বঙ্গ-নিউজঃ ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচনসহ দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের নির্বাচন নিয়ে আইনি ও সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, আগামী ৩১ জানুয়ারির চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ফলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারলেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সিটি করপোরেশন আইনে ভোটাররাই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশনার কারণে ভোটারদের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার ক্ষণ্ন হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেননা কেবল মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই প্রার্থীকে ভোটার ক্রমিক নম্বর ও ভোটার এলাকার নাম উল্লেখ করতে হয়।
আইনানুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করতে হবে। প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য সর্বোচ্চ ২১ দিনের বেশি সময় রাখা হয় না। এই হিসাবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করলেও নতুন ভোটাররা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু আইনগত কোনো ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও কমিশন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নতুন ভোটাররা প্রার্থী হতে পারবেন না। ফলে সাড়ে চার লাখ নতুন ভোটারের সবাই প্রার্থী হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি আদালত গড়ালে সিটি নির্বাচন অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এ মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রার্থী হিসেবে তিনি যোগ্য হবেন, যদি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তার বয়স পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়, মেয়রের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের যে কোনো ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ থাকে এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরসহ অন্যান্য কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ থাকে।
সংবিধানে বলা আছে, প্রতি এলাকার জন্য একটিমাত্র ভোটার তালিকা থাকবে। কিন্তু কমিশন যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে তাতে এই নির্বাচনে কার্যত দুটি ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হবে। বিশেষ করে প্রার্থী মনোনয়ন হবে বিদ্যমান ভোটার তালিকায় আর ভোটাররা ভোটদান করবেন নতুন ভোটার তালিকায়।
ঢাকা উত্তরে ১৮টি সাধারণ ও ৬টি সংরক্ষিত এবং একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৮টি সাধারণ ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নতুন যুক্ত করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ড গঠনের প্রজ্ঞাপন গত ২৩ জুলাই প্রকাশের পর ২৬ জুলাই সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের মেয়াদ কতদিন হবে তা আইনে উল্লেখ নেই বলে নির্বাচন কমিশনের কার্যপত্রে উল্লেখ করেছেন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব (চ.দা) ফরহাদ আহাম্মদ খান।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হলে সেগুলোতে নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে স্পষ্ট বিধান নেই। ওই আইনের ৩৪ অনুচ্ছেদ এ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কখন করতে হবে তার বর্ণনা রয়েছে। সেখানে নতুন সিটি করপোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে ১৮০দিন, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে আগের ১৮০দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া করপোরেশন গঠন বাতিল ও করপোরেশন বিভক্তির ক্ষেত্রেও ১৮০দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্তের ক্ষেত্রে কত দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যদিও স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বলা আছে, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত অংশে নির্বাচন হবে না।
নবগঠিত দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়ে গত রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নতুন গঠিত ওয়ার্ডগুলোর মেয়াদ বর্তমান পরিষদের বাকি সময়ের জন্যই হবে, উপ-নির্বাচনের মেয়রের মেয়াদের সমান হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে আইনি জটিলতা হবে। সংক্ষুব্ধরা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। কেননা বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের আমলে ৫ লাখ নতুন ভোটারকে বাদ রেখে দুই ডিসিসির তফসিল ঘোষণা করলে আদালত নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। নতুন ভোটারকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেয়। আদালতের নির্দেশনা মেনে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক গত ৩০ নভেম্বর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। গত পহেলা ডিসেম্বর থেকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৬ অনুযায়ী মেয়রের শূন্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসিকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী, পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাত্ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত মেয়র সিটি করপোরেশনের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য উক্ত পদে বহাল থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৯:০৭ ৪৮৮ বার পঠিত