বঙ্গ-নিউজঃ অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে সরকারকে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রবিবার (৫ নভেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের চার সপ্তাহের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বের ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চার সপ্তাহের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বের ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ রবিবার, ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। এদিনও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদন মঞ্জুর করে আবারও সময় দেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদন ও এর শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই বিষয়ে শুনানির জন্য ৮ অক্টোবর দিন ঠিক করেছিলেন। এর আগে এ বিষয়ে ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও করেছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ওই বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ এক সপ্তাহের মধ্যেই হবে। কিন্তু বিচারকদের চাকরিবিধি প্রকাশে এ নিয়ে কয়েক দফা সময় নিল সরকার।
এর আগে গত সোমবার (৩০ জুলাই) বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করার জন্য সরকারকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন আদালত। ওই দিন শৃঙ্খলাবিধির খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত বলেছিলেন, আইনমন্ত্রী যে খসড়া জমা দিয়েছেন তা আপিল বিভাগের পরামর্শ মতো হয়নি। আমরা এটা গ্রহণ করছি না। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হবে।
এরও আগে গত ২ জুলাই সময় চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কত দিন?’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুই সপ্তাহ। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে প্রধান বিচারপতি বলেন- ‘এটাই লাস্ট চান্স’।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রণয়নে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গেজেট প্রণয়নে ২০ বারের মতো সময় নিল সরকার।
এর আগে গত ৮ মে শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রণয়নে সরকারকে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। গেজেট প্রকাশ না করার বিষয়ে ইঙ্গিত করে ওই দিন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আড়াই বছরে যেহেতু সম্ভব হয়নি, আড়াই হাজার বছরেও মনে হয় তা সম্ভব হবে না।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ৭ম দফায় আলাদা আচরণ ও শৃংখলাবিধি প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটি আজও প্রণয়ন হয়নি।
এ অবস্থায় একাধিকবার আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃংখলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি কমিটি গঠন করে ওই খসড়া বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট জারির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শুনানিকালে গত বছরের ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগ বলেন, একটি খসড়া ডিসিপ্লিনারি রুলস তারা (সরকার) দাখিল করেছে। এটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এখন আমরা কমিটি করে একটি শৃংখলাবিধি তৈরি করে দিয়েছি। এটির আলোকে গেজেট জারি করে ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগকে জানাতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর সরকার একের পর এক সময় চাইতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত ডিসেম্বরে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে আপিল বিভাগে তলব করা হয়। ১২ ডিসেম্বর দুই সচিবকে হাজির হয়ে এই শৃংখলাবিধির গেজেট জারির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এ অবস্থায় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকগণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত আচরণ ও শৃংখলাবিধির খসড়া গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ব্যাপারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।’
১২ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব হাজির হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মাধ্যমে আদালতের কাছে এই পত্র তুলে ধরেন।
ওইদিন আপিল বিভাগ বলেন, ‘এটা কী লিখেছেন। আমরা তো খসড়া বিধিমালার কোনো প্রস্তাব দেইনি। মাসদার হোসেন মামলার ১২ দফা নির্দেশনায় এই আলাদা চাকরিবিধি তৈরির কথা আছে। ১৪ বছরেও এই বিধি তৈরি হয়নি। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ওই বিধির খসড়া আপনারাই তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন। সরকার যে খসড়া পাঠিয়েছিল মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই খসড়া সংশোধন করে দিয়েছি মাত্র। আমরা তো কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি। রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’
শুনানি শেষে আদালত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ওই শৃংখলাবিধির গেজেট জারি করার জন্য নির্দেশ দিয়ে ওইদিন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এরপরও দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় আবেদন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৩:৫৪ ৮৭৭ বার পঠিত