বঙ্গ-নিউজঃ উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য চট্রগ্রামে পৌঁছেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত যাপন করেন তিনি। আজ রবিবার তিনি কক্সবাজার যাবেন। তিনটি রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থী পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। এদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে ফেনীর ফতেপুর, মহিপাল, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ এবং চট্রগ্রামের মীরেরসরাই এলাকায় হামলার শিকার হয়েছে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এসময় সাতটি টিভি চ্যানেলসহ ৩০-৩৫ টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে পাঁচ সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী। দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্থানে অতর্কিতে লাঠিসোটা ও ইট পাটকেল ছুড়ে এই হামলা চালায়। এতে বহরের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে কারা এই হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে কোন নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও বিএনপি এর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। তবে ক্ষমতাসীন দলটি এ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হামলাকারীদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তাহলে কে বা কারা এই হামলা চালাল-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হামলা প্রসঙ্গে মহাপুলিশ পরির্দশক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, ঘটনার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী সার্কিট হাউজের ভেতর অবস্থান করছিলেন। সংবাদকর্মীদের বহনকারী গাড়িতে কিছু সংখ্যক লোক অতর্কিতে হামলা চালায়। কারা হামলা চালিয়েছে তা তাত্ক্ষণিকভাবে সনাক্ত করা যায়নি। তবে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তাদেরকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে সে ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ যা যা করণীয় সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। এই হামলাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিযে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। হামলায় যেসব সাংবাদিক আহত হয়েছে তাদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সর্বস্তরের মানুষের ঢল দেখে সরকার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে নৈরাজ্যের পথ নিয়েছে, হামলা চালিয়েছে। বেগম জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এই তথ্য জানিয়েছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত নয়। ফেনী থানার ওসি রাশেদ খান বলেন, হামলা চৌদ্দগ্রাম না ফেনীতে হয়েছে আমার জানা নেই। ফেনীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে এমন কোন অভিযোগ আমি পাইনি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কারা হামলা চালিয়েছে, তদন্ত করছি।
দফায় দফায় হামলা: হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী এ হামলায় জড়িত। এসময় চ্যানেল আই, ডিবিসি, একাত্তর টিভি, সময় টিভি, বৈখাশী টিভি, জিটিভি ও এনটিভির গাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলার ছবি তুলতে গেলে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। ইলিয়টগঞ্জের হামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদসহ কয়েকজন নেতার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ফেনীর ফতেপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করার পরপরই বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়। এ সময় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়িবহরে চড়াও হয়। এখানে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলাকারীদের কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে।
বিকেলে লালপোলের ‘হোটেল সেভেন স্টার’ রেস্তোরার সামনে হঠাত্ করেই ৫ টি মোটর সাইকেল যোগে বেশ কিছু তরুণ আসেন। তারা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাড়ির সামনের অংশ ভেঙে যায়। পরে বিএনপির স্টিকারযুক্ত অনেক গাড়ি এখানে আক্রান্ত হয়।
এদিকে খালেদা জিয়া গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সড়কপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। পথে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে কাচপুর ব্রিজ পযন্ত যানজটে দেড় ঘন্টা আটকে থাকেন বেগম জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ফেনি সার্কিট হাউজে পৌছে মধ্যাহ্ন ভোজ সারেন। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছান।
ফেনি সার্কিট হাউজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ফেনী ও চৌদ্দগ্রামে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
পথে পথে শো-ডাউন :ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাওয়ার সময় পথে পথে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের লোকজনসহ নেতাকর্মীরা শোডাউন করেন। ব্যানার ফেস্টুন প্লাকার্ডে ছেয়ে যায় মহাসড়কের দুই ধার। কোথাও কোথাও সড়কের পাশে মঞ্চ পেতে বক্তৃতা দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। যেনো নির্বাচনী প্রচারণার মহড়া। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ নারী-পুরুষও খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন স্থানে রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রওনা হয়ে নয়াপল্টনে পৌঁছালে সেখানে নেতাকর্মীদের বড় জমায়েত ঘটে। নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয় আশপাশ। বেগম জিয়ার বহর ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, টিকাটুলি, যাত্রাবাড়ি, কাজলা, শনিআখরা, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড ,কাঁচপুর ব্রীজ, গজারিয়া, দাউদকান্দী, গৌরীপুর, কুমিল্লা হয়ে ফেনী সার্কিট হাউজে পৌঁছায়। পরে সন্ধ্যার পর গাড়িবহর চট্রগ্রাম পৌঁছায়।
পুলিশের লাঠিচার্জ: বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানাতে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর অবস্থান করা নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে বেগম জিয়ার গাড়ি পৌঁছে সোয়া ৩ টার দিকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই অভিযোগ করেন,খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গজারিয়া পার হওয়ার আগে বেলা পৌনে ১২টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি অবরোধ করে আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় তারা যাত্রীবাহী একটি বাস ভাঙচুর করে বাধা প্রদান করে।
তবে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, অবরোধের কোন ঘটনা ঘটেনি। কমিউনিটি পুলিশের আয়োজনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল, তারা দলীয় শ্লোগান দেয়।
এদিকে আজ ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়া কক্সবাজার পৌঁছবেন এবং ৩০ অক্টোবর জেলার উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো পরিদর্শন ও দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে ৩১ তারিখে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১:২০:৩৭ ৬৬১ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News