বঙ্গ-নিউজঃ টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। এছাড়া আজ ভোরে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে ভেলায় চড়ে ১৬২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা সাঁতরিয়েও বাংলাদেশে এসেছেন।
এদিকে উখিয়া সীমান্তে ঘোরাঘুরি করার সময় দুই ফরাসি নাগরিককে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, পথ পরিবর্তন করে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ভেলায় চড়ে আসা রাখাইনের বুচিডং শহরের চিংঅং গ্রামের বাসিন্দা নুরুল কবির জানান, ধাওংখালীর সৈকতে গত আড়াই মাস ধরে আটকা পড়েছে শত শত রোহিঙ্গা। খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে পড়ে মারা যাচ্ছে নারী, শিশু ও পুরুষরা। কোনো নৌকা সেখানে যাচ্ছে না। ফলে জীবন বাজি রেখে ভেলায় ভেসে পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে আসেন তারা।
নুরুল কবির আরো জানান, সেখান থেকে কিছু যুবক খবর দিতে গ্যালন বেঁধে সাতরিয়ে বাংলাদেশ আসেন। কিন্তু তারা আর ফেরত যাননি। ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে উদ্ধার করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। তাই ভেলায় চড়ে আসতে বাধ্য হন তারা।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) হিসাব মতে, ২৫ আগস্টের পর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ ২৫ হাজার।
তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)’র ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার শিরিন আকতার ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ ১১ হাজার বলে জানিয়েছেন।
তবে এই দুটি সংস্থার দেয়া সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে বাংলাদেশী জনগণের সাথে মিশে বসবাস করছেন।
আইওএম বলছে, স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে গিয়ে বসবাস করছে ৪৬ হাজারের মতো রোহিঙ্গা।
কিন্তু স্থানীয়দের ধারণা এ সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান এধরণের রোহিঙ্গার সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চলমান রোহিঙ্গা নিবন্ধনে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোট চার লাখ ৪৯ হাজার ৮২১ জনকে নিবন্ধন করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮৭৫ জন এতিম শিশুকে শনাক্ত করেছে।
বুধবারও শাহপরীর দ্বীপের দু’টি পয়েন্ট দিয়ে ৬২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে জালিয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ভেলায় চড়ে ও সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন ৫২ জন। আর জেটি ঘাট এলাকা দিয়ে নৌকায় করে এসেছেন ১০ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। এখনও অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
দুই ফরাসী নাগরিক আটক
উখিয়া সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ড থেকে বুধবার বিকেলে দুই ফরাসী নাগরিককে সন্দেহজনক ঘুরাঘুরি করার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় অপরিচিতদের আগাগোনার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে। এরপরও দেশী-বিদেশী লোকজন সীমান্তে অহেতুক ঘুরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন, এ দুই ফরাসী নাগরিক ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। বুধবার বিকেলে সীমান্তের আঞ্জুমান পাড়ার থেকে গ্রামবাসী ধরে তাদেরকে পুলিশকে দেয়। তবে এ বিদেশী দুই নাগরিক আমাদের সাথে তথ্য উপাত্ত নিয়ে অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বিরক্তবোধ করছেন। ইউএনও তাদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল খায়ের জানান, দুই ফরাসী নাগরিককে গত বুধবার রাত ৮টার দিকে গাড়িতে কক্সবাজারের হোটেল সী আলিফে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৫:৫৬ ৫৫৭ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News