বঙ্গ-নিউজঃ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে যুক্তরাজ্য সরকার সরাসরি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে সব ধরনের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করে। এর পর দেশটির পরামর্শানুযায়ী বাংলাদেশ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ঢেলে সাজায় নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিরাপত্তা জোরদারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কার্গো ভিলেজে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘রেড লাইন’কে নিয়োগ করে বাংলাদেশ। প্রায় দুই বছর পর যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ বিমানে সরাসরি তাদের দেশে পণ্য পরিবহনের সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। আজ রবিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে সব ধরনের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করায় পণ্য পরিবহন বাবদ বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ বছরে কমপক্ষে একশ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদানুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় বাংলাদেশ কতটুকু পরিবর্তন এনেছে তা সরেজমিনে দেখার জন্য গত নভেম্বরে দেশটির একটি নিরাপত্তা টিম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে। ওই নিরাপত্তা টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাজ্য সরকার কার্গো বিমানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরই কিছুদিন আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে যান।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৮ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য সরকার ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ওইদিন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সেখানে পূরণ করা হয়নি। তখন এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সরকারকে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানায়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, সরকার আশু ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ওই নিষেধাজ্ঞা আসার পর তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আমাদের সময়কে জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর পরই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়ন ও কার্গো কমপ্লেক্সকে ঢেলে সাজাতে ব্রিটিশ নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থাকে নিরাপত্তাব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানায় তারা। ব্রিটিশ প্রস্তাবের ভিত্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রীকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদ-ে উন্নীত করতে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্যের রেড লাইন এভিয়েশন সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে নিয়োগ করে। ২০১৬ সালের মার্চেই ব্রিটিশ ওই নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাপনা তদারকি, স্ক্রিনিং ব্যবস্থা পরিচালনা এবং বিদ্যমান জনবলের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সরকারের চাহিদানুযায়ী বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। স্থাপন করে অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। কার্গো ভিলেজে বহিরাগত প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৯:১৭ ৫১৯ বার পঠিত