বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায় শনাক্ত করার সহজ উপায় বের করেছেন। মানুষের শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে তা শনাক্ত করা যাবে। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবিত যন্ত্রটির দামও কম, বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ মাত্র দেড় শ টাকা। ঘরে বসেই যে কেউ এ যন্ত্র ব্যবহার করে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারবে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। গবেষণাটির ফলাফল চলতি মাসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত দ্য রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি জার্নাল ন্যানোস্কেল, দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি জার্নাল অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রি এবং রয়েল সোসাইটি অব কেমিক্যাল কমিউনিকেশনসে ছাপা হয়েছে।
সাধারণত কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। ক্যানসারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতেও অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। ব্যয় হয় প্রচুর অর্থও। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কতটুকু কিংবা কোনো নারী সন্তান ধারণ করেছেন কি না, এগুলো জানা এখন হাতের নাগালের মধ্যে। ওষুধের দোকান থেকে স্বল্প মূল্যে কেনা কিট দিয়েই এসব তথ্য জানা যায়। ক্যানসার শনাক্তকরণের যন্ত্রটিও তেমনি সহজে ব্যবহারের উপযোগী ও স্বল্প মূল্যের।
ক্যানসার শনাক্তকরণে গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল, ক্যানসারের মতো রোগকে প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প খরচে শনাক্ত করা। নিম্ন আয়ের দেশের মানুষদের যেন লাখ লাখ টাকা খরচ করে ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে একদম পথে বসে যেতে না হয়, সেই বিষয়টিও গবেষকদের বিবেচনায় ছিল। এ ছাড়া যন্ত্রটি ক্যানসার শনাক্ত করার পাশাপাশি চিকিৎসার বিভিন্ন পর্যায়ে শরীরে ক্যানসারের বৃদ্ধি অথবা হ্রাস পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ফলে রোগীর চিকিৎসা সঠিক পথে এগোচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে চিকিৎসকেরা ধারণা পাবেন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের আর্থিক অনুদানে গবেষণাটি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞানী মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ঘরে বসেই যে কেউ এ যন্ত্রের মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারবেন। প্রথমে প্লাস্টিকের অ্যাপেন ড্রপের মধ্যে দু-এক ফোঁটা রক্ত, লালা কিংবা প্রসাবের নমুনা নেওয়া হয়। এর সঙ্গে রোগ শনাক্তকরণের জন্য ক্যানসার জৈব নির্দেশক (বায়োমার্কার) যুক্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধাতব কণা যোগ করা হয়। এরপর এসব নমুনার পরিবর্তন খালি চোখে দেখে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার আছে কি নেই, সেটি জানা যাবে। শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা অনুযায়ী রক্তসহ অন্যান্য নমুনার রঙের বদল হবে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গবেষক দল প্রযুক্তিটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জরায়ু, অন্ননালি, অন্ত্রের ক্যানসার রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছে। এতে তারা রোগনির্ণয়ে শতভাগ সাফল্য পেয়েছে।
গবেষক দলে আরও ছিলেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মো. শাহরিয়ার হোসেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ক্যানসার শনাক্তকরণের এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশি পিএইচডি ছাত্র মোস্তফা কামাল মাসুদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে থেকে এই গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন থেকে স্নাতকোত্তর করা মো. নাজমুল ইসলাম। এ গবেষণার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ন্যাম-ত্রুং নগুয়েন এবং পিএইচডির ছাত্র শারদ যাদব, উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউসুকে ইয়ামাওচি, অস্ট্রেলিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেটিভ ম্যাটেরিয়ালসের অধ্যাপক শুনসুকে তানাকা, স্কুল অব মেকানিক্যাল ম্যাটেরিয়ালস, মেকাট্রনিকস অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক গুরসেল আলিচি।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে ক্যানসার শনাক্ত করার যন্ত্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ পড়বে দেড় শ টাকা, আর উন্নত দেশে খরচ দাঁড়াবে পাঁচ ডলার বা প্রায় ৪০০ টাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বিশ্বে বিভিন্ন রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জনে ১ জন মারা যায় ক্যানসারে। যার ৭০ শতাংশ মারা যায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। ২০১৫ সালে বিশ্বে ৮৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। যার ২২ শতাংশই ধূমপানজনিত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ও মৃত্যু—দুই-ই বাড়ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এপিডিওমোলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব ক্যানসার রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একদম শেষ পর্যায়ে আসে। তখন বেশির ভাগ রোগীকে বাঁচানো যায় না। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ যদি ওই রোগ সম্পর্কে জানতে পারে, তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসারের উপস্থিতি জানতে পারলে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিরাময় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৭:০১ ৮২৩ বার পঠিত #24/7 Tech News Bangla Newspaper | List of all Online #Bangla News 24 and rest of all continuously updated Ban #Barisal #BD News 24 #Chittagong #Comilla. CHITTAGONG DHAKA SYLHET BARISAL KHULNA RAJSHA #Khulna #Rajshahi #Rangpur #Sylhet