বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কান্না এখন আইন ও শরিয়াহ অনুষদভুক্ত আল-ফিকহ্ বিভাগ।২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করে এখনো পর্যন্ত একটি ব্যাচেরও শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষ করে বের হতে পারেননি ওই বিভাগ থেকে।
সেশন জটের অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বর্তমানে আল-ফিকহ বিভাগে ১০টি ব্যাচ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধুমাত্র শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার ফলে সেশন জটের মারাত্মক ছোবলে পড়েছেন আল-ফিকহ্ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের ক্লাস ও পরীক্ষা না নেওয়া, পরীক্ষার খাতা দেখে জমা না দেওয়া যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর যে সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ উঠেছে তারা সবাই ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগটির যাত্রাকাল ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে এখনো প্রথম ব্যাচের শির্ক্ষাথীদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়নি। এখনো তারা মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। ফলে, তাদের শিক্ষাজীবন শেষ না হতেই অনেকের সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাস ও পরীক্ষায় শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, তাদের অন্তর্কোন্দল ও ক্লাস ও পরীক্ষা বাদ দিয়ে অন্য কাজে শিক্ষকদের ব্যস্ততার কারণে আল-ফিকহ্ বিভাগ বিভাগের করুণ অবস্থা।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও জামায়াত সমর্থক সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুবকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদারের বিরুদ্ধে ঠিকমতো ক্লাস ও পরীক্ষা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, “ইতোপূর্বে, অধিকাংশ সময়ই জাকারিয়া মজুমদারকে ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টিভিতে আলোচনা করতে দেখা গেছে।”
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, “টিভিতে আলোচনার কাজে তিনি অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতেন। বর্তমানে চ্যানেল দুটি বন্ধ রয়েছে। তারপরও তিনি ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না।”
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল-ফিকহ্ বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্র জামায়াত সমর্থক এই শিক্ষক সম্পর্কে বলেন, “তিনি দুই বছর আমাদের ক্লাস নেননি। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর তিনি মাত্র দুটি ক্লাস নিয়েছেন। গত আড়াই বছরে মাস্টার্সে তিনি আমাদের মাত্র এই দুটি ক্লাসই নিয়েছেন।”
এ ছাড়া সেশনজটের নেপথ্যে অন্য কয়েকজন শিক্ষকেরও প্রত্যক্ষ ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপিপন্থি বিভাগীয় সিনিয়র শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাব শাহীন সম্পর্কে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, “তিনি ঠিকমতো ক্লাস পরীক্ষা তো নেনই না, আবার মাসের পর মাস পরীক্ষার খাতা আটকে রাখেন। এ বিষয়ে আমরা কিছু বললে স্যার বলেন- তোরা তো দূরের কথা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আমাকে ক্লাস নিতে বাধ্য করতে পারবেন না।”
এছাড়া বিভাগের জামায়াতপন্থি আরেক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজিমউদ্দিন এবং বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ঠিকমতো ক্লাস না নেওয়া এবং দেরিতে খাতা জমা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ড. নাজিমউদ্দিন শিক্ষকতা ছাড়াও ল্যান্ড প্রোপার্টির বিজনেসের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
এই সব শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত দিতে হচ্ছে বিভাগের ১০টি ব্যাচের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে বিভাগটির প্রথম ব্যাচ ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের পরীক্ষার ফলাফল আটকে আছে।
বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়সূচি বার বার ঘোষণা করা হলেও শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতির কারণে কোনো নোটিশ ছাড়াই পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ও স্থগিত করার ব্যাপারে নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানানোর প্রয়োজনই মনে করে না বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ২৬ মে নির্ধারিত থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি।
২০০৭-০৮ শিক্ষার্বর্ষের ৩য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এ ছাড়া ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষে উঠলেও এখনো ক্লাস শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি সহকারী অধ্যাপক হামিদা খাতুন বঙ্গনিউজকে বলেন, “আমাদের আগে শিক্ষক সংকট ছিল। এখন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে জট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।”
এ সময় শিক্ষকদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি হিসেবে তাকে সিনিয়র শিক্ষকরা মূল্যায়ন করেন না।
এদিকে, সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুবকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে সেশন জটের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাব শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই তিনি ফোন সংযোগটি কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি দেখা করার কথা বলে আবারও ফোন সংযোগ কেটে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকার বঙ্গনিউজকে বলেন, “আমি ওই অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও শিক্ষকদের নিয়ে অতি দ্রুত বসে সেশন জট নিরসনের চেষ্টা করবো।”
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৯:০৫ ৬২১ বার পঠিত