বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির দাবি মানতে সরকারের ‘না’ এর জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।বিরোধীদলীয় নেতার দাবি, দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে মহাজোট সরকারকে বিদায় জানাতে মুখিয়ে আছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় এখন মহাজোট ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে।
বিরোধী দল নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে এলেও প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবারও দলের এক সভায় বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই পরবর্তী নির্বাচন হবে।
সোমবার নিজের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় সরকারকে বলে দিতে চাই, ক্ষমতায় থেকে কাউকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না, কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। অবশ্যই সরকারকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
“ওই নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ অস্ত্র গোলা-বারুদ নয়, ব্যালটের মাধ্যমে এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা সরকারের বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।”
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা জানি, এ বাজেট হবে লুটপাটের বাজেট। সেজন্যই এরকম বিশাল বাজেট দেয়া হয়েছে।”
সরকারের ‘দুর্নীতির’ কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে দেশ ‘দেউলিয়া’ হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন খালেদা জিয়া।
দলের সদ্য কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যাতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, “সারাদেশে নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চলছে। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের শত শত নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন।
“আদালত থেকে জামিনের পরও জেল গেইট থেকে অনেককে আবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নতুন করে আবার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।”
বর্তমান মহাজোট সরকারকে ‘গণতন্ত্রের মুখোশধারী চরম স্বৈরাচারী’ বলে আখ্যায়িত করেন বিরোধী নেতা।
“এই সরকার যে অপকর্ম, অন্যায় কাজ করছে, তার জন্য কঠিন জবাব দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা নির্ভয়ে দলের জন্য এগিয়ে এসেছে। তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।”
সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “সরকারকে বলবো, আপনারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবেন না। আপনারাই শেষ সরকার নন, সময় ফুরিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন।”
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধপরায়ণতা না দেখালেও ‘আইনের মাধ্যমে আপনাদের অপকর্মের’ জবাবদিহি করতে হবে, বলেন খালেদা।
অনুষ্ঠানে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীরা খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জেড মূর্তজা তুলা, জামাল শরীফ হীরু, আবেদ রাজা, মাহবুবুল হক নান্নু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
জোট নেতাদের চার সিটি করপোরেশন এলাকায় যেতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা।
গুলশানের কার্যালয়ে রাত পৌনে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।
আগামী ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কিছু জানানো না হলেও জোটের একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারের জন্য তাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর রেফায়েত উল্লাহ শাহেদী, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বৈঠকে ছিলেন।
এছাড়াও অংশ নেন এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, জাগপার মহিউদ্দিন বাবলু প্রমুখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বৈঠকে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৩:৪৫ ৪৬০ বার পঠিত