েছেন বিসর্জন,সেই
সময়েও রাষ্ট্রপতির ছিল অনেক অবদান,জন্মের
মতো বিদায় নিলেন মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।…..গান
শেষে সাথে সাথেই মাননী এম. পি মহোদয়
তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং পুরস্কৃত করলেন
উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে।উক্ত অনুষ্টানটির কথা
আজো মানুষ বার বার স্মরন করে।এছাড়াও মা হলো
বন্দী,কলংকিনি বধু সহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক
ও ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চস্ত করেছেন তিনি। গেল বছর
বংশীকুন্ডা শ্যামা পূজায় ” মহিষাসুর বধ” নাটকটি ও মূলত
তাঁর রচনা ও দিক নির্দেশনায় সফল ভাবে মঞ্চস্ত
হয়েছে।তার প্রমান অভিনেতারা অভিনয় কালেই
একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন।তাঁর ভাষায় ” আমি
কোন অর্থের জন্য সংস্কৃতি চর্চা করিনা,আমি
মানুষকে কেবল আনন্দ দানের জন্যই সাংস্কৃতি চর্চা
করি”।
১৯৪৯ সালে মধ্যনগর থানার গোবিন্দ পুর
গ্রামে জন্ম নেয়া বংশীকুন্ডা তথা সুনামগঞ্জ
জেলার এই কৃতি সন্তান জীবনের একটা অংশ
কাটিয়েছেন ভারতীয় স্মরনার্থী শিবির মইলাম
ক্যম্পে।কিন্তু দেশের প্রতি অগাদ ভালবাসা থাকার
দরুন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই তিনি চলে
আসেন নিজ ভূমে।কিন্তুু পাক হানাদারদের অত্যাচারে
বিতাড়িত অন্যান্য পরিবারগুলো গ্রামে ফিরে না অসায়
বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বাট্টা গ্রামে আশ্রয় নেন
নিয়তির সাথে পরাজিত এই মানুষটি।বর্তমানে তিনি এই
গ্রামেই সহজ সরল জীবন যাপন করছেন।গ্রামের
স্মৃতি ভুলতে না পারা এবং মুক্তি যুদ্ধে স্বজন
হারানোর বেদনা থেকেই মূলত তিনি ধীরে
ধীরে প্রবেশ করতে থাকেন বাউল স্বাধনার
আধ্যাতিক জগতে।তাঁই তো তিনি আজো গেয়ে
যান…. অনেকদিন হয় বাড়ি ছাড়া করল দারুন সংগ্রামে ভাই
করল দারুন সংগ্রামে,জন্ম ভূমি গোবিন্দ পুর বাস করি
বাট্টা গ্রামে ভাই, বাস করি বাট্টা গ্রামে।সুনামগঞ্জ জিলা
হইল সিলেট হইল আদি স্থান,ধর্ম পাশা উপজিলা চামরদানি
ইউনিয়ান,পরগনা হয় বংশীকুন্ডা টাঙ্গুয়ার হাওরের
পশ্চিমে।।বুক ভরা দুঃখ আমার দুঃখ বলার জায়গা নাই,নীড়
হারা পাখির ন্যায়ায় উড়িয়া সদায় বেড়াই,আমি কোথায়
যাবো কি করিব এখন বাঁচিব কি সন্ধানে।।ভেবেছিলাম
এ জগতে হয়ে যাবো চিরস্থাই,চেয়ে দেখি খাস
মহলে মালিকানার টিকেট নাই,আমি ভেবে না পাই
কোন দিকে যাই, কোনদিন যে নিবে জমে।।
সুধীর রঞ্জন কেন্দে বলে আমার তো ঠিকানা
নাই,শেষ ঠিকানা হবে সেদিন যেদিন নদীর কূলে
যাই,ও আমি নদীর কূলে গড়বো বাড়ি সুন্দর করে
শ্মশানে,জন্ম ভূমি গোবিন্দ পুর বাস করি বাট্টা
গ্রামে। এছাড়াও তাঁর স্বরচিত যে গানগুলো আবহমান
গ্রাম বাংলার মানুষকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে
অন্যতম গান গুলো হলো,…… দারুন বিধিরে আমার
এজনমে দুঃখরে গেলনা,ও আমার দুঃখে দুঃখে
গেল জনম সুখ শান্তি আর হলোনা,এজনমে দুঃখরে
গেলনা,দুঃখ আমার জনম ভরা,ভাবতে ভাবতে হইলাম
সারা,দুই নয়নে বইছে ধারা বারন একবার হলো না, এ
জনমে দুঃখরে গেলনা।আরো একটি গান.. রাধে
তোমার স্বভাব কিন্তু বেশি ভালনা,মুখে তোমার মধুর
হাসি প্রেমের নমুনা।।.ও তোমার করুন
নয়ন,আকর্ষণে কেড়ে নেও পুরুষের মন যেন
কারেন্টের মতন,নামেতে সরলা তুমি কাজে বুঝলাম
না।রাধে তোমার স্বভাব কিন্তু বেশি ভালনা।…সাংসারিক
দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে উঠা তৃতীয় শ্রেণী
পর্যন্ত পড়া লেখা থেকে ঝড়েপড়া মানুষটি
কখনোই মনোবল ভাঙেননি।তাঁর ভাষায়” দুঃখ তুমি দিয়
প্রভু,সইবার শক্তি দিয় মোরে।” দুঃখের পড়ে সুখ
আসবেই এই বাক্যটিকে তিনি মনে প্রানে বিশ্বাস
