বঙ্গ-নিউজঃ নিরাপদ প্রজননে গত অক্টোবরের ২২ দিন ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় নদীতে ৪৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। পোনা ছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার কোটি। চলতি অর্থবছর ইলিশের উৎপাদন হবে ছয় লাখ টনের বেশি, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর বাজারমূল্য ২৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ওই সময় সমুদ্রের লোনা পানি থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীর মিঠা পানিতে আসে। এ বছর বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো হাওয়া ও নদীতে পানির প্রবাহ ছিল বেশি। অনুকূল পরিবেশে বেশি পরিমাণে মা ইলিশ সমুদ্রের লোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে এসেছে ডিম ছাড়ার জন্য। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। ১১ সদস্যের একটি দল ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ২৫ দিন নদীতে গবেষণা চালায়। শরীয়তপুরের তারাবনিয়া, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার মোহনা ও ঈশানবালা, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার মনপুরা, দৌলতখান ও ইলিশা এবং বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর ৪৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ মা ইলিশ প্রজননে সক্ষম হয়েছে। নদীতে পোনা ছাড়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক আনিছুর রহমান বলেন, নদীতে ২৪ ঘণ্টায় দুবার করে জোয়ার ও ভাটার সৃষ্টি হয়। ওই সময় জেলেরা দুবার ইলিশ শিকার করেন। গবেষণায় শিকার করা ইলিশের কত শতাংশ পুরুষ ও কত শতাংশ স্ত্রী ইলিশ ছিল, তা নির্ণয় করা হয়। কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে, কত ভাগ মাছের পেটে ডিম রয়েছে, তা-ও দেখা হয়। কোন অঞ্চলে কতসংখ্যক মাছ ডিম দিচ্ছে এবং তার মধ্যে কত শতাংশ পোনা বেঁচে থাকবে—এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে গবেষণা করা হয়েছে। এবার আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় ২২ দিনে প্রায় ৪২ হাজার কোটি পোনা ছেড়েছে মা ইলিশ। একটি ইলিশ মাছ ১০ থেকে ১২ লাখ পোনা ছাড়তে পারে। গবেষণার হিসাব অনুযায়ী, এ বছর আড়াই শতাংশ বেশি পোনা উৎপন্ন হয়েছে।
গবেষণায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে ও পরে ইলিশের ডিমের ব্যাস ও পরিপক্বতার মান সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। ইলিশ সাধারণত সন্ধ্যায় ডিম ছাড়ে। চাঁদের সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। পানির গুণাগুণের ওপর নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু উৎপাদিত হওয়ার সময় নির্ভর করে। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ইলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। এ ছাড়া সারা বছরই ইলিশ কম-বেশি প্রজনন করে থাকে। ইলিশের প্রধান প্রজননক্ষেত্র প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। আগে এই এলাকায় প্রতিবছর বড় পূর্ণিমার ৩ দিন আগে ও ১১ দিন পরে মোট ১৫ দিন মা ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা হতো। ২০১৬ সাল থেকে বড় পূর্ণিমার ৪ দিন আগে ও পূর্ণিমার দিন, পরের ১৭ দিনসহ ২২ দিন ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। পূর্ণিমার সঙ্গে পরবর্তী অমাবস্যাকেও যুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে গত দুই বছরে ফল ভালো পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মূলগাঁও পুসকাঠি গ্রামের মোহাম্মদ আলী ২৫ বছর ধরে মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগের তুলনায় এখন ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। আগে জেলের সংখ্যা কম ছিল, শুধু নদী-তীরবর্তী মানুষ নদীতে মাছ শিকার করত। এখন নদী-তীরবর্তী ছাড়াও দূরের মানুষ নদীতে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ প্রজননে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রতিবছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ লাখ টন।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, এ বছর যে পরিমাণ পোনা হয়েছে, তাতে চলতি অর্থবছরে ছয় লাখ টনের বেশি ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসাবে এর বাজারমূল্য হবে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৯:১৬ ৮৭৯ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News