ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুই দলের দলাদলির তথ্য প্রকাশ
Home Page » প্রথমপাতা » ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুই দলের দলাদলির তথ্য প্রকাশ
বঙ্গ-নিউজঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের সভায় দুটি পক্ষের হাতাহাতি ও কিল-ঘুষির ঘটনায় দীর্ঘদিনের দলাদলির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে। এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। প্রকাশ্যে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মতো ঘটনা ঘটলেও এ ধরনের হাতাহাতি এই প্রথম।ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সমর্থক ও তাঁর বিরোধী পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে এই হাতাহাতি হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। এতে সিনেট সদস্য ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন আহত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক ঘটনাটিকে ‘নোংরামির চূড়ান্ত রূপ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, নাম প্রকাশ করে কিছু বলার তিনি ‘রুচি’ পাচ্ছেন না।
ঘটনার সময় হট্টগোল শুনে ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা ভিড় করেন। তাঁদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকেরা যেভাবে একজন আরেকজনকে মারতে গেছেন, চেয়ার নিয়ে তেড়ে গেছেন, সেটা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে হয়ে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটেনি। এটি শিক্ষকদের দলাদলি ও স্বার্থের সংঘাত। এটি সব শিক্ষকের নয়, কিছু শিক্ষকের ঘটনা। কিন্তু ভেতর থেকে অধিকাংশ শিক্ষক এ সম্পর্কে উদাসীন। তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় কাজ করছেন না। যাঁরা দল করেন, তাঁরাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। শিক্ষক সমিতি অনেক দিন ধরেই একটি মৃতপ্রায় সংগঠন।
সভায় উপস্থিত অন্তত ১৫ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, মে মাসে আবদুল আজিজকে আহ্বায়ক করে নীল দলের কমিটি করার পর থেকে দলের সভা হয়নি। দলের যুগ্ম আহ্বায়কও নির্বাচন করা হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এই সভা ডাকা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পূর্বনির্ধারিত সভা শুরু হয়। এক এক করে শিক্ষকেরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। প্রায় প্রত্যেকেই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। কেউ তাঁর সমালোচনা করেছেন। কেউ তাঁর পক্ষে বলেছেন। তবে, দুই পক্ষের শিক্ষকেরাই বলছেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা।
অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, যাঁরা আরেফিন সিদ্দিকের সমালোচনা করছেন, তাঁরা প্রত্যেকে তাঁর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। তাই এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক নয়। তাঁর পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীও আরেফিন সিদ্দিকের সমালোচনা করেন। সাবেক হয়ে যাওয়ার পরও আরেফিন সিদ্দিক কেন উপাচার্যের বাসভবন ছাড়ছেন না, সে প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি আরেফিন সিদ্দিকের সময় নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করার দাবি জানান।
প্রক্টরের বক্তব্যের মাঝে মাঝেই অধ্যাপক জামাল উদ্দীন মন্তব্য করছিলেন। একটি পদে থেকে এ ধরনের একপক্ষীয় বক্তব্য দিতে নিষেধ করছিলেন। একপর্যায়ে প্রক্টর তাঁকে ‘পাগল’ বলে মন্তব্য করে থামতে বলেন। তখন জামাল উদ্দীন তাঁর চেয়ার থেকে উঠে প্রক্টরের দিকে তেড়ে আসেন। প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘জামাল উদ্দীন এসে আমার বুকে ধাক্কা দেন। আমি সরে যাই। তাঁর আক্রমণাত্মক ভঙ্গি দেখে আমার পাশে থাকা অন্য শিক্ষকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি পড়ে যান।’