করেন।তাই শত অভাব অনটনের মধ্য থেকেও
স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা
অর্জন করবে,প্রতিষ্ঠিত হবে।বিধাতার নিক্তিতে
আজ তাঁর স্বপ্ন প্রায় সফলতার দ্বার প্রান্তে।তিন
ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তাঁর বড় ছেলে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
গণিত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষকতার মহান
পেশায় নিয়োজিত,মেজো ছেলে অর্থনীতি
বিষয়ে সিলেট এমসি কলেজে মাস্টার্স অধ্যয়নরত, এবং বড়
মেয়ে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ২য় বর্ষ, এমসি কলেজ,সিলেট এ
পড়ালেখা করছে,এবং অন্যান্যরাও পড়ালেখা চালিয়ে
যাচ্ছে। তাঁর ভাষায় আমি কোন সন্তানের মালিক
নই,সবি উপরি আল্লার মাল,আমি কেবল রাউখ্খালি করি
মাত্র”।
পিতাঃশ্রী সুরেন্দ্র সরকার( তিনি ও একজন
স্বনামধন্য বাউল ছিলেন) ও মাতাঃ শ্রী উমা রানী
সরকারের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তিনি
সবার বড়ো।অন্যান্যরা হলেন শ্রী সুব্রত
সরকার,শ্রী সুকুমার সরকার,শ্রী কাঞ্চন রানী
সরকার, শ্রী সজু রানী সরকার, শ্রী রতি রানী
সরকার। সাংসারিক টানাপোড়নের মধ্যেই ত্রিশ বছর
বয়সে কলমাকান্দা উপজেলার বেতুয়া গ্রাম নিবাসী
শ্রী মিলন রানী সরকার এর সাথে পারিবারিক ভাবে
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।দীর্ঘ সাংসারিক
জীবনে বার বার ঘাত প্রতিতিঘাত এলেও সাংস্কৃতিক
জগৎ থেকে বিধায় নেননি সংস্কৃতির এই লড়াকু সৈনিক।
তাঁর মুখে প্রায়ই শোনা যায় ” সুখ দুখের মালিক
কেবল বিধাতা তিনি চাইলে হাজার কোটি টাকার
মালিককেউ দুখ দিতে পারেন আবার চাইলে তিনি
বস্তিতে বাসকরা লোকটিকেও সুখী রাখতে
পারেন।তাইতো তিনি জীবন যুদ্ধের সংকট কালে
মনের অজান্তেই হাতে নেন বেহালা, গেয়ে যান
স্বরচিত আবেগময় গান,প্রবোধ দেন নিজেকে, এমন কি জীবনের শেষ বেলাতে এসেও বিশ্রাম না নিয়ে বিভিন্ন কীর্তনে বেহালা সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন আপন মনে।তাঁর সাথে
একান্ত আলাপ কালে জানা যায়,এলাকার জনপ্রতিনিধি বা
বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ এবং মিডিয়া কর্মীদের আশানুরুপ
সহযোগিতার হাত না বাড়ানোয় অনেক কষ্ট সাধ্যের
মধ্যেই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর লেখনী তথা বাউল
সাধনা।তবে তিনি হতাশাগ্রস্থ নন।তাঁর বিশ্বাস আজ
হোক কাল হোক একদিন তাঁর প্রতিভার মূল্যায়ন এ
সমাজে হবেই।তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,সুশীল
সমাজ এবং মিডিয়া কর্মীদের সহযোগিতা পেলে
তাঁর সাংস্কৃতিক সাধনা আরো দৃঢ় ভাবে চালিয়ে যেতে
সহজ হতো বলে তিনি মনে করেন।
আজকের এই দিনে সদা মিষ্টভাষি, সরল প্রাণ এই মহান
কৃতি মানুষটির প্রতি হাজারো শ্রোতা মন্ডলীর পক্ষ থেকে রইল
প্রাণ ঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন,ভালো কাটুক আপনার প্রতিটি মুহুর্ত।
লেখকঃ কবি ও কলামিস্ট
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০২:৫৭ ৭৮২ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)বিবিধ’র আরও খবর
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
দেখা হবে কতো দিনে: রাধাবল্লভ রায়
মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ কামালের জন্মদিন পালন
দেশের ১৫ জেলায় ঝড়বৃষ্টির আভাস
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
ড. ইউনূসের মামলা বাতিল আবেদন শুনানি ১১ আগস্ট
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৩৪; স্বপন চক্রবর্তী
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার
ইসফাহান নেসফে জাহান
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]