বঙ্গ-নিউজঃ গরু পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলার কারণেই সীমান্ত হত্যা সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তারাও বলছেন, এসব কারণেই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় এখন সীমান্ত হত্যা অনেক কমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনেই মূল এজেন্ডা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি। প্রতিটি সম্মেলনেই সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উঠে আসে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সীমান্তই ভারতের সঙ্গে হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই বিজিবি সদস্যরা কাজ করেন। যে কারণে আগের চেয়ে সীমান্ত হত্যা অনেক কমে এসেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরে বিজিবি ও বিএসএফ এর মহাপরিচালক পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনেও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের গুলি, হত্যা, আহত করা ও অপহরণের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
সর্বশেষ রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) পিলখানায় সীমান্ত সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও সীমান্ত এলাকার ৩৩ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালানের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. দবিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রবিবার পিলখানায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সীমান্ত হত্যাসহ চোরাচালান বন্ধে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন তিনি। সীমান্তে হত্যা গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে বেশি হচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৈধ করিডোর দিয়ে যদি গরু আনার বিষয়টি চালু হয়ে যায়, তাহলেই সীমান্ত হত্যা কমে যাবে।’
ওই মতবিনিময় সভায় সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে মতামত দেন দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। তিনি বলেছেন, সীমান্ত হত্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। অন্যান্য চোরাচালান প্রসঙ্গে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে, বর্ডারে রাস্তা তৈরি; যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেখানে আমাদের কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা; সম্ভব হলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো এবং চোরাচালানিদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
ইকবালুর রহিম আরও বলেন, বিএসএফের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বাড়াতে হবে। কয়েকমাস আগে যে ডিজি পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, সেখানেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো যাতে না ঘটে, সেজন্য উভয়পক্ষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু গরু পাচার নয়, সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করলে তারা তো ব্যবস্থা নেবেই। সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। দিনাজপুরে বিগত দুই বছরে মাত্র একজন মারা গেছেন।’
ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি প্রস্তাবনা দিয়েছি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সঙ্গে এত বড় ঘটনার পরও সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। কোনও সংকট সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষকে সেই সমস্যা সমাধানে ঐকান্তিক হতে হবে। দু’পক্ষকেই আলোচনায় বসতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। এটা করা গেলে সীমান্ত হত্যা, চোরাচালানসহ অন্যান্য বিষয় প্রতিরোধ করা যাবে।’
সীমান্ত হত্যা কেনও বন্ধ হচ্ছে না জানতে চাইলে বিজিবির রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএসএফের বক্তব্য হচ্ছে, তিনটি কারণে তারা ফায়ার ওপেন করে। একটি হচ্ছে, কেউ কাঁটাতারের বেড়া কাটতে গেলে তারা ফায়ার করে। না হলে এ কারণে তাদের বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। দ্বিতীয়ত, তাদের কেউ আক্রমণ করলে তারা ফায়ার করে। গরু পাচারের সময়ও যদি কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন তারা ফায়ার করে। তাছাড়া, সাধারণত তারা ফায়ার ওপেন করে না। এখন আমাদের লোকজন যদি সহনশীল হয়, তারা যদি বিএসএফের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ না করে তাহলে তারা ফায়ার করতে চায় না।’
বিজিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। এটি অব্যাহত থাকলে সীমান্ত হত্যা কমে যাবে। জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন এবং ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছেন।
সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে অন্য কোনও মন্তব্য না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘২০০৮ সালে সীমান্তে ৬৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছিল। ২০১৭ সালে এসে সেটা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। এতেই বোঝা যায়, সীমান্ত হত্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।’ এজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৩:২১ ৪৪২ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News