বঙ্গ-নিউজঃ দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে মূল্যহ্রাসের এই হার কম। একসপ্তাহ আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর নতুন দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা কাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ভারত থেকে আনা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। তবে বাজার-এলাকাভেদে ৮০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, পেঁয়াজের মোকাম-খ্যাত ফরিদপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ থেকে প্রচুর দেশি পেঁয়াজ রাজধানীসহ সারা দেশে যাচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেশব্যাপী পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে।
পেঁয়াজের দাম বাড়া নিয়ে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমছে। আরও কমবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশব্যাপী পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। তাই দামও কমতে শুরু করেছে। কিছু দিনের মধ্যে সারা দেশে আরও কমবে। এ নিয়ে হা-হুতাশ করা ঠিক না।’ তিনি বলেন, ‘মিডিয়ায় বেশি লেখালেখির কারণেও অনেক সময় পণ্যের দাম বাড়ে। পেঁয়াজও এর ব্যতিক্রম নয়। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি সাময়িক। বাংলাদেশ-ভারতে এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়নি। তাই, শেষ দিকে এসে সরবরাহে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।’ পেঁয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও চাহিদা-সংক্রান্ত তথ্যও ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। কোরবানির সময় এলেই পেঁয়াজের বাজার প্রতি বছর অস্থির হয়ে ওঠে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এ বছর বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ কারণে দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৪০ টাকায় ওঠে।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে দেশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর ভারতেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভেলোরের অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে।
এ বছর দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ার পরও কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি সাময়িক। কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে। অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙে গিয়েছিল। তাতে পরিবহনেও সমস্যা হয়েছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। রোজার মাস ও কোরবানিকে কেন্দ্র করে এ চাহিদা বাড়ে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। যার বেশিরভাগই পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তারা মনে করেন, চাহিদার ৬০ ভাগই দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া রোজার মাস ও কোরবানির সময় দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। এবারের রোজায় পেঁয়াজ নিয়ে কোনও কারসাজি না হলেও কোরবানির ঈদকে টার্গেট করেছিলেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাই পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দাম বেড়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি-মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদের খরচ পড়েছে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা।
সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত একমাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে ৪২ হাজার ৩৮২ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫২ হাজার ১১৭, মার্চ মাসে ৬৫ হাজার ২৫৫, এপ্রিল মাসে ৬২ হাজার ২২০, মে মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১১, জুন মাসে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৯, জুলাই মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯, আগস্ট মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৫০, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ হাজার ৪৬২ ও ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৩৫৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৫ টন। এ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির লক্ষ্যে ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৩ টনের এলসি খোলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ৮:০০:৩৫ ৬২০ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News