বঙ্গ-নিউজঃ তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ভেতরের ও বাইরের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে পর্যবেক্ষণে বলেছেন আদালত। আদালত বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে গণতন্ত্র ধ্বংস করাই ছিল বিদ্রোহের অন্যতম উদ্দেশ্য।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। আজ সোমবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার রায় পড়া শুরু করেন। সেখানে তিনি এই পর্যবেক্ষণের কথা বলেন।
রায় পড়ার এখন মধ্যাহ্ন বিরতি চলছে। বেলা দুইটার পর রায় পড়া আবার শুরু হবে। আজই এই মামলার রায় পড়া শেষ হবে বলে গতকাল রোববার জানিয়েছিলেন এই বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। এই বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী গতকাল তাঁর পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনান।
এই রায়ে এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মূল রায়টি প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার।
আজ রায় পড়তে গিয়ে বিচারপতি নজরুল বলেন, তৎকালীন বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দারা কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, তা আগে জানতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি করা দরকার। তিনি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, কোনো সমস্যা এলে তা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হবে। বিজিবির জোয়ানেরা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে তা মীমাংসা করতে হবে এবং বিজিবিতে সেনা কর্মকর্তা ও জোয়ানদের মধ্যে পেশাদারি সম্পর্ক থাকতে হবে।
নজরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, কেন সে সময়ের বিডিআর ডাল-ভাত কর্মসূচি নিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি যেন না নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে বিজিবিকে সতর্ক করেন তিনি।
আরেক বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, কোনো সেনা কর্মকর্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে থাকবে না-এটাই ছিল বিদ্রোহে অংশ নেওয়াদের মূল মনোভাব। তিনি জোয়ানদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক (কলোনিয়াল) আমলের মতো ব্যবহার না করার কথা বলেন। তিনি বলেন, একই দেশ। এখানে সবাই ভাই ভাই।
গতকাল আদালত পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই কলঙ্কচিহ্ন তাঁদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে। একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আসামিসংখ্যার দিক থেকে এই মামলা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। আজ হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে।
এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৭:৫৮ ৮২১ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News