‘উপাচার্য উপাখ্যান –৮ ‘ আব্দুল বায়েস

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘উপাচার্য উপাখ্যান –৮ ‘ আব্দুল বায়েস
বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৮



ছবি সংগৃহীতবঙ্গ-নিউজঃ প্রজাপতির প্রথম স্তর শুয়ো পোকা ধরতে কেউ সাহস পায় না কিন্তু সে পোকা যখন পাকাপোক্ত একটা প্রজাপতি রূপে আবির্ভূত হয়ে পাখা মেলে, তখন শিশুরাও তাকে ধরার জন্য এগিয়ে আসে । বিবর্তন বা রুপান্তর এমনি হয়।

জাহাঙ্গিরনগরের সাথে আমার সম্পর্কটা অনেকটা ওই রকম । যারে নিন্দে তারে পিন্দে। বাবা-মার কথায় মেয়েটি ছেলেটিকে গ্রহণ করে যদিও ছেলেটি তার পছন্দের ছিলনা । পরে দেখা গেল যে দিন শেষে তারা সুখী দম্পতি। প্রথম দিকে ক্যাম্পাসে যেতে চাইনি কিন্তু গিয়ে তো তার প্রেমে মজে গেলাম ।

ছবি সংগৃহীত

১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে আমার যোগ দেবার কালে বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স মাত্র চার কি পাঁচ বছর । শিশুর মতো হাঁটি হাঁটি পা পা। ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা –কর্মচারী মিলে হাজার খানেক আর শ খানেক শিক্ষক হবে। মোট আয়তন ৭৭০ একর কিন্তু পরবর্তীকালে পিএটিসি ৫০ একর নিয়ে নিলে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭২০ একর । আশা করি ওটা এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত আছে ।

কথায় বলে, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত । সে সময় জাবির দৌড় ছিল উত্তরে প্রান্তিক গেইট , দক্ষিণে বটতলা আর পশ্চিমে আল বেরুনি হল তথা পুরনো কলা ভবন ।

অবশ্য দক্ষিণের প্রায় শেষ মাথায় অনেকটা ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত এবং ভুতুড়ে ভবন মুসাররফ হুসেন হলটা ছিল। সেই সময় সর্বসাকুল্যে দুটো ছেলেদের ও দুটো মেয়েদের হল ; তখনকার ৭৭০ একর জায়গার এক-পঞ্চমাংশ ব্যবহৃত ছিল কিনা সন্দেহ আছে। সারা ক্যাম্পাসে বাতিগুলু যেন জোনাকির মতো মিটিমিটি জ্বলত । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেই ল্যাম্প পোস্টের নিচে পড়তেন অথবা ্মুল্লা নাসিরুদ্দিন যে ল্যাম্প পোস্টের নিচে হারানো চাবি খুঁজতে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি, জাবির তখনকার লাইট পোস্ট অনেকটা ওইরকমের – না আলোর আঁধারের । ২০০০ সালে আমি ভিসি হবার পর তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে ধরে সারা ক্যাম্পাসে সোডিইয়াম লাইট বসালাম।

ছবি সংগৃহীত

পঁচাত্তর সালে জাবি বলতে বড় লেকটার পাশে পুরনো কলা ভবন ও তার আশপাশ । দুইতলা সিরামিক ইটের দালানের ভেতর ৬-৭ টা বিভাগ । পাশে কয়েকটা পাকা ‘ছাপরার’ ভেতর বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ – রসায়ন, পদার্থ , পরিসংখ্যান । আল বেরুনি হল সংলগ্ন ভবনটিতে সমাজ বিজ্ঞান – অর্থনীতি , ভূগোল ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান। । সেই সমাজ বিজ্ঞান ভবনটির ঢোকার পথে ডান দিকে ভিসি অফিস, বা দিকে ক্লাব ও লাইব্রেরী । ভেতরে খালি জায়গাটুকুতে একমাত্র মঞ্চ যেখানে নবিন বরণ থেকে বধূ বরণ সব হতো । প্রয়াত প্রখ্যাত সেলিম আল দিন ও হুমায়ূন ফরিদি বেড়ে উঠেছিলেন ওখানটায় । অন্যান্য সব অফিস তখন বটতলায় – এখন যেটা পরিবহন চত্বর । বর্তমান কালের তুলনায় সবই রূপকথার মত শোনাবে ।

