বঙ্গ-নিউজঃ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে গিয়ে লোক দেখানো আয়োজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা বলেন, মানবিক সহায়তা নয়, বরং বিএনপির দৃষ্টি ছিল ‘শো-ডাউন’ করার দিকে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার সংসদের বৈঠক শুরু হওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কক্সবাজার সফর করে অভিযোগ করেছেন, সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী।
জবাবে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যকে আমি ধর্তব্যে নিই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামে কথা আছে, পাগলে কী না কয়, ছাগলে কী না খায়। চক্ষু থাকতে যে অন্ধ হয়, তাকে দেখাবে কে? দেখেও যে দেখতে পায় না, তাকে দেখানোর কিছু নেই। এটা হচ্ছে অনুভূতির ব্যাপার। এটা হচ্ছে বোধ, বোধটা আছে কি না, সেই ব্যাপার।’
খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাওয়ার সময়কার বিবরণ তুলে ধরে তাঁর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) সেখানে যেভাবে সাজসজ্জা নিয়ে ঢোল-ডাগর, হাতি-ঘোড়া সব নিয়ে গেলেন! উনি দুর্গত মানুষকে দেখতে গেলেন, নাকি কোনো বরযাত্রী হিসেবে গেলেন, না অন্য কোনো কারণে গেলেন, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে সহযোগিতা করার অভ্যাস তাঁদের নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে থাকে।
খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটা তো তাঁদেরই সৃষ্টি। তাঁর স্বামী (জিয়াউর রহমান) এটা সৃষ্টি করে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য হচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর অপর একটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেও এ সময় থেকে সমস্যা শুরু হয়। এখানে অনেক উসকানিদাতা আছে, তাতে সন্দেহ নেই। সরকার এটা খুঁজে বের করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৭ জন রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা হয়েছে।
আব্দুর রহমান বদির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, টেকনাফের ৫টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার করবে। রোহিঙ্গাদের কারণে সেখানকার গাছপালা নষ্ট হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা পাহাড়ে আবাদ করতে পারছেন না। সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে দরিদ্রদের কষ্টের সীমা নেই।
মৌলভী বাজার-২ আসনের সাংসদ আব্দুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দেওয়া এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সফল হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযান ও সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। দুই মাস সময়ের মধ্যে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হলেও তাদের দীর্ঘকাল বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও সে দেশকে করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সরকারের বিভিন্ন কূটনৈতিক উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মহলের জোর সমর্থন আদায়ে বাংলাদেশ সফল হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াটা বাংলাদেশের সময়োযোগী সিদ্ধান্ত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের নাম আজ বিশ্ব নেতাদের কণ্ঠে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৭:৫৭ ৭১৫ বার পঠিত #bangaldesh news #bangla news #bangla newspaper #bd news #daily newspaper #world news.bongo-news.com