বঙ্গ-নিউজঃ হাতিরঝিলের এক নম্বর পানির পাম্প থেকে মগবাজার রেলগেটের ধার পর্যন্ত এলাকায় নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। এর কারণ হাতিরঝিলে স্তূপ হওয়া ময়লা।
নোংরা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে মনুষ্য বর্জ্যসহ ঝিলপাড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা দোকানের ‘ওয়ানটাইম’ প্লেট, গ্লাসও। বাসাবাড়ির স্টর্ম সুয়ারেজ, পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট, কোমলপানীয় আর চিপসের প্যাকেটে হাতিরঝিল পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। এদিকে প্রায় চার বছর আগে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ৩২ সদস্যবিশিষ্ট আলাদা দুটি কমিটি করেছিল রাজউক। কিন্তু সেই কমিটি ব্যর্থ হওয়ায় ১০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে বারবার এই সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও শেষ হচ্ছে না কাজ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও ফের দেড় বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়লেও দেখছে না আলোর মুখ। আর এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মপরিকল্পনা এবং নীতিমালার প্রয়োজন থাকলেও সেদিকে নজর নেই রাজউকের। সরেজমিনে হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডাস্টবিন থাকলেও খাবারের প্যাকেট এবং প্লাস্টিকের বোতল ফেলা হচ্ছে হাতিরঝিলের পানিতে। বাসাবাড়ির বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে হাতিরঝিলে। এর ফলে দুর্গন্ধে চলাফেরা এবং বসবাস করা দূরহ হয়ে উঠেছে এ এলাকার মানুষ এবং দর্শনার্থীদের। মগবাজার রেলগেট অংশের বিদ্যুতের ট্রান্সফরমা পার হয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে ঝিলের দূষণের ভয়াবহ চিত্র। নোংরা পানিতে শ্যাওলার ভিড়ে বাসা বাঁধছে মশা। হাতিরঝিলে পানি কমে যাওয়ায় এসব ময়লা আস্তে আস্তে গ্রাস করে নিচ্ছে হাতিরঝিলকে। পানির স্রোত থাকলে এই ময়লা পানির নিচ দিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু এখন পানি কমে যাওয়ায় ময়লা জমে স্তূপ হয়ে তৈরি হচ্ছে ভাগাড়। এই এলাকার বাসিন্দা রায়হান হোসেন বলেন, হাতিরঝিল থেকে আসা দুর্গন্ধে ঘরের জানালা খুলতে পারি না। আর এখন মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ এই এলাকার মানুষ। বাসা-বাড়ির সুয়ারেজ বর্জ্য যদি সরাসরি ঝিলের পানিতে পড়ে তাহলে দুর্গন্ধ তো হবেই। খালি শুনি যে প্রকল্প চালু হলে ময়লা এভাবে আর পানিতে পড়বে না। কিন্তু কবে এই প্রকল্প শেষ হবে আর আমাদের মুক্তি মিলবে তা কেউ বলতে পারে না। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চতুর্থবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সময় হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে ‘সেপারেশন অব স্যুয়ার লাইন ফ্রম স্টর্ম ওয়াটার লাইন’ প্রকল্প যুক্ত করা হয়। কিন্তু তেজগাঁও শিল্প এলাকায় একটি রাস্তার ডাইভারশন কাজ শেষ না হওয়ায় এগোচ্ছে না এ প্রকল্প। আর যতদিন এই প্রকল্প শেষ না হবে ততদিন বাসা-বাড়ির বর্জ্য পানিতে মেশা ঠেকাতে নেওয়া হবে না কোনো ব্যবস্থা। আর এর ফলে পানি পরিশোধনও করতে পারবে না ঢাকা ওয়াসা। এ ব্যাপারে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. জামাল আকতার ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী মাসের মধ্যে সেপারেশন অব স্যুয়ার লাইন ফ্রম স্টর্ম ওয়াটার লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। বর্তমানে ৫৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। শীত মৌসুমে পানি না থাকায় ময়লা জমে যাচ্ছে। এই প্রকল্প চালু হলে বাসা-বাড়ির সলিড বর্জ্য থেকে শুরু করে কোনো আবর্জনাই আর পানিতে পড়বে না। তখন ঢাকা ওয়াসা এই পানি পরিশোধন করে পরিষ্কার করারও ব্যবস্থা করতে পারবে। নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সুয়ারেজ লাইন থেকে শুরু করে সঠিকভাবে পানি ও পয়োনিষ্কাশন এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু রাজউকের অব্যবস্থাপনায় ময়লা-দুর্গন্ধের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। উদ্দেশ্য ছিল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধে বেগুনবাড়ী খাল এবং হাতিরঝিলের নিম্ন এলাকা খনন ও উন্নয়ন করা। এ ছাড়া ওয়েস্ট ওয়াটার ডিসপোজাল ইস্যু বিবেচনায় ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে পুরো এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, ঝিলের পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করে রাখতে চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা। কিন্তু ১০ বছর পার হলেও শেষ হচ্ছে না এই উন্নয়ন প্রকল্প।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৫:৫৭ ৬১৬ বার পঠিত #bangaldesh news #bangla news #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world news.bongo-news.com