বঙ্গ-নিউজঃ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা যুদ্ধাপরাধের শামিল ও মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সফররত সিনেটররা। তারা বলেন, এই অপরাধ ও জাতিগত নিধনের নিন্দা প্রতিটি দেশের জানানো উচিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর জোরালো আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে ঢাকার আহ্বানে সহমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রিন্সেস সোফি হেলেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাপানের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন সেদেশের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক সাক্ষাৎকালে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মার্কিন সিনেটর জেফ ম্যার্কলি বলেন, এই সংকটের সমাধান ও উদ্বাস্তুদের নিজ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার উদার সহযোগিতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ঙ্কর নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে ম্যার্কলি আরও বলেন, তারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে নির্যাতিতদের কাছ থেকে সরাসরি নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদ্বাস্তুরা খুবই সন্তুষ্ট।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে মার্কিন সিনেট প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের কঠোর পরিশ্রমের স্বাক্ষর। নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রশংসা করেন তারা। জলবায়ু ইস্যু নিয়েও তারা আলোচনা করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন তারা। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সিনেটর রিচার্ড ডারবিন, কংগ্রেসওম্যান বেট্টি ম্যাক কল্লাম ও জন সেহকোশি এবং কংগ্রেসম্যান ডেভিড সিসিল্লিন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে কথা স্মরণ করে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তার ও বোন শেখ রেহেনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা চাই তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। তিনি বলেন, শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয়পত্র পেয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তার সরকারের প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সমস্যায় ৬০ হাজারেরও বেশি নাগরিক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এবং বাংলাদেশ তার নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ প্রিন্সেস সোফির : রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের কাউন্টিস অব ওয়েসেক্স প্রিন্সেস সোফি হেলেন বলেন, যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায়। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ওপর টেকসই আন্তর্জাতিক চাপ এবং একইসঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে একমত তারা। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিরসনের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান তিনি। একজন সমাজকর্মী হিসেবে হেলেন জানান, এই সফরকালে তিনি ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রামে চক্ষু হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উদ্বাস্তুদের কষ্ট নিরসনে প্রশাসন, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা বিস্তার সম্পর্কে প্রিন্সেস হেলেনকে অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যসেবা বিস্তারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুনরায় প্রকল্পটি শুরু করেছে। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার প্রস্তাব জাপানের : জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তার ভিশন ২০২১ অর্জনে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অধিকতর জোরদারে বাংলাদেশের সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের স্রোতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবল মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২২:৫৭ ৫৬৬ বার পঠিত #bangaldesh news #bangla news #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world news.bongo-news.com