বঙ্গ-নিউজঃ সাতক্ষীরার কুখরালীর শেখ মোখলেছুর রহমান জনির ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় থানায় মামলা বা জিডি না নেওয়ায় জেলার সদর থানার পুলিশ দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা ও অবহেলা দেখিয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। পিবিআই বলছে, এটা শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মোটেই কাম্য নয়।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনটি গতকাল রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে। জনি নিখোঁজের ঘটনা পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করতে গত বছরের ১৬ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট জনি ‘নিখোঁজ’ হন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। আদালত কাল মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে দায় এড়াতে পারে না। কেননা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর কোনো অপরাধী চক্র করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করা। অন্যথায় এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা কিংবা বানোয়াট হলে তা প্রমাণ করার দায়িত্বও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার সদর থানা–পুলিশের তৎকালীন ওসি মো. এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল এবং পরবর্তীকালে ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লাসহ অন্যরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়নি। উল্টো পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে পিবিআই।
পিবিআই বলছে, জনির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কোনো অপরাধী চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা প্রমাণ করা যায়নি। তা ছাড়া তৎকালীন ওসি মো. এমদাদুল হক শেখের পরবর্তী ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা তাঁর সময়কালে অভিযোগের বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনির প্রকৃত অবস্থান জানার একটি সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় বলা হয়, থানায় রক্ষিত সকল রেজিস্ট্রার পর্যালোচনাকালেও থানা হেফাজতে ভিকটিমকে রাখার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় না। ফলে ওই এসআই হিমেল জনিকে গ্রেপ্তারপূর্বক থানা হেফাজতে রাখার বিষয়টি অস্পষ্ট। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষী বলেনি জনিকে থানায় ধরে আনা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, জনির খোঁজ না পেয়ে তাঁর স্ত্রী জেসমিন নাহার গত ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ব্যাখ্যা জানাতে নির্দেশ দেন। এরপর প্রতিবেদন জমা পড়ে। এতে বলা হয়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আদালত বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুসারে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদকে ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ কর্তৃক জনিকে গ্রেপ্তার ও তিন দিন পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে পরবর্তীকালে অস্বীকারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এর আগে জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার বলেছিলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে তাঁর স্বামী মোখলেছুরেকে আটক করেন সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল হোসেন। ওই রাতে তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি করে সদর থানা-পুলিশ। ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট থানায় গিয়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে খাবার দিয়ে আসেন। ৮ আগস্ট থানায় গিয়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। থানা থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান জনি নামে থানায় কেউ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৮:৫৭ ৫৪৭ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News