হিন্দু পুরাণঃ সাবিত্রী উপাখ্যান

Home Page » সাহিত্য » হিন্দু পুরাণঃ সাবিত্রী উপাখ্যান
সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৮



হিন্দু পুরাণঃ সাবিত্রী উপাখ্যান

বঙ্গ-নিউজঃ মদ্র দেশের রাজা ছিলেন অশ্বপতি। তাঁর স্ত্রী মালবী। তাঁদের কোন সন্তান ছিলো না। কিন্তু রাজার খুব আফসোস একটা সন্তানের। সন্তানের প্রত্যাশায় তাঁরা সাবিত্রীদেবীর পুজা দিলেন। সাবিত্রীদেবী খুশি হয়ে বর দিলেন এক কন্যা সন্তানের। সূর্যের অধিষ্ঠাত্রী সাবিত্রীদেবীর বরে জন্ম বলে কন্যার নাম রাখলেন সাবিত্রী। দেখতে দেখতে সাবিত্রী বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠলেন। অশ্বপতি কন্যাকে নিজেই নিজের উপযুক্ত পাত্রের অন্বেষণ করতে বললেন। সাবিত্রী বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসে পিতাকে জানালেন, শাল্ব দেশের দ্যুমৎসেনের পুত্র সত্যবানকে তিনি মনে মনে স্বামী হিসেবে বরণ করেছেন। অন্ধ হয়ে দ্যুমৎসেন তখন রাজ্য হারিয়ে বনবাস করছেন। রাজা অশ্বপতির ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। অশ্বপতির সভায় উপস্থিত ছিলেন দেবর্ষি নারদ। রাজা তাঁর পরামর্শ জানতে চাইলেন। নারদ জানালেন আরো ভয়ানক কথা, সত্যবান সুদর্শন, সত্যবাদী, দাতা ও ব্রাহ্মণসেবী। কিন্তু তার আয়ু আর এক বছর। এক বছর পরই তার মৃত্যু ঘটবে।

অশ্বপতি সে কথা শুনে কন্যাকে অন্য কোন পাত্রকে বরণ করতে বললেন। কিন্তু সাবিত্রী রাজি হলেন না। সবিত্রী বললেন, ‘মনে মনে যাকে একবার স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়েছি। তিনিই আমার স্বামী। গায়ের অলঙ্কার পছন্দ না হলে ফেলে দেয়া যায়, কিন্তু মনের অলঙ্কার কী করে ফেলবো, পিতা? কঠিন দাগ রয়ে যাবে যে! হয়তো আর কেউ জানবে না, কিন্তু আমিতো জানবো, মনে মনে একজনকে গ্রহণ করে পরে অন্যজনের সাথে সংসার পেতেছি। যাঁকে মনেপ্রাণে প্রথমে গ্রহণ করেছি, তিনিই আমার স্বামী। আমি বহুচারী হতে পারবো না।’ কন্যার যুক্তি মেনে নিলেন অশ্বপতি। সত্যবানের সঙ্গেই সাবিত্রীর বিয়ে হল। সাবিত্রী হিসাব রাখছিলেন, কখন এক বছর পূর্ণ হয়। যখন একবছর পূর্ণ হতে আর চার দিন বাকী তখন তিনি উপবাস শুরু করলেন। যে দিন সত্যবানের মৃত্যুর দিন সেদিন সাবিত্রী সত্যবানের সাথে সাথে থাকলেন প্রতি মুহূর্ত। সে দিন সত্যবান বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতে বনের গভীরে যাচ্ছেন দেখে সাবিত্রীও তাঁর সঙ্গ নিলেন। যদিও সাবিত্রী উপবাসে দুর্বল দেখে সত্যবান নিতে চাইছিলেন না, কিন্তু সাবিত্রী তা মানলেন না। সত্যবানের সাথেই গেলেন। এক মুহূর্তের জন্যও তাকে চোখের আড়াল হতে দিলেন না। কাঠ কাটতে কাটতেই সত্যবান অসুস্থ বোধ করলো। বললো প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। সাবিত্রী সত্যবানকে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে বললেন। সত্যবান তাই করলো। শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। তখন এক ভয়ঙ্কর পুরুষ এসে একহাতে সত্যবানের প্রাণ আর হাতে প্রাণহীন দেহ নিয়ে চলতে শুরু করলে সাবিত্রীও কোন কথা না বলে তাঁর পিছু পিছু চলতে শুরু করলেন। যম সাবিত্রীকে বললেন যে, স্বামীর প্রতি ওঁর যা কর্তব্য তা সম্পন্ন হয়েছে, এখন বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু সাবিত্রী থামলেন না। যমকে বললেন, স্বামীছাড়া কোন নারীর পক্ষে নির্জন বনে ধর্ম মেনে চলা সম্ভব না। তারপর তিনি যমকে ধর্মকথা শোনাতে লাগলেন। যম তাতে তুষ্ট হয়ে সত্যবানের জীবন ছাড়া আর যে কোনও বর চাইতে বললেন। সাবিত্রী তখন যমের কাছে তাঁর শ্বশুরের অন্ধত্ব দূর করে দিতে বললেন। যম সেই বর দিয়ে ক্লান্ত সাবিত্রীকে ফিরে যেতে বললেন।