ছবি সংগৃহীত
আগেও বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যোগদানের সময় ভিসি ছিলেন ডঃ এনামুল হক। বাংলা ভাষায় বিশাল বিশারদ , পণ্ডিত , বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত ও উদ্বুদ্ধ প্রাণ। খাঁটি চাট গাঁয়ের ভাষায় স্পেডকে স্পেড বলতেন তাতে কে কি মনে করলো না করলো মাথা ঘামাতেন না । পুনরুক্তি হলেও বলতেই হচ্ছে, একবার আমরা কজন তার কাছে বেতন বৃদ্ধির আবদার করতে গেলাম। বসতে তো বললেনই-না, তার ওপর আঞ্চলিক ভাষায় খানিকটা ধমকের সুরে সুধালেন, ‘ইগ গে যে বেতন পর তয়ার যদি ন পোষাই য-গই । বহুদ মানুষ আছে ত লাইন দরিয়া মাস্টর অইবার লাই ‘ (এই বেতন পছন্দ না হলে চলে যেতে পার; বহু লোক লাইন দিয়ে আছে শিক্ষক হবার জন্য )।

ছবি সংগৃহীত
কৃষি অর্থনীতির একটা বিখ্যাত তত্ত্ব হচ্ছে ক্ষুদ্র চাষি বড় চাষির চেয়ে দক্ষ । কম জমি, কম উপকরণ কিন্তু খানায় সদস্য সংখ্যা বেশি বলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র সব চেয়ে বেশি উদ্যোগী ও উদ্যত হয় । আবার একত্রে থাকে বলে সদস্যদের মধ্যে মিল মহব্বত ভাগাভাগি বেশি । জাবি অনেকটা তেমনি ছিল। কম জায়গা, কম উপকরণ তাই পারস্পরিক বোঝাপড়া , সুখদুঃখ শেয়ার করার প্রবণতা থাকতো বেশি । শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী , কর্মকর্তা-কর্মচারী একই বাসে যাতায়াত করতো । গুরু বাসে উঠলে শিস্য সীট ছেড়ে দিত; আবার শিস্য রাস্তায় থাকলে গুরু বাস থামায়ে তাকে তুলে আনতেন । এক সাথে চলত খেলাধুলা, গানবাজনা, হাসাহাসি এবং, প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাহাস । এমনকি স্যারদের হাঁড়ির খবর থাকতো ছাত্রছাত্রীর কাছে।

ছবি সংগৃহীত
মোট কথা, একটা সমাজবাদী আবহ বিরাজ করত। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সেই দিন দূরে চলে যেতে থাকে । বিশ্ববিদ্যালয় বড় ও বৈশ্বিক হয়ে । গুরুগিরির জায়গা নেয় ‘দাদাগিরি’ । নাড়ীর টানে টান পড়তে শুরু করেছে।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস গুরুশিষ্য সম্পর্ক শীতল করে । বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আকর্ষণ গুরুকে ক্যাম্পাসে ‘অতিথি পাখির’ মর্যাদায় বসায়।
চিনা একটা প্রবাদ বলে, খোলা জানালা দিয়ে নির্মল বায়ু যেমন আসে তেমনি ঢোকে মশা মাছি। এক সময় ছিল শুধু নির্মল বায়ু; এখন তার সাথে মশা ও মাছির উপদ্রব । সব আছে যেন সুখ নেই। ঐ বিখ্যাত গানটার মত অবস্থা আর কি–
‘ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসল্ মান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
………………………
মানুষ ছিল সরল ছিল ধরম বল
এখন সবাই পাগল বড়লোক হইতাম ।

ছবি সংগৃহীত

সুত্র অধ্যাপক আব্দুল বায়েস

সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আশুলিয়া,সাভার ঢাকা

 

বাংলাদেশ সময়: ৮:০৫:০৯   ১১৬৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