বঙ্গ-নিউজঃ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারকচিহ্ন যশোর-বেনাপোল সড়কের ঐতিহাসিক প্রায় দ্বিশতবর্ষী গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ। আমলা থেকে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী থেকে সাংবাদিক সবাই একবাক্যে গাছগুলো কেটে ফেলার ‘চূড়ান্ত রায়’ সড়ক বিভাগের হাতে তুলে দিয়েছেন। উন্নয়নের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী এমন উদ্যোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে। সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশবাদীরা সরকারি এমন উদ্যোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসার সম্প্রসারণ, বেনাপোল সীমান্তের গুরুত্ব বিবেচনায় সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার বিকল্প নেই। কিন্তু গাছ কেটে উন্নয়ন দেখতে চান না তারা। ঐতিহাসিক যশোর রোডের গাছ কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বেসরকারি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ মো. মহিবুল্লাহর পক্ষে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত জাহান আইনি নোটিশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির যশোর সফরের ব্যাপারে বঙ্গভবনে সভা করে ফিরছি। নোটিশ পাবার বিষয়টি যশোরে ফিরে বলতে পারব।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে যশোর রোড সমপ্রসারণের কাজ মামলায় আটকে রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন ট্রাইব্যুনালে আর্জি জানানো হয়েছে ওই গাছগুলোকে হেরিটেজ তকমা দিয়ে কাটা যেন বন্ধ রাখা হয়। তার পরিবর্তে বিকল্প পথ নিয়ে চিন্তাভাবনা যেন করা হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২১ মার্চ একনেকের সভায় ৩শ’ ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল জাতীয় সড়কের (দড়াটানা-বেনাপোল পর্যন্ত) ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। মহাসড়কের প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হবে। একইসঙ্গে সড়কের উভয়পাশে এক মিটার করে মাটির জায়গা রাখা হবে। এতে সড়কের প্রস্থ দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৩ মিটার। সব মিলিয়ে রাস্তার দুইপাশে পাঁচ মিটার সম্প্রসারণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে মহাসড়কের উভয় পাশের মোট ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটতে হবে।
গত ৬ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন কিন্তু সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করতে না পারায় উপস্থিতির সাক্ষর করেননি, এমন একজন কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হলো এমপি থেকে শুরু করে সাংবাদিক পর্যন্ত সবাইকে আগেভাগে ম্যানেজ করিয়ে সভায় আনা হয়েছে। সবাই যেন একে একে আত্মাহুতি দিলেন। মনের কষ্টে আমি সইটুকু না করে নিরব প্রতিবাদ জানালাম।’ ওই সভায় তিনজন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সর্বসম্মতিক্রমে গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
মাটি পরীক্ষার পর যশোর রোড সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পেট্রাপোল সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ শহরে ৩০-৪০টি শতবর্ষী প্রাচীন গাছ কাটা বন্ধে পরিবেশবিদরা আন্দোলন শুরু করেন। কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানান। সেই আর্জির জেরেই বন্ধ হয়েছে কলকাতা অংশের গাছ কাটা।
কলকাতার প্রস্তাবিত সম্প্রসারণে দু’লেনের রাস্তা করার কথা ছিল মধ্যমগ্রাম থেকে বনগাঁ শহর পর্যন্ত। পথে বারাসত, হাবড়া ও বনগাঁয় হওয়ার কথা ছিল ফ্লাইওভার। আদালতে আবেদনের কারণে সম্প্রসারণ বন্ধ রয়েছে।
অবশ্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ইত্তেফাককে বলেন, গাছের কারণে দুর্ঘটনায় অনেক মৃত্যু হচ্ছে। যে ঐতিহ্য মানুষের জীবন নেয়, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই না। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোড সেইফটির পয়েন্ট অব ভিউ থেকে গাছ অবশ্যই কাটতে হবে।
যশোর মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছোলজার রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সড়ক যদি দুর্ঘটনার কারণ হয়, তবে সড়কের বিকল্প হিসেবে বৃটিশ আমলে নির্মিত রেললাইন ডবল লেন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।
জনউদ্যোগের আহ্বায়ক এমআর খায়রুল উমাম বলেন, এতগুলো গাছ কেটে ফেলা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। যশোরবাসী ঐতিহ্য রক্ষায় সোচ্চার নয়। এজন্য একে একে সব ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৮:১৫ ২৮০১ বার পঠিত #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world newspaper