কিন্তু সাবিত্রী চলতেই থাকলেন। বললেন যে, প্রাণপতির কাছাকাছি থাকলে কোন স্ত্রী কখনো ক্লান্ত হয় না। এছাড়া যম সজ্জন, সুতরাং উনি সাধুসঙ্গ করছেন। যম তখন তুষ্ট হয়ে পতির জীবন ছাড়া আরেকটি বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী এবার বর চাইলেন যেন ওঁর শ্বশুর পুনর্বার তাঁর রাজ্য লাভ করুন। যম সেই বর দিলেন তারপর সাবিত্রীকে বললেন আর পরিশ্রম না করে ফিরে যেতে। সাবিত্রী না ফিরে যমকে সনাতন ধর্মের কথা শোনালেন। যম তাতে প্রীত হয়ে সাবিত্রীকে পতির জীবন ছাড়া অন্য কোনও বর চাইতে বললেন। সাবিত্রী বললেন যে, সত্যবান না থাকায় এখন ওঁর পিতা পুত্রহীন - তাঁর যেন শতপুত্র হয়। যম বর দিয়ে বললেন, অনেক দূরে চলে এসেছো, এবার ফিরে যাও সাবিত্রী। সাবিত্রী বললেন, এটা আমার কাছে দূর নয়, আমি আমার স্বামীর সাথে সাথেই রয়েছি। তারপর যমের প্রশংসা করে বললেন যে, যম সমবুদ্ধিতে প্রজাশাসন করেন বলে তিনি ধর্মরাজও। যম হলেন সজ্জন। নিজের চেয়েও সজ্জনদের উনি বেশি বিশ্বাস করেন। সুতরাং নিজের ক্ষতি নিয়ে তাঁর কোন দুশ্চিন্তা নেই। যম খুশি হয়ে বললেন, সত্যবানের জীবন ছাড়া তিনি আরেকটি বর দিতে চান। সাবিত্রী এবার চাইলেন, ‘আমার গর্ভে যেন সত্যবানের ঔরসে বলশালী শতপুত্র হয়’। যম সাবিত্রীর প্রার্থিত বর দিয়ে বললেন, ধর্মকন্যা, এবার ফিরে যাও। কিন্তু সাবিত্রী আবারো যেতে থাকলেন আর ধর্মকথা শুনাতে থাকলেন। সাবিত্রীর ধর্মসম্মত কথা শুনে যম খুব সন্তুষ্ট হয়ে আর একটা বর দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সাবিত্রী বললেন, ‘সত্যবান জীবন লাভ করুন। পতিহীনা হয়ে আমি বাঁচতে চাই না।’ যম খুশি হয়ে সেই বর দিয়ে সত্যবানকে রেখে চলে গেলেন। ধর্ম দিয়ে, সততা দিয়ে সাবিত্রী তাঁর স্বামীর জীবন রক্ষা করলেন। স্বামীর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা তাঁকে অমর করে রেখেছে সতী নারী হিসেবে। পতিপরায়ন সতী নারীকে লোকে এখনো বলে- সতী সাবিত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫২:৪১   ১২০১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