নীল দলের নেতৃস্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, জামাল উদ্দীন সাউন্ডবক্সের ওপর গিয়ে পড়েন। সাউন্ডবক্সের কোনায় লেগে তাঁর নাক ফেটে যায়। তবে তাঁকে ঘিরে ধরা শিক্ষকেরাও অনেক আক্রমণাত্মক ছিলেন। তাঁদের কয়েকজন জামাল উদ্দীনকে কিল-ঘুষিও মেরেছেন। কিল-ঘুষিতেও জামাল উদ্দীন আহত হয়ে থাকতে পারেন।
তবে জামাল উদ্দীনের অভিযোগ, ‘বক্তব্যে প্রক্টর আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছিলেন। এ সময় আমি তাঁকে বলি, আপনি একজন প্রক্টর হিসেবে আমাকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারেন না। তখন তিনি আমাকে আঘাত করেন। তাঁর সঙ্গে ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শাহ মো. মাসুম ও ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান সীতেশ চন্দ্র বাছার যোগ দেন। তাঁরা আমাকে কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। একজন চেয়ার নিয়ে তেড়ে আসেন। ঘুষির ফলে আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়।’
জামাল উদ্দীন বলেন, ‘এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে এর আগেও আমার নাম এসেছে, এই সভায়ও আমার নাম এসেছে। আমি যাতে এই পদ না পাই, সে কারণেই পরিকল্পিতভাবে এটি ঘটানো হয়েছে।’
আরেফিন সিদ্দিকের বিরোধী হিসেবে পরিচিত একজন অধ্যাপকও ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হিসেবে মন্তব্য করেন। তবে তাঁর অভিযোগের তির আরেফিন সিদ্দিকের পক্ষের শিক্ষকদের দিকে। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই আরেফিন সিদ্দিকের পক্ষের নেতৃস্থানীয় শিক্ষকেরা চুপচাপ ছিলেন। তেমন কোনো বক্তব্য কেউ দেননি। তবে অন্যদের বক্তব্যের সময় বিভিন্ন মন্তব্য করে তাঁদের উসকানি দিচ্ছিলেন। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর আহত জামাল উদ্দীনকে হাসপাতালে না নিয়ে উপাচার্যের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
সাংবাদিকেরা যখন উপাচার্যের বাসায় পৌঁছান, তখন সেখানে জামাল উদ্দীনকে চিকিৎসা নিতে দেখেছেন। হাতে করে চিকিৎসাপত্র নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে তিনি নিজের বাসায় যান।
টিএসসিতে হাতাহাতির পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা সমাপ্ত করে বের হয়ে যান নীল দলের বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বক্তব্য দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলে সভা শেষ করেন। আবদুল আজিজ নিজেও আরেফিন সিদ্দিকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলন করা হবে।’
আরেফিন সিদ্দিকের বিরোধী পক্ষের একজন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সবার বক্তৃতা ও নিজেদের আচরণ আরও শিক্ষকসুলভ হওয়া উচিত।
নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো দলাদলির সূত্রপাত গত মে মাসে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের আগে নীল দলের প্রতিনিধি মনোনয়ন সভায় এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের দিকে তেড়ে যান। পরে নীল দল থেকে দুটি প্যানেল জমা হয়। যার একটি বাতিল করে দিলে দলাদলি প্রকাশ্য রূপ নেয়। গত ২৯ জুলাই সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন কিছু শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানাতে গেলে আরেফিন সিদ্দিকের অনুসারী শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়েন। কয়েকজন শিক্ষক ওই দিন শিক্ষার্থীদের কিল-ঘুষি মারেন এবং ধাক্কা দিয়ে ও কলার চেপে বের করে দেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আগের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান গতকাল নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘সোনার ছেলেদের ধারাবাহিকতায় সোনার শিক্ষকেরা…। জয় হোক শক্তি আর মাস্তানতন্ত্রের।’ এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘যেসব শিক্ষক মারামারি করেছেন, আশা করি তাঁরা আগামী দিন বুয়েটের সঙ্গে মারামারিতে নেতৃত্ব দেবেন।’
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৫:১৭ ৬৩৫ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)প্রথমপাতা’র আরও খবর
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]