বঙ্গ-নিউজ, (সাজ্জাদ কামাল): উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, দার্শনিক, কুরআন-হাদিস-ফিকহ শাস্ত্রবিশারদ আ’লা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খান (র.) (১৮৫৬-১৯২১) ছিলেন দিশেহারা মুসলিম উম্মাহর আলোকবর্তিকা।
তিনি ছিলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ। ইসলামের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অশান্তি সৃষ্টিকারী বাতিল ফেরকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে মুসলিম উম্মাহর ইমান-আক্বিদা হেফাজত করেছেন। বিশেষ করে শান্তির ধর্ম ইসলামের সঠিক পথ ও মত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ বাস্তবায়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহ.)। ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের জন্য এই উপমহাদেশে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে ‘ইমাম আযম ও আলা হযরত গবেষণা পরিষদ আয়োজিত ‘আলা হযরত কনফারেন্সে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা আরো বলেন, পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিশারদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খানের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের যাবতীয় শাখায় ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দেড় হাজারের অধিক গ্রন্থ রচনা করে এই উপমহাদেশে সাড়া ফেলে দেন তিনি। কবি আল্লামা ইকবাল তাকে ওই যুগের দ্বিতীয় ইমাম আবু হানিফা উপাধিতেই ডাকতেন। আলা হযরতের সফল জীবনকর্ম ও অবদানের ওপর মিশরের প্রসিদ্ধ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টির অধিক এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার পাশাপাশি তার ওপর গবেষণা ও চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
বক্তারা বলেন, আলা হযরত আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন আল্লাহর প্রকৃত ওলি ছিলেন। ইসলামের যে কোনো বিষয় নিয়ে তিনি সুন্দর করে কুরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। তার সঙ্গে বাহাস তথা টেবিল টক করে ইসলামের বিষয়ে কেউ জিততে পারেননি। ব্রিটিশ শাসনামলে বাতিল আকিদায় গোটা সমাজ যখন নিমজ্জিত ও পথভ্রষ্ট তখন মুসলিম সমাজের এই বিপদ মুহূর্তে আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
পীরে তরিকত শাহ আহসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে মুফতি আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক ও মুফতি বখতিয়ার উদ্দিনের সঞ্চালনায় কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে সফররত আওলাদে আলা হযরত আল্লামা তৌছিফ রেযা খান কাদেরী বেরেলভী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহসুফী বদরোদ্দোজা বারী, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সূফী মিজানুর রহমান, আলহাজ মুহাম্মদ মহসিন, বিশিষ্ট সংগঠক আল্লামা এম এ মান্নান, এম এ মতিন, ড. আ র ম আলী হায়দার মুর্শিদী, প্রফেসর আবদুর রশিদ, অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দীন বখতেয়ার, ড. আবদুল্লাহ আল মারূফ, ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, আবু সুফিয়ান আলকাদেরি, এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশীসহ দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আলেম ওলামা।
আলা হযরতের অবদান তুলে ধরে বক্তারা বলেন- জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের যাবতীয় শাখায় পারদর্শী এ মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন জ্ঞানের এনসাইক্লোপিডিয়া। মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতির দিক-দর্শন দিয়েছিলেন তিনি। শাফায়াতের কাণ্ডরী রাসুলে পাক হযরত মুহম্মদ (দ.) প্রতি অপরিসীম ভক্তি ও অনুরাগের নিদর্শনস্বরূপ আলা হযরত আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দি ভাষার শব্দ মিশ্রণে না’ত-ই রাসুল (দ.) রচনা করে অভাবনীয় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (র.) ১২৭২ হিজরিতে ১০ শওয়াল, ১৪ জুন ১৮৫৬ ঈসায়ী সালে ভারতের বেরেলীর এক ঐতিহ্যবাহী পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৪৯ হিজরিতে ৬৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। কনফারেন্সে একটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৫:১২ ১৬৬৩ বার পঠিত