বঙ্গ-নিউজঃ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ও তার আগে-পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার প্রতিটির বিচার করতে হবে। এই বিচারকাজে রাষ্ট্র এগিয়ে না এলেও নাগরিক সংগঠনগুলোকে সংগঠিত হতে হবে। রাষ্ট্রগুলো যাতে এসব গণহত্যার বিচারে উদ্যোগ নেয়, সে জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ তৈরি করতে হবে। আর জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও অং সান সুচির সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালতে তুলতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে শেষ হওয়া ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে এসব কথা বলেন আলোচকেরা। ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত দুই দিনের ওই জানান তাঁরা। একই সঙ্গে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপরে যে গণহত্যা চলছে, তারও বিচার দাবি করেন তাঁরা।
সেমিনারে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, গণহত্যা বন্ধে সহায়তা করা এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান।
গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ ও তাঁদের তালিকা তৈরির কাজে ব্যস্ত। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা ও একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগের কার্যক্রমে তাদের পাওয়া যায় না।’ মিয়ানমার বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারত-রাশিয়া, চীন ও জাপান রোহিঙ্গাদের ওপরে গণহত্যা নিয়ে ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করছে না। এমনকি রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতে তাদের ভয়। তাদের কাছে মানুষ কোনো বিষয় নয়, তাদের চাই জমি। যেমনটা একাত্তরে টিক্কা খান বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলেছিলেন, ‘আমার চাই জমি’।
১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে বলা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার হন পাঁচ লাখ নারী। এ তথ্য উল্লেখ করে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘দেশের ইউনিয়ন-উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর, শহীদদের স্মৃতি ও নির্যাতনের স্মারকগুলো চিহ্নিত করে তা রক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকারের আমলারা এসব কাজে আমাদের অসহযোগিতা করছেন, অনেক ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মিয়ানমারের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কিছুটা বদলেছে। তাদের নাগরিক সংগঠনগুলো ওই গণহত্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দেশটির সরকারও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দিচ্ছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করায় ভারতকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ভারত আমাদের সর্বকালের সর্বসেরা বন্ধু।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, জেনোসাইডের বাংলা অনুবাদ হিসেবে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহৃত হয়—এটা সঠিক নয়। কেননা বিশ্বজুড়ে জেনোসাইড মানে শুধু হত্যা নয়। নির্যাতন এবং ধর্ষণকেও জেনোসাইডের অংশ হিসেবে দেখা হয়। ’৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপরে জেনোসাইড হয়েছিল।
আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফওজুল আজম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে যতগুলো যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার আলোকে ও মান রক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে। ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ২৫৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে ১৭০টি প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ৮৩টি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে সক্ষম হয়নি।
ভারতের অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষে কত মানুষ রয়েছে, তার হিসাব করতে গেলে আমরা দেখি, বিপক্ষে এখনো অনেক মানুষ আছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রের মূল উৎপাটন করতে হবে।’
সম্মেলনের সমাপনী দিনে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি অন্য একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:৩২ ৪৭৯ বার পঠিত #bangaldesh news #bangla news #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world news.bongo-news.com