বঙ্গ-নিউজঃ এমন কোনো পণ্য নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। সুই-সুতা থেকে শুরু করে লিপস্টিক, মোবাইল ফোন কি গানের সিডি— সব পাবেন এখানে। প্রতি সেকেন্ডে ৩০৬টি পণ্য বিক্রির রেকর্ড রয়েছে তাদের। প্রতিদিন ৩১ কোটি মানুষ কেনাবেচার জন্য বেছে নেন অ্যামাজন ডটকমকে। এই বিশাল বাজার ইন্টারনেটে বসিয়েছেন জেফ বেজোস। স্ত্রীর বই পড়ার বাতিক দেখে ঠিক করলেন অনলাইনে বই বিক্রি করবেন। এই আইডিয়া থেকে অ্যামাজনের অফিস খোলেন বাড়ির পরিত্যক্ত গ্যারেজে। দিনে দিনে সেই অ্যামাজনের কল্যাণে ধনকুবের বনে গেছেন জেফ বেজোস। এতদিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বলতে বিল গেটসকেই চিনত সবাই। সেই বিল গেটসকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এখন ‘অনলাইনের দোকানদার’ জেফ বেজোস
অ্যামাজনের বাদশাহ
মা জ্যাকলিন বিয়ে বিচ্ছেদের পর বিয়ে করেন মাইক বেজোসকে। আইনগত পিতা হওয়ায় মাইক বেজোসের সন্তান জেফের নাম বদলে দাঁড়ায় জেফ বেজোস। জেফের বয়স তখন চার বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি চলে আসে হিউস্টন, টেক্সাসে। এখানে মাইক বেজোস ইক্সোনের প্রকৌশলী হিসেবে কাজ নেন। জেফ বেজোস ভর্তি হন রিভার ওকস অ্যালিমেন্টারি স্কুলে। দক্ষিণ টেক্সাসে দাদার জমিদারি ছিল। সেখানে ফার্মে কাজ করতেন জেফ। গবাদিপশু চরাতে নিয়ে যেতেন খেত-খামারে। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে তার আগ্রহ ছিল। পরবর্তীতে তিনি ফ্লোরিডায় চলে আসেন। ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি থেকে স্টুডেন্ট সায়েন্স ট্রেইনিংয়ে সিলভার নাইট পুরস্কারও পান। ভালো রেজাল্ট করার কারণে জাতীয় মেধা তালিকাতেও তার জায়গা হয়। এরপর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে তিনি উচ্চ শিক্ষা শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করে কাজ নেন ওয়াল স্ট্রিটে। ফিটেল কোম্পানিতে প্রযুক্তিবিষয়ক কাজ বেছে নেন তিনি। সেখান থেকে যান ব্যাংকার্স ট্রাস্টে। এরপর কাজ নেন ইন্টারনেটে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে। হেজ ফান্ড কোম্পানি ভালো আয় করলেও নিজেই কিছু করতে চাইলেন জেফ। মালিকের অনুরোধ থাকলেও তিনি অনেকটা জোর করেই চাকরি ছেড়ে সিয়াটলে চলে আসেন। সিয়াটলের প্রায় ধংসস্তূপ হয়ে যাওয়া গাড়ির গ্যারেজে খোলেন অ্যামাজন। অ্যামাজন ডটকম। ওয়েবসাইটে বই বিক্রি শুরু করেন। প্রথম মাসেই অভাবনীয় সাড়া পান তিনি। পরবর্তীতে আরও নানা ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেন। অনলাইনে অর্ডার করেন ক্রেতারা। তিনি ঠিকানা মতো পণ্য পাঠান। বিক্রেতারা অ্যামাজনে তাদের পণ্য বিক্রির আগ্রহ দেখাতে শুরু করলে খুচরা পণ্য বেচাকেনার বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন জেফ। কয়েক বছরের মাথায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য বেচাকেনা হতে থাকে অ্যামাজনের মাধ্যমে। ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন আর কেনাবেচার অর্থের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ তুলে রেখে জেফ ধনকুবের বনে যান। এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই অ্যামাজন থেকে পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। অ্যামাজনে কাজ করেন ৩ লাখ ৪১ হাজারেরও বেশি কর্মী। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ৪৮ কোটির বেশি পণ্য বিক্রি করে অ্যামাজন। ৪ লাখ ৮৫ হাজারেরও বেশি ধরনের পণ্য বিক্রি হয় এখানে। এক দিনে ২ কোটি ৬৫ লাখ পণ্য বিক্রির রেকর্ডও রয়েছে অ্যামাজনের। রেকর্ডবুক বলছে, প্রতি সেকেন্ডে ৩০৬টি পণ্য বিক্রি হয় অ্যামাজনের মাধ্যমে। প্রতিদিন ৩১ কোটি মানুষ এখানে কেনাকাটা করেন। ২০১৬ সালে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয় অ্যামাজনের মাধ্যমে। ইন্টারনেটে দোকান বসিয়ে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন জেফ বেজোস তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সে সাম্রাজ্যের বাদশাহ জেফ বেজোস বিল গেটসকে টপকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী।
কার কত সম্পদ
বিল গেটসকে টপকালেন যেভাবে
২৭ অক্টোবর ২০১৭। শুক্রবার সকাল। তখনো বিশ্বসেরা ধনী মাইক্রোসফটের বিল গেটস। তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস।
শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলো। শুরুতেই দাম বাড়ল অ্যামাজনের শেয়ারের। কয়েক ঘণ্টা এগোতেই দৃশ্যপট বলে দিল, নতুন কিছু হতে যাচ্ছে আজ। হলোও তাই। অ্যামাজনের শেয়ার ৭ শতাংশ থেকে ৮-এ বেড়ে গেল। ৮ শতাংশ বাড়তেই জেফ বেজোসের পকেটে ঢুকে গেল ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন বিল গেটসের মোট সম্পদ ৯০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জেফ বেজোসের চেয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মিলিয়ন ডলার বেশি। কিন্তু ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্যের চাকাও দৌড়াতে থাকল বেজোসের। শেয়ারের দাম বাড়ার গতি এক মিনিটের জন্যও থামেনি। ধীরস্থিরভাবে একপর্যায়ে শেয়ারের দাম ১৩ শতাংশ বেড়ে গেল। দিনশেষে সবাইকে চমকে দিয়ে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেল বিল গেটসকে। ‘বিশ্বসেরা ধনী’ তকমাটি তাই জেফ বেজোসের নামের সঙ্গেই উচ্চারিত হলো। নয়শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতেই তিনি বিল গেটসকে টপকে বনে গেলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। দিন শেষে বেজোসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৯৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিল গেটসের চেয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি। একদিনেই বেজোসের আয় ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ওইদিন পুঁজিবাজারে বিপুল অংকের মুনাফা অর্জন করে অ্যামাজন। হিসাব বলছে, ওইদিন অ্যামাজনের অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ৪২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর জায়গাটা একেবারেই নতুন নয় জেফ বেজোসের জন্য। তিন মাস আগে প্রথমে কয়েক ঘণ্টার জন্য। পরে প্রায় একদিনের জন্য জেফ বেজোস প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির আসনে বসেছিলেন।
বাবা জানেনই না ছেলে এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী!
জেফ বেজোসের মা জ্যাকলিন গিস। তখন জ্যাকলিনের বয়স মাত্র ১৭ বছর। হাইস্কুল পড়েন তিনি। কিশোরী জ্যাকলিন প্রণয়ে জড়ান আরেক হাইস্কুল পড়ুয়া কিশোর টেড জার্গেনসনের সঙ্গে। টেডের বয়স ১৮ বছর। প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া এই কিশোর-কিশোরী হুট করেই বিয়ে করে বসেন। তাদের সংসারেই জন্ম নেন জেফ। কিন্তু সন্তান জন্ম নেওয়ার পরও সংসারি হতে পারেননি টেড। স্ত্রীকে ঘরে রেখে ফিরতেন অনেক রাত করে। তার মাতলামি ছিল লাগামছাড়া। শিশু সন্তানের জন্যও তাকে আবেগি হতে দেখেননি মা জ্যাকলিন। এই টানাপড়েনে সংসার ভাঙেন তারা। বিয়ের ১৭ মাসের মাথায় বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আলাদা হয়ে যান দুজন। জেফ থেকে যান মায়ের সঙ্গেই। জ্যাকলিন তার বাবা-মায়ের কাছেই সন্তানসমেত থাকতে থাকেন। তিন বছর পর তিনি মাইক বেজোসকে বিয়ে করেন। এখন জেফের নতুন বাবা মিগুয়েল বেজোস। কিউবা থেকে আসা শরণার্থীর জীবন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেন তিনি। মিগুয়েল জেফের পিতৃত্ব দায়ভার আইনগতভাবে নিয়ে নিলে জেফের আসল বাবা টেড জার্গেনসন সন্তানের ওপর সব ধরনের আইনি অধিকার হারান। ‘বায়োলজিক্যাল ফাদার’ হয়েই থাকতে হয় তাকে। এই ‘বায়োলজিক্যাল ফাদার’ টেড জার্গেনসন তার স্ত্রী জ্যাকলিন ও সন্তান জেফের আর কোনো খোঁজ রাখেননি। ২০১৩ সালে জেফকে তার বায়োলজিক্যাল ফাদার বা আসল পিতার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তিন বছর বয়সে একবার বাবাকে দেখেছি— এরপর আর দেখিনি। ’ টেড জার্গেনসনের ক্ষেত্রেও তাই। ৪৭ বছর পর তাকে সেই সন্তানের কথা জানাতে যখন সাংবাদিক পৌঁছালেন তখনো টেড জার্গেনসন জানেনই না অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসই তার সেই সন্তান! যে কিনা এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী!
বাংলাদেশ সময়: ৮:০০:৫৩ ৬৭১ বার পঠিত #24/7 latest headlines 24/7 Tech News Bangla Newspa #Bangla News 24 and rest of all continuously updated Ban #Barisal #BD News 24 #Chittagong #Comilla." Chittagong Dhaka Sylhet Bari #Khulna #Rajshahi #Rangpur #Sylhet