বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানী দিল্লিতে যখন হাসি হাসি মুখে নিজের সরকারের অর্থমন্ত্রীর বাজেট শুনছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ঠিক তখনই রাজস্থান থেকে দুটি লোকসভা ও একটি বিধানসভার উপনির্বাচনে পরাজয়ের সংবাদ অপেক্ষা করছিল তার জন্য। গুজরাটে মোদির দুর্গে যা পারেননি, রাজস্থানের মরুভূমিতে ঠিকই জয়ের ফুল ফোটালেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের শৌর্যের কাছে তিনটি আসনেই কুপোকাত হলো ‘স্বচ্ছ ভারত’ এর প্রবক্তা মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
রাজস্থানে যখন ভোট গণনা চলছে, সে সময় ২০১৯ সালের বাজেটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ঝরে পড়ছিল মোদি ও তার লোকদের কণ্ঠে। মোদি বলছিলেন, এ রকম গণমুখী বাজেট আর হয় না। তবে এর পরই পেলেন পরাজয়ের দুঃসংবাদ।
উপনির্বাচনে রাজ্যের দুটি লোকসভা ও একটি বিধানসভা আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। এর ফলে সামনের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বর্তমান লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর হুমকিতে পড়েছে শাসক দল বিজেপি। তিনটি আসনে জয়ের পর লোকসভায় কংগ্রেসের আসন বেড়ে দাঁড়াল ৪৮ এবং বিজেপির কমে হলো ২৭৪। আর দুটি আসন কম হলেই লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে বিজেপি। এমনিতেই মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও অল্প্রব্দপ্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টি বিজেপির জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে বসেছে মোদির দল।
চার বছর আগে রাজস্থানে ২৬টি লোকসভা আসনের একটিও বিরোধীরা পায়নি। সব ক’টিই গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। সেই রাজ্যে দুটি লোকসভা ও একটি বিধানসভা আসন ছিনিয়ে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিল, বিধানসভার ভোটে মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের পক্ষে আরও একবার জেতা কঠিন। এই দুই লোকসভা আসনের মধ্যে আলোয়ারে মুসলিম জনসংখ্যা ২ লাখ। গরু পাচারকে কেন্দ্র করে পেহলু খানকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল এখানেই। পাশাপাশি আজমেরের ২ লাখ ভোটার রাজপুত, যারা ‘পদ্মাবত’ সিনেমার মুক্তি ঠেকাতে না পারায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খাপ্পা। এই রাজপুতরা এবার কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উৎফুল্ল কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়- এই তিন রাজ্য থেকেই তারা বিজেপিকে সরিয়ে দেবে।
কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর রাজস্থানে প্রথম সাফল্য পেয়ে রাহুল গান্ধীর টুইট, ‘ওয়েল ডান রাজস্থান কংগ্রেস! রাজস্থানের মানুষ প্রত্যাখ্যান করল বিজেপিকে।’
আরেক নেতার ব্যাখ্যা, আজমিরে রাজপুতদের অসন্তোষের খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। আলোয়ারে দু’দলেরই লড়াই ছিল যাদবদের মধ্যে। কিন্তু প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হয়ে গেছে বিজেপির।
যদিও বাজেটের দিন এই পরাজয়ে বাড়তি তাৎপর্য দেখছে কংগ্রেস। দলের বেশ কয়েকজন নেতার দাবি, প্রধানমন্ত্রী যে ভোট এগিয়ে আনতে চাচ্ছেন, তার অন্যতম কারণ দেশজুড়ে মানুষের সমর্থন ক্রমাগত কমছে। সে কারণে বাজেটের মাধ্যমে নতুন করে হাওয়া তুলতে চাচ্ছেন মোদি।
এক নেতার কথায়, হারের ভয়েই কি বিজেপির দোসর নির্বাচন কমিশন বাজেটের দিন ফল ঘোষণার দিন স্থির করেছিল? যাতে বাজেট ঘোষণায় ঢেকে যায় পরাজয়!
এদিকে কেন্দ্রীয় বাজেটকে ‘সংখ্যার ভোজবাজি’ বলে কটাক্ষ করলেন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা যশোবন্ত সিনহা। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ মোদি সরকার।
মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের একটি আন্দোলনে অংশ নিতে এসেছিলেন যশোবন্ত। সেখানেই তিনি জানান, কৃষক কল্যাণে কোনো প্রকল্পের সংস্থান নেই এবারের বাজেটে। তার মতে, নির্বাচনের বছরে বাজেট কৃষি ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে সুখবর বয়ে আনবে- এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু জেটলির বাজেট অত্যন্ত হতাশাজনক। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সুরাহা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করল কেন্দ্র। সাধারণ মানুষের বদলে বড় করপোরেটদের করে সুরাহা দেওয়া হলো। অর্থমন্ত্রী আজও পরিস্কার করে জানালেন না, নোট বাতিল থেকে কী লাভ হলো।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৯:২৭ ৫৬৪ বার পঠিত #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world newspaper