বঙ্গ-নিউজঃ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালামাল (ব্যাগেজ) নেওয়ার সময় প্রবাসী যাত্রীরা তালা ভাঙা পান এবং পণ্যও খোয়া যায়। পাসপোর্ট ছাড়া প্রবাসী যাত্রীদের মালামাল সরবরাহের অভিযোগ পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগ। এ জন্য কর্তব্যরত কর্মীকে ৫০০ টাকা দিয়ে মালামাল বুঝে নেওয়ার অভিযোগ পায় টিআইবি।
গত বৃহস্পতিবার ‘শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম: যাত্রীসেবা কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) জাফর সাদেক চৌধুরী এসব তথ্য প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা–সংক্রান্ত ১৫টি সমস্যা চিহ্নিত এবং সমাধানে ১৩টি সুপারিশ পেশ করেন।
গবেষণায় বলা হয়, অনেক সময় বিদেশফেরত যাত্রীরা মালামাল (ব্যাগেজ) পাওয়ার সঠিক সূচি পান না। একজন যাত্রী মালামালের জন্য কমপক্ষে চার দিন বিমানবন্দরে গিয়েছেন। এ ছাড়া ওয়্যারহাউস (মালামাল রাখার জায়গা) ছোট হওয়ায় বাইরে মালামাল রাখতে হয়। ফলে মালামালের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়।
আবুধাবিপ্রবাসী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নুরুল আকতার এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর নিয়ে টিআইবির গবেষণা শতভাগ সত্য। ব্যাগেজে তালা ভাঙা কিংবা প্রবাসী যাত্রীদের হয়রানি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুলিশ, কাস্টমস, সিভিল এভিয়েশনসহ প্রতিটি বিভাগের কিছু লোক যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকায় একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র তৎপর, যারা যাত্রী ও ভাড়া ঠিক করে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। ফলে প্রবাসী যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারওয়ার-ই জামান বলেন, বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে নিশাত ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দালাল চক্রের অভিযোগ আগে ছিল, এখন নেই। নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। বেশি ভাড়া দাবি করার অভিযোগ কেউ দিলে আমরা নিশাত ট্রান্সপোর্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
গবেষণায় বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ফ্লাইটগুলোর সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতে বেশির ভাগ যাত্রীকে সনাতনী পদ্ধতিতে (ম্যানুয়াল) তল্লাশি করা হয়। যেমন যাত্রীর ব্যাগ বিক্ষিপ্তভাবে খুলে ফেলা হয় এবং তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনে এসব হয়রানির উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, কিছুদিন আগে একজন যাত্রী ওভেন নিয়ে আসেন। কাস্টমসের লোকজন তা খুলতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, ‘ভাই, খোলার দরকার নেই। কত লাগবে বলেন, আমি টাকা দেব। প্যাকেট খুললে আবার প্যাক করবে কে?’ তখন দুই হাজার টাকা দিয়ে ওই যাত্রী রক্ষা পান।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এ কে এম নুরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, টিআইবি ঢালাওভাবে অভিযোগ করেছে। আমরা তাদের অভিযোগের প্রতিবাদ দেব। কারণ, বিমানবন্দরে স্ক্যানার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষার পর কাস্টমসের লোকজন যাত্রীদের মালামাল ছাড়ে।
গবেষণায় বলা হয়, একই সময়ে একাধিক এয়ারলাইনসের উড্ডয়ন ও অবতরণ নির্ধারিত থাকলে অভ্যন্তরীণ রুটের সাতটি কাউন্টারকে যৌথভাবে ব্যবহার করতে হয়। বিমানবন্দরে পরিধি কম, সাধারণ যাত্রীদের জন্য কোনো লাউঞ্জ নেই। এই বিমানবন্দরে মাত্র দুটি বোর্ডিং সেতু। দুটির বেশি উড়োজাহাজ সেতুতে সংযোজন করা যায় না। দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বোর্ডিং সেতু ব্যবহার করে না। ফলে যাত্রীদের উড়োজাহাজের র্যাম্প থেকে হেঁটে আসতে হয়।
বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক শুভ্র কান্তি সেন শর্মা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বোর্ডিং সেতু খালি পেলেই আমরা ব্যবহার করি। বেশির ভাগ সময় খালি পাওয়া যায় না।’
গবেষণায় বলা হয়, বিমানবন্দরে তথ্য ডেস্ক বা তথ্য কর্মকর্তা নেই। প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে যাত্রীরা সমস্যার মুখে পড়ে।
অবকাঠামো সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিমানবন্দরে ছয় লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়া সম্ভব। অথচ গত বছরে সাড়ে ১২ লাখ সেবা পেয়েছে। টার্মিনাল ভবন ছোট হওয়ায় যাত্রী ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারণে সনাতনী পদ্ধতিতে মালামাল ব্যবস্থাপনার কাজ করতে হচ্ছে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার-ই জামান বলেন, ছয় লাখ যাত্রী ব্যবহারের জন্য বিমানবন্দর বানানো হয়েছে। গত বছর ১৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। তাই বিমানবন্দরের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। রানওয়ের আয়তন বাড়ানোর কাজ চলছে। হেল্প ডেস্ক স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:১৬:২০ ৫৯৬ বার পঠিত