বঙ্গ-নিউজঃ চুক্তি অনুযায়ী ৯ কোটি নাগরিকের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) তুলে দিতে পারেনি ফ্রান্সের কোম্পানি ‘অবার্থু’র টেকনোলজিস’। সে জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে দেশেই স্মার্টকার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফ এর কাছ থেকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ স্মার্টকার্ড তৈরিতে যেতে পারবে বিএমটিএফ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে। ফলে সব নাগরিককে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই স্মার্টকার্ড পাবে। হয়তো সে বছর জুনের মধ্যেই নতুন দেড় কোটি ভোটারকেও স্মার্টকার্ড দেওয়া শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটি এবং ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাকী ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
২০১২ সালের পরে ভোটার হওয়া নাগরিক যারা এনআইডি পায়নি তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব নাগরিকের হাতে কোনো এনআইডি নেই। ফেব্রুয়ারি থেকে তাদেরকে আপাতত আগের লেমিনেটেড কার্ড দেওয়া হবে এবং যেহেতু আমরা শিগগিরই সব নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দিয়ে দেবো তাই এই কার্ডের মেয়াদ হয়তো দুই বছর করা হবে। কারণ এরপর আর এই কার্ডের প্রয়োজন হবে না। ২০১৯ সালের জুনের পর এমন কোনো ভোটারকে পাওয়া যাবে না, যার হাতে স্মার্টকার্ড থাকবে না।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্স একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৯ কোটি ভোটারকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার চুক্তি হয়। কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দিতে না পারার শঙ্কায় পরে এর মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপর কমিশনের পক্ষ থেকে ফের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের ওবার্থু’র টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে (৮১৬ কোটি টাকার) চুক্তি করে ইসি। ১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি দেয়ার কথা থাকলেও সময় বৃদ্ধি করার পরও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। জুন পর্যন্ত তারা ঢাকায় ফাঁকা কার্ড পাঠিয়েছে ছয় কোটি ৬৩ লাখ ছয় হাজারটি। এর মধ্যে পারসোনালাইজেশন হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ। ব্ল্যাংক কার্ড দিতে পারেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার। এ পর্যন্ত তারা বিল নিয়েছিল ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
গত বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকে রাজধানী ঢাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের মাঝে কার্ড বিতরণ শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি মোট ২৭টি জেলা সদরেও কার্ড বিতরণ চলছে। উল্লেখ্য, ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১০ কোটি ৪০ লাখের মতো ভোটার রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৯:১৮ ৮৬২ বার পঠিত #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world newspaper